আর কতবার এভাবেই আউট হবেন মুশফিকুর রহিম, সমাধান কোথায়?

আর কতবার এভাবেই আউট হবেন মুশফিকুর রহিম, সমাধান কোথায়?

আরও একবার কাগিসো রাবাদা। আরও একটা ভেতরে ঢোকা বল। ক্রিকেটের কেতাবি ভাষায় যাকে বলে ‘ইনসুইং ডেলিভারি।’ মুশফিকুর রহিমের ব্যাট-প্যাডের বিশাল ফাঁকা জায়গায় সেই বলের ঢুকে যেতে সমস্যা হয় না। মিরপুরে বাংলাদেশ-দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজের প্রথম টেস্টের দুই ইনিংসেই মুশফিক ফিরলেন একইভাবে। অবশ্য শুধু এই টেস্টেই না, ক্যারিয়ারের শুরুর দিনগুলো থেকে মুশফিক ভুগছেন এভাবেই। 

আরও একবার কাগিসো রাবাদা। আরও একটা ভেতরে ঢোকা বল। ক্রিকেটের কেতাবি ভাষায় যাকে বলে ‘ইনসুইং ডেলিভারি।’ মুশফিকুর রহিমের ব্যাট-প্যাডের বিশাল ফাঁকা জায়গায় সেই বলের ঢুকে যেতে সমস্যা হয় না। মিরপুরে বাংলাদেশ-দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজের প্রথম টেস্টের দুই ইনিংসেই মুশফিক ফিরলেন একইভাবে। অবশ্য শুধু এই টেস্টেই না, ক্যারিয়ারের শুরুর দিনগুলো থেকে মুশফিক ভুগছেন এভাবেই। 

২০২৩ বিশ্বকাপের ম্যাচে ম্যাট হেনরির বলে মুশফিকুর রহিমের সেই দৃষ্টিকটু বোল্ডের কথা স্মরণ করতে পারেন চাইলে আগ্রহী পাঠকরা। মুশফিককে ভারসাম্য হারিয়ে মাটিতে নামতে বাধ্য করেছিলেন কিউই এই বোলার। সেই ম্যাচের কথা স্মৃতি থেকে মুছে গেলেও ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির কথা হয়ত ভুলতে পারবেন না বাংলাদেশ ক্রিকেটের সমর্থকরা। 

নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশ সেই ম্যাচ বাংলাদেশ জিতেছিল সাকিব আল হাসান এবং মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের অনন্য দুই সেঞ্চুরির সুবাদে। সেই ম্যাচেও মুশফিকের স্ট্যাম্প অ্যাডাম মিলনে ভেঙেছিলেন এমনই এক ইনসুইং বলে। ক্যারিয়ারের একেবারে প্রথম টেস্টেও মুশফিকুর রহিম ইংলিশ বোলার ম্যাথিউ হ্যাগার্ডের ভেতরে ঢোকা বলেই স্ট্যাম্প খুইয়েছিলেন। ২০০৫ সালের লর্ডস টেস্টের হাইলাইটস দেখতে চাইলেই সেই পুরাতন মুশফিককে পেয়ে যাবেন আগ্রহী ক্রিকেট ভক্তরা। 

সামনের পায়ের অবস্থান থেকে শুরু করে ব্যাটের ফেইস উন্মুক্ত করা, গেল ১৬ বছরে মুশফিক ইনসুইং বলে খেলতে চেয়েছেন একই ঢঙে। সময়ের সঙ্গে নিজেকে হয়ত পরিবর্তন করার চিন্তাটাও করেননি কখনই। সংবাদ সম্মেলনে সমালোচকদের আয়না দেখতে বলা মুশফিক কি আয়নাতে নিজের ইনসুইং বলের দূর্বলতা দেখতে পান? 

২০২৩ বিশ্বকাপের ম্যাচ বিশ্লেষণে দেখা যায় নেদারল্যান্ডস, পাকিস্তান, নিউজিল্যান্ড এবং শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচে মুশফিক আউট হয়েছেন ভেতরের দিকে ঢোকা বলে। লক্ষ্যণীয় ব্যাপার, সেসব ম্যাচের মতো মিরপুর টেস্টেও মুশফিক ইনসুইং ডেলিভারিগুলোতে খেলতে চেয়েছেন কাভার ড্রাইভ। যে কারণে ব্যাড ও প্যাডের মাঝে ছিল বেশ বড় এক ফাঁকা জায়গা। 

২০০৪ সালে সিডনিতে অসম্ভব মানসিক জোর দেখিয়ে শচীনের করা ২৪১ রানের ইনিংসটিকে অনেকেই মনে করেন সর্বকালের সেরা টেস্ট ইনিংস। পুরো সিরিজে কাভার ড্রাইভে ভুগতে থাকা শচীন সেদিন ২৪১ করেছিলেন অফসাইডে কোনো বল না খেলেই। সেদিন অজি বোলাররা একের পর এক বল ফোর্থ স্ট্যাম্পের বাইরে খেলেও তার মানসিক জোরে চিড় ধরাতে পারেননি।

মুশফিকের হয়ত পরিকল্পনায় কিংবা মানসিক জোরে কিছুটা পরিবর্তনের দরকার ছিল বিগত বছরগুলোতে। কিন্তু ইনসুইং সেসব ডেলিভারিতে মুশফিকুর রহিমের স্ট্রেট ড্রাইভ কিংবা মিড অফে বল খেলতে চাওয়ার চেষ্টা খুব একটা চোখে পড়েনি কখনোই। স্ট্রেট ড্রাইভের ক্ষেত্রে মুশফিকের ব্যাট-প্যাডের ফাঁকা জায়গাটাও কমে আসতে পারত। কমতো বোল্ড হওয়ার প্রবণতা। 

ক্রিকেট বিশ্বে সবচেয়ে নিখুঁত স্ট্রেইট ড্রাইভ শচীন টেন্ডুলকারের। দেখা যাক তারই একটি শট। যেখানে খুব স্পষ্টভাবে দেখা মিলবে ব্যাট ও প্যাডের মাঝে গ্যাপ ঠিক কতটা কম। মুশফিকুর রহিমের ক্রমাগত বোল্ড হওয়ার প্রবণতা মূলত ব্যাট-প্যাডের গ্যাপের কারণে। আর সেই গ্যাপ কমিয়ে আনার মূল অস্ত্রটা স্ট্রেইট ড্রাইভেই সম্ভব। 

১৬ বছরে অভিষেকের স্বাদ পাওয়া মুশফিকুর রহিম এখন ৩৭ বছরের অভিজ্ঞ এক খেলোয়াড়। নামের পাশে অনেক রেকর্ড। অনেক ম্যাচ জয়ের সাক্ষী। বলা চলে, অনেক ম্যাচ জয়ের নায়ক তিনি। বাংলাদেশের টেস্ট ইতিহাসে প্রথম ব্যাটার হিসেবে স্পর্শ করেছেন ৬ হাজার রানের মাইলফলক। কদিন আগেই তামিম ইকবালকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি রানের মালিক হয়েছেন। 

মুশফিকের অবদান কিংবা কৃতিত্ব বাংলাদেশের ক্রিকেটে খাটো করে দেখতে চাওয়াটা হয়ত অন্যায়। অনুশীলনে তিনিই যে সবচেয়ে বেশি নিবেদিত সেটাও জানেন সবাই। কিন্তু ক্রিকেটের ২২ গজে গুডলেন্থের এসব বলে মুশফিক আটকাচ্ছেন বারবারই। টেস্ট ক্যারিয়ারে সবমিলিয়ে ৩৮ বার বোল্ড হয়েছেন মুশফিকুর রহিম। শতাংশের হিসেবে প্রায় ২৪ শতাংশ ক্ষেত্রেই হয়েছেন বোল্ড। তার মাঝে ইনসুইং ডেলিভারিতে আউটের সংখ্যাই বেশি। অনেক ক্ষেত্রে স্লিপে ক্যাচটাও দিয়েছেন সেই ভেতরে ঢোকা বলের কারণে। 

ক্রিকেটের বড় মঞ্চে নিজের দূর্বলতা বুঝতে পারাটাই হয়ত অনেক ক্ষেত্রে গ্রেটনেসের মাপকাঠি। বাংলাদেশ ক্রিকেটের ‘গ্রেট’ বনে যাওয়া মুশফিক নিজেও তাত্ত্বিক এসব কথা জানেন নিশ্চয়ই। শুধু প্রায়োগিক ক্ষেত্রেই পিছিয়ে। তার সমসাময়িক সবাই ক্রিকেট ছেড়ে দিয়েছেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এখন খেলছেন এমন তারকাদের মাঝে মুশফিকের চেয়ে লম্বা ক্যারিয়ার নেই আর কারোরই। মুশফিক ক্যারিয়ারের শেষের মঞ্চে দাঁড়িয়ে নিজের ভুলটা শোধরাবেন কি না তাইই এখন বড় প্রশ্ন। 

জেএ

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *