মেহেরপুরে বাড়ছে অ্যানথ্রাক্স রোগীর সংখ্যা

মেহেরপুরে বাড়ছে অ্যানথ্রাক্স রোগীর সংখ্যা

মেহেরপুরের গাংনীতে উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে ‘অ্যানথ্রাক্স’ রোগীর সংখ্যা। গাংনী উপজেলায় গত ছয় মাসে প্রায় চার শাতাধিক অ্যানথ্রাক্স রোগী শনাক্ত হয়েছে। এ ছাড়াও উপজেলায় গত ১০ বছরে অন্তত ৫ হাজার নারী-পুরুষ এ রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন।  দ্রুত সময়ে এ রোগ প্রতিরোধ করা না গেলে মারাত্মকভাবে স্বাস্থ্য ঝুঁকির আশঙ্কা রয়েছে। তবে রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য বিভাগ ও প্রাণিসম্পদ বিভাগের দাবি অ্যানথ্রাক্স প্রতিরোধে তারা সচেষ্ট।

মেহেরপুরের গাংনীতে উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে ‘অ্যানথ্রাক্স’ রোগীর সংখ্যা। গাংনী উপজেলায় গত ছয় মাসে প্রায় চার শাতাধিক অ্যানথ্রাক্স রোগী শনাক্ত হয়েছে। এ ছাড়াও উপজেলায় গত ১০ বছরে অন্তত ৫ হাজার নারী-পুরুষ এ রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন।  দ্রুত সময়ে এ রোগ প্রতিরোধ করা না গেলে মারাত্মকভাবে স্বাস্থ্য ঝুঁকির আশঙ্কা রয়েছে। তবে রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য বিভাগ ও প্রাণিসম্পদ বিভাগের দাবি অ্যানথ্রাক্স প্রতিরোধে তারা সচেষ্ট।

গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের রেকর্ডকৃত তথ্য বলছে, ২০১৩ সালে গাংনী উপজেলার ভারতীয় সীমান্তের কাজিপুর ও হাড়াভাঙ্গা গ্রামে প্রথম অ্যানথ্রাক্স রোগ শনাক্ত হয়। সে বছরেই গরু, ছাগল ও মহিষের মাংসের সংস্পর্শে ১৯৯ জন এই রোগে আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে এবং ক্লিনিকে চিকিৎসা নিয়েছে। তারপর থেকে এই রোগ পর্যায়ক্রমে ছড়িয়ে পড়ে জেলার বিভিন্ন গ্রামে। ২০১৪ সালে ২০৩ জন,২০১৫ সালে ১৫৪ জন, ২০১৬ সালে ২৪০ জন, ২০১৭ সালে ২৮১ জন, ২০১৮ সালে ৪০৮ জন,২০১৯ সালে ৬৬০ জন, ২০২০ সালে ৩৭৭ জন, ২০২১ সালে ৪১৭ জন, ২০২২ সালে ৬৪৪ জন, ২০২৩ সালে ৭৯৪ জন। এ উপজেলায় সর্বমোট এ পর্যন্ত ৪ হাজার ৮১৯ জন নারী-পুরুষ অ্যানথ্রাক্স রোগে আক্রান্ত হয়েছেন এবং চিকিৎসা নিয়েছেন। এদের অনেকেই মারাত্মক আক্রান্ত হওয়ায় ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় উন্নত চিকিৎসা নিতে হয়েছে।

এদিকে ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত অর্থাৎ ছয় মাসে ৩৮৯ জন রোগী ইতোমধ্যে অ্যানথ্রাক্স রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্তদের মধ্যে বয়স্ক নারী-পুরুষের পাশাপাশি শিশুদেরও আক্রান্ত হওয়ার তথ্য রয়েছে। 

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, অ্যানথ্রাক্স রোগে আক্রান্ত গরু, ছাগল, মহিষ ও ভেড়ার মাংস স্পর্শ করাতে মানবদেহেও ছড়িয়ে পড়ছে এই রোগ। তবে এই রোগের জীবাণু মাটিতেও থাকে বলে জানিয়েছেন তারা। কারো শরীরে ক্ষত থাকলে সে এই রোগে দ্রুত আক্রান্ত হয়।

গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সদ্য চিকিৎসা নিতে আসা গাংনী উপজেলার বেতবাড়িয়া গ্রামের দবির উদ্দিনের স্ত্রী মাজেদা খাতুন বলেন, গ্রামে একটি ছাগল হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে ছাগলের মালিক সেটাকে জবাই করে। ওই ছাগলের গোস্ত কিনে আমি নাড়াচাড়া করার সঙ্গে সঙ্গে আমার দুই হাতে জ্বালাপোড়া করতে থাকে। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আমার হাতে ফোসকা পড়লে হাসাপাতালে এসে শুনি এটি অ্যানথ্রাক্স রোগ। 

একই গ্রামের কল্পনা খাতুন বলেন, বাজার থেকে গরুর মাংস কিনে আনেন আমার স্বামী। সেই মাংস রান্নার জন্য প্রস্তুত করি। সে সময় আমার দুই হাতের আঙুলে জ্বালাপোড়া শুরু হয়। পরে সেখানে ফোসকা পড়ে ক্ষত সৃষ্টি হলে আমি চিকিৎসা নিয়ে দুই সপ্তাহ পর সুস্থ হই।

ছাতিয়ান গ্রামের রাশেদুলের স্ত্রী আয়শা খাতুন ও কাবের উদ্দীন নামে আরও একজন জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসলে তাদের শরীরেও অ্যানথ্রাক্স রোগ শনাক্ত হয়। পরে তাদের ১০ দিন চিকিৎসা নিতে হয়। 

চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডাক্তার মো. রোকনুজ্জামান বলেন, যাদের শরীরে ঘা কিংবা খোস-পাঁচড়ার মতো কোনো ক্ষত থাকে তারা অ্যানথ্রাক্স রোগের জীবাণুতে খুব দ্রুত আক্রান্ত হয়। তবে রান্না করা মাংসে এ জীবাণুর কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যায়। 

তিনি আরও বলেন, কোনো গবাদি পশুর মাংস খুবই সতর্কতার সঙ্গে নাড়াচাড়া করতে হবে এবং অবশ্যই হাতে গ্লাভস পরে যেকোনো পশুর মাংস স্পর্শ করা উচিত। তার পরেও কারও শরীরে এমন লক্ষণ দেখা গেলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দেন এই চিকিৎসক।

গাংনী উপজেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডাক্তার আরিফুল ইসলাম জানান, বর্ষা মৌসুমে এ রোগ বৃদ্ধি পায়। আমরা অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত পশুকে জবাই না করার জন্য মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করছি। তবে আক্রান্ত পশুকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে আসতে পরামর্শ দিচ্ছি। এ ছাড়াও আমাদের মাঠকর্মীরা ভ্রাম্যমাণ টিমেও কাজ করছে।

গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা ডাক্তার আদিলা আজহার ঢাকা পোস্টকে বলেন, এক সময় গাংনীর কাজিপুর, সাহেবনগর, হাড়াভাঙ্গা এলাকায় অ্যানথ্রাক্স রোগের প্রাদুর্ভাব ভয়াবহ আকারে ছড়িয়ে পড়ে। আমরা বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে অ্যানথ্রাক্স রোগের বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টি করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা (ইউএইচএফপিও) ডা. সুপ্রভা রানী ঢাকা পোস্টকে বলেন, গাংনী উপজেলায় অ্যানথ্রাক্স রোগের ডেন্জার জোন হিসেবে পরিণত হয়েছিল। স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে সেই মহামারিকে প্রতিরোধ করতে সক্ষম হয়েছি। এখনও এ রোগে আক্রান্ত রোগীরা আসলে চিকিৎসকরা ওইসব রোগীদের গুরুত্বের সঙ্গে চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। তবে এই রোগের ব্যাপারে সাধারণ মানুষকেও সচেতন হতে পরামর্শ দেন তিনি।

আকতারুজ্জামান/এএমকে

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *