সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের আমলে টেলিযোগাযোগ ও এবং আইসিটি খাতে ৬৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে। তবে, আশানুরূপ কোনো অগ্রগতি পাওয়া যায়নি। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের ২০২৪-২৫ অর্থবছরের এডিপি পর্যালোচনা সভায় এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের আমলে টেলিযোগাযোগ ও এবং আইসিটি খাতে ৬৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে। তবে, আশানুরূপ কোনো অগ্রগতি পাওয়া যায়নি। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের ২০২৪-২৫ অর্থবছরের এডিপি পর্যালোচনা সভায় এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সভাকক্ষে সচিব ডা. মো. মুশফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে এডিপি বাস্তবায়ন অগ্রগতি বিষয়ক পর্যালোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
এডিপি পর্যালোচনায় জানানো হয়েছে, ২০১০ সাল থেকে আগস্ট ২০২৪ পর্যন্ত তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ খাতে ৬৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেও আশানুরূপ অগ্রগতি হয়নি।
উপদেষ্টা মো নাহিদ ইসলাম বলেন, ২০১০ সাল থেকে ডিজিটাল বাংলাদেশের নামে প্রচুর অর্থ ব্যয় করে অনেক প্রকল্প নেওয়া হয়েছে, কিন্তু এর ফল পায়নি দেশের মানুষ।
টেলিযোগাযোগ এবং আইসিটি খাতে ২০২৪-২৫ অর্থবছর পর্যন্ত ৬৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ কারা হয়েছে। যার মধ্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ ২৫ হাজার কোটি টাকা এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ নিয়েছে ৪০ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প। এরপরও জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়নের আইসিটি ডেভেলপমেন্ট ইনডেক্সের জুন, ২০২৪ অনুযায়ী বাংলাদেশ ১০০ এর মধ্যে ৬২ স্কোর করেছে।
তিনি বলেন, এক্ষেত্রে মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, ভিয়েতনাম ও ভুটানের পরে বাংলাদেশের অবস্থান। ওকলা স্পিডটেস্ট গ্লোবাল ইনডেক্স মে, ২০২৪ এর ইন্টারনেট গতির তালিকায় ১৪৭ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১০৯তম। এক্ষেত্রে কেনিয়াও বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে। ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সূচকেও বাংলাদেশের অবস্থান ১০৮তম। তালিকায় থাকা দেশগুলোর মধ্যে ভারত, শ্রীলঙ্কা, ভুটান, রুয়ান্ডা, ঘানাও বাংলাদেশের ওপরে।
তিনি আরও বলেন, আইএমএফের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রস্তুতি সূচকে জুন, ২০২৪ এ ১৭৪ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১১৩তম। তালিকায় থাকা দেশগুলোর মধ্যে ভারত, শ্রীলঙ্কা, ভুটান, রুয়ান্ডা, ঘানাও বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে। সাইবার নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান সার্ফশার্ক ডিজিটাল কোয়ালিটি অব লাইফ ইনডেক্স ২০২৩ এর ডিজিটাল জীবনমান সূচকে বিশ্বের ১২১ দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ৮২তম। এক্ষেত্রে আগের বছরের চেয়ে বাংলাদেশ পিছিয়েছে পাঁচ ধাপ। সূচক অনুযায়ী, বাংলাদেশে ইন্টারনেটের গতি বৈশ্বিক গড়ের চেয়ে ৫ শতাংশ কম। কী গভর্মেন্ট সূচকে বাংলাদেশ তালিকার ৭৩তম, যা বৈশ্বিক গড়মানের নিচে। ই-সিকিউরিটি র্যাংকিংয়ে ৮৫তম স্থানে এবং ইন্টারনেট ক্রয় ক্ষমতার হিসেবে ৭৭তম অবস্থানে বাংলাদেশ।
নাহিদ ইসলাম বলেন, মার্কিন সাময়িকী সিইও ওয়ার্ল্ডের এপ্রিল ২০২৪ এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ফ্রিল্যান্সিংয়েও পিছিয়ে বাংলাদেশ। সেখানে সেরা গন্তব্যের ৩০ দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ২৯তম নম্বরে। তালিকায় ভারত ও পাকিস্তানের পর বাংলাদেশের অবস্থান। এসব সূচক দেখলে ঠিকভাবে প্রতীয়মান হয় যে, ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রকৃত সুযোগ-সুবিধা দেশের জনগণ পায়নি। বরং এক্ষেত্রে ব্যাপক অনিয়ম করা হয়েছে। প্রায় সব জায়গায় দেখা যায় নির্ধারিত সময়ে প্রকল্প শেষ হয় না, এক-দুইবার সময় বাড়ানোর পরে আবারও সময় বাড়ানোর প্রয়োজন হয়। তাই এখন যে কয়েকটি প্রকল্পের সময় বাড়ানোর কথা বলা হচ্ছে, তা যেন বুঝেশুনে বাড়ানো হয়।
তিনি বলেন, প্রকল্পগুলো ঠিকমতো শেষ করতে পারলে বাংলাদেশে ইন্টারনেট এবং টেলিযোগাযোগ খাতে অনেক অগ্রগতি হবে, যার সুফল দেশবাসী ভোগ করবে।
একইসঙ্গে প্রকল্পের ব্যয় কমানো, দীর্ঘসূত্রিতা পরিহার, সফটওয়্যারে সবসময় প্রকল্পের আপডেট দেওয়া এবং সময়মতো প্রকল্প শেষ করার বিষয়েও মন্তব্য করেন উপদেষ্টা।
সভায় জানানো হয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের চারটি দপ্তরে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মোট নয়টি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে বিটিসিএল পাঁচটি, টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেড একটি, ডাক অধিদপ্তর দুইটি এবং বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল পিএলসি একটি প্রকল্প গ্রহণ করে।
সার্বিকভাবে প্রকল্প পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আগস্ট ২০২৪ পর্যন্ত জাতীয় অগ্রগতি ১.০২ শতাংশ এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের অগ্রগতি ৩.৮৪ শতাংশ।
সভায় ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের দপ্তর ও সংস্থার প্রধান এবং প্রকল্প পরিচালকরা নিজ নিজ প্রকল্পের বাস্তবায়ন পরিকল্পনা ও সর্বশেষ অগ্রগতি তুলে ধরেন।
আরএইচটি/কেএ