‘শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যকার সম্পর্ক উন্নয়ন করতে হবে’

‘শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যকার সম্পর্ক উন্নয়ন করতে হবে’

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনিযুক্ত উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. রেজাউল করিম, নবনিযুক্ত উপউপাচার্য প্রফেসর ড. হারুনর রশিদ খান ও নবনিযুক্ত ট্রেজারার প্রফেসর ড. মো. নূরুন্নবী আনুষ্ঠানিকভাবে যোগদান করেছেন।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনিযুক্ত উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. রেজাউল করিম, নবনিযুক্ত উপউপাচার্য প্রফেসর ড. হারুনর রশিদ খান ও নবনিযুক্ত ট্রেজারার প্রফেসর ড. মো. নূরুন্নবী আনুষ্ঠানিকভাবে যোগদান করেছেন।

রোববার (২০ অক্টোবর) বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ তাজউদ্দীন আহমদ প্রশাসনিক ভবনের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগদানপত্রে স্বাক্ষর করে তারা নিজ নিজ দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

অনুষ্ঠানে নবনিযুক্ত উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. রেজাউল করিম বলেন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে প্রথমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্য থেকে একসঙ্গে উপাচার্য, উপউপাচার্য ও ট্রেজারার নিয়োগ হয়েছে। এটি আমাদের জন্য আনন্দের দিন। আমাদের মনে রাখতে হবে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে নতুন এক বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মীর মুগ্ধসহ আবু সাঈদ ও অগণিত ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগে অর্জিত এই স্বাধীনতার কারণে আজ আমরা এখানে এসেছি। তাই তাদের স্মৃতির প্রতি আমি বিনম্র শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি।

তিনি বলেন, নতুন প্রজন্ম জুলাই-আগস্টের এই বিপ্লবকে নতুন স্বাধীনতা বলছে। তারা যে স্বপ্ন নিয়ে নতুন বাংলাদেশের যাত্রা শুরু করেছে, আমাদের সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হবে। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়েই পথ চলতে হবে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যকার সম্পর্ক উন্নয়ন করতে হবে। মনে রাখতে হবে, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী সকলকে নিয়েই আমরা একটা পরিবার।

ড. মো. রেজাউল করিম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য, উপউপাচার্য ও ট্রেজারারের নাম ভাঙ্গিয়ে কোনো ধরনের অনৈতিক সুবিধা গ্রহণ করা যাবে না। কোনো বিষয় নিয়ে অতিউৎসাহী হওয়া যাবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোথায় কি অবস্থা আমি জানি, সুতরাং আমরা বিতর্কিত হই—এ ধরনের কোনো কাজ করা যাবে না।

শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনাদের আরও বেশি শিক্ষার্থীবান্ধব হতে হবে। শিক্ষার্থীদের সবকিছু ভালোবাসা দিয়ে বোঝাতে হবে। আর শিক্ষার্থীদেরও উচিত হবে শিক্ষকদের যথাযথ সম্মান দেওয়া। যাতে পারস্পরিক সম্পর্ক ভালো থাকে।

কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, কোনো বিষয়ে অতি আবেগপ্রবণ হওয়া যাবে না। যার যা প্রাপ্য সেটা যোগ্যতার মাপকাঠিতে দেওয়া হবে। তিনি শিক্ষা-গবেষণায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনে সকলের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন।

নবনিযুক্ত উপউপাচার্য প্রফেসর ড. হারুনর রশিদ খান বলেন, ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগে আমরা যে নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি, এর চারিদিকে শান্তির পরিবেশ বিরাজ করছে। এজন্য শহীদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি।

তিনি বলেন, নবনিযুক্ত উপাচার্য ও আমার দীর্ঘদিন ধরে একসঙ্গে কাজ করার অনেক অভিজ্ঞতা রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় চলবে তার নিজস্ব আইন-নীতি মেনে। এখানে আমরা দলমতের ঊর্ধ্বে উঠে সকলকে নিয়ে কাজ করতে চাই। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক র‍্যাংকিংয়ে মর্যাদাপূর্ণ অবস্থান সৃষ্টি, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, গবেষণায় বিশেষ বরাদ্দের পরিমাণ বৃদ্ধিসহ নানা দিকে আমরা নজর দিতে চাই। তিনি উপাচার্যের নেতৃত্বে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়কে অভীষ্ট লক্ষ্যে এগিয়ে নেওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

নবনিযুক্ত ট্রেজারার প্রফেসর ড. মো. নূরুন্নবী বলেন, আমি এ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন গ্র্যাজুয়েট। এখানেই শুরু আর এখানেই শেষ দেখি আমি। আমার ওপর অর্পিত দায়িত্ব অনুরাগ বা বিরাগের ঊর্ধ্বে উঠে পালন করতে চাই। এক্ষেত্রে আমি নবনিযুক্ত উপাচার্য ও উপউপাচার্যসহ সকলের সহযোগিতা চাই। আমি একজন শিক্ষক—এ পরিচয়কে ধরে রাখতে চাই। পাশাপাশি আমাদের সহকর্মী ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক অটুট রাখতে চাই। যদি কোনো কাজে ঘাটতি পান, আপনারা তা ধরিয়ে দেবেন এই আশা করি। একই সঙ্গে যাতে মেয়াদ শেষে এমনভাবে সকলের ভালোবাসায় বিদায় নিতে পারি—এজন্য সকলের নিকট দোয়া কামনা করি।

এ সময় নবনিযুক্ত উপাচার্য, উপউপাচার্য ও ট্রেজারারকে স্বাগত ও শুভেচ্ছা জানিয়ে বক্তৃতা দেন বিজ্ঞান, প্রকৌশল ও প্রযুক্তিবিদ্যা স্কুল এবং শিক্ষা স্কুলের ডিন প্রফেসর ড. কামরুল হাসান তালুকদার, জীববিজ্ঞান স্কুলের ডিন প্রফেসর ড. আবুল কালাম আজাদ, সামাজিক বিজ্ঞান স্কুলের ডিন প্রফেসর ড. আব্দুল্লাহ আবুসাঈদ খান, কলা ও মানবিক স্কুলের ডিন প্রফেসর ড. মো. শাহজাহান কবীর, সমাজবিজ্ঞান ডিসিপ্লিন প্রধান প্রফেসর ড. সেলিনা আহমেদ, ফরেস্ট্রি এন্ড উড টেকনোলজি ডিসিপ্লিন প্রধান প্রফেসর ড. রুমানা রানা, ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ ডিসিপ্লিন প্রধান কাজী হুমায়ুন কবীর। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) প্রফেসর ড. এস এম মাহবুবুর রহমান।

অনুষ্ঠানে জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে শহীদ মীর মুগ্ধ, আবু সাঈদসহ সকল শহীদের আত্মার মাগফিরাত কামনা ও আহতদের আশু সুস্থতা কামনায় দোয়া করা হয়। দোয়া পরিচালনা করেন কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম মুফতি আব্দুল কুদ্দুস।

এর আগে, অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন প্রশাসন ভবন-সংলগ্ন জামে মসজিদের ইমাম কারি মুস্তাকিম বিল্লাহ। অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য ডিনবৃন্দ, ডিসিপ্লিন প্রধান, ছাত্রবিষয়ক পরিচালক, প্রভোস্টবৃন্দ, পরিচালক ও বিভাগীয় প্রধানসহ শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী উপস্থিত ছিলেন।

পরে নবনিযুক্ত উপাচার্য, উপউপাচার্য ও ট্রেজারার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন। এরপর হাদী চত্বরে জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে শহীদের আত্মার মাগফিরাত কামনা ও আহতদের আশু সুস্থতা কামনায় দোয়া করা হয়।

এর আগে সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছে নবনিযুক্ত উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. রেজাউল করিম নগর ও গ্রামীণ পরিকল্পনা ডিসিপ্লিনে যান। তিনি এই ডিসিপ্লিনেরই শিক্ষক। সেখানে তিনি শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেন। পরে তিনি বিভিন্ন ক্লাসরুমে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। এরপর ডিসিপ্লিনের শিক্ষকরা তাকে অভিনন্দন জানান। তিনি সেখানে কিছু সময় অতিবাহিত করেন।

মোহাম্মদ মিলন/এএমকে

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *