বাংলাদেশ থেকে নৌকায় করে ইন্দোনেশিয়ায় ১৪০ রোহিঙ্গা, ৩ জনের মৃত্যু

বাংলাদেশ থেকে নৌকায় করে ইন্দোনেশিয়ায় ১৪০ রোহিঙ্গা, ৩ জনের মৃত্যু

সমুদ্র পাড়ি দিয়ে প্রায় ১৪০ জন জাতিগত রোহিঙ্গা শরণার্থী দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ ইন্দোনেশিয়ায় পৌঁছেছেন। বিপুল সংখ্যক এসব রোহিঙ্গাকে বহনকারী কাঠের নৌকা কয়েকদিন আগে দেশটির আচেহ প্রদেশে পৌঁছায়।

সমুদ্র পাড়ি দিয়ে প্রায় ১৪০ জন জাতিগত রোহিঙ্গা শরণার্থী দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ ইন্দোনেশিয়ায় পৌঁছেছেন। বিপুল সংখ্যক এসব রোহিঙ্গাকে বহনকারী কাঠের নৌকা কয়েকদিন আগে দেশটির আচেহ প্রদেশে পৌঁছায়।

অবশ্য উপকূলে পৌঁছানোর পর তারা সেখানে আটকে আছে। সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দারা এসব রোহিঙ্গাকে ভূখণ্ডে নামতে দিচ্ছে না। বাংলাদেশের কক্সবাজার থেকে নৌকায় করে তারা সেখানে পৌঁছেছেন।

সমুদ্রে দুই সপ্তাহের এই ভ্রমণে নৌকার মধ্যেই ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। বুধবার (২৩ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এপি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রায় ১৪০ জন দুর্বল ও ক্ষুধার্ত রোহিঙ্গা মুসলিম ইন্দোনেশিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় আচেহ প্রদেশের উপকূল থেকে প্রায় ১ মাইল দূরে নোঙর করা একটি কাঠের নৌকায় আটকে আছেন বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। ভুক্তভোগী এই রোহিঙ্গাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু এবং স্থানীয় বাসিন্দারা তাদেরকে ভূখণ্ডে নামতে দিচ্ছে না।

এপি বলছে, গত শুক্রবার থেকে উপকূলে ভেসে আছে নীল রঙের নৌকাটি। স্থানীয় পুলিশ জানিয়েছে, বাংলাদেশের কক্সবাজার থেকে দক্ষিণ আচেহ জেলার লাবুহান হাজির পানিসীমায় আসতে তাদের প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে ভ্রমণ করতে হয়েছে এবং এই সময়ে তিনজন রোহিঙ্গার মৃত্যু হয়েছে।

স্বাস্থ্যের অবনতি হওয়ায় গত রোববার থেকে ১১ জন রোহিঙ্গাকে সরকারি হাসপাতালে স্থানান্তর করেছে কর্তৃপক্ষ।

দক্ষিণ আচেহ এলাকার মৎস্যজীবী সম্প্রদায়ের প্রধান মুহাম্মাদ জাবাল বলছেন, “আমাদের সম্প্রদায় মৎস্যজীবী সম্প্রদায়, অন্য জায়গায় যা ঘটেছে তার কারণে তাদের (রোহিঙ্গাদের) নামতে দিতে চাচ্ছে না তারা। তারা স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে।”

সমুদ্রবন্দরে ঝোলানো একটি বড় ব্যানারে লেখা রয়েছে: “দক্ষিণ আচেহ রিজেন্সির জনগণ দক্ষিণ আচেহ রিজেন্সি এলাকায় রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আগমন প্রত্যাখ্যান করেছে।”

আচেহ পুলিশের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই দলটি গত ৯ অক্টোবর কক্সবাজার থেকে রওনা দেয় এবং মালয়েশিয়ায় পৌঁছানোর পরিকল্পনা করেছিল। তবে নৌকার কিছু যাত্রী অন্য দেশে তাদের নিয়ে যাওয়ার জন্য অর্থ প্রদান করেছিল বলে জানা গেছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা তাদের খাবার দিয়েছে জানিয়ে জাবাল বলেন এবং জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনারও তাদের খাবার দিয়েছে।

পুলিশ জানায়, নৌকাটি যখন বাংলাদেশ ছেড়ে আসে তখন এটিতে ২১৬ জন আরোহী ছিলেন এবং তাদের মধ্যে ৫০ জন ইন্দোনেশিয়ার রিয়াউ প্রদেশে নেমে গেছেন বলে জানা গেছে। এছাড়া আচেহ পুলিশ লোক পাচারের অভিযোগে তিন সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করেছে।

প্রসঙ্গত, গত বছরের ডিসেম্বরে এক প্রতিবেদনে রয়টার্স জানিয়েছিল, ইন্দোনেশিয়া ১৯৫১ সালের ইউনাইটেড নেশনস কনভেনশন অন রিফিউজিতে স্বাক্ষরকারী দেশ নয়। কিন্তু দেশটির উপকূলে শরণার্থীরা এসে পৌঁছালে তাদের আশ্রয় দেওয়ার ইতিহাস দেশটির রয়েছে।

কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে বিপুল সংখ্যায় শরণার্থীদের আগমন সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে এবং আচেহ প্রদেশের স্থানীয় বাসিন্দারা কিছু শরণার্থীকে ফেরতও পাঠিয়েছে। মূলত আচেহ হচ্ছে ইন্দোনেশিয়ার সবচেয়ে পশ্চিমাঞ্চলীয় অঞ্চল যেখানে শরণার্থীদের বহনকারী বেশিরভাগ নৌকা অবতরণ করে থাকে।

বস্তুত, মিয়ানমারের সংখ্যালঘু জাতিসত্ত্বা রোহিঙ্গাদের বিশ্বের সবচেয়ে নিপীড়িত জনগোষ্ঠীগুলোর মধ্যে একটি বলে বিবেচনা করা হয়। ২০১৭ সালের পর এই ধারণা আরও বেশি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

২০১৭ সালে মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যে সেনাবাহিনীর হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, অগ্নিসংযোগের সামনে টিকতে না পেরে লাখ লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশসহ আশপাশের বিভিন্ন দেশে পালাতে শুরু করে।

বাংলাদেশ সরকারের হিসাব অনুযায়ী, প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন।

প্রতি বছর নভেম্বর থেকে এপ্রিলের মধ্যে যখন সমুদ্র শান্ত হয়, তখন মিয়ানমারের নির্যাতিত সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সদস্যরা কাঠের নৌকায় করে প্রতিবেশী থাইল্যান্ড এবং মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় পাড়ি জমিয়ে থাকে।

টিএম

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *