প্রস্তুত ঢাকেশ্বরী মন্দির, শারদীয় দুর্গোৎসব শুরু বুধবার

প্রস্তুত ঢাকেশ্বরী মন্দির, শারদীয় দুর্গোৎসব শুরু বুধবার

বছর ঘুরে আবারো এসেছে সনাতন ধর্মালম্বীদের প্রধান ও সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। শরতের শুভ্র আকাশ, কাশফুলের হাওয়ার নাচে, চণ্ডীপাঠ, ঢাকঢোল, শঙ্খের শব্দ আর উলুধ্বনি মিলেমিশে একাকার হবে এক উৎসবে। মণ্ডপে মণ্ডপে প্রস্তুত শেষে মহামিলন উৎসবের অপেক্ষা আর মাত্র কয়েক ঘণ্টার।

বছর ঘুরে আবারো এসেছে সনাতন ধর্মালম্বীদের প্রধান ও সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। শরতের শুভ্র আকাশ, কাশফুলের হাওয়ার নাচে, চণ্ডীপাঠ, ঢাকঢোল, শঙ্খের শব্দ আর উলুধ্বনি মিলেমিশে একাকার হবে এক উৎসবে। মণ্ডপে মণ্ডপে প্রস্তুত শেষে মহামিলন উৎসবের অপেক্ষা আর মাত্র কয়েক ঘণ্টার।

বুধবার (৯ অক্টোবর) ষষ্ঠী দেবীর আমন্ত্রণের মধ্য দিয়ে শুরু হবে উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা। ওইদিন সকাল ৮টা ১ মিনিটের মধ্যে মহাষষ্ঠী কল্পনারম্ভ শেষ করতে হবে। শায়ণকালে থাকবে দেবীর অধিবাস ও আমন্ত্রণ। যদিও গত ২ অক্টোবর মহালয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে এ বছরের উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা।

দুর্গাদেবীকে আমন্ত্রণ জানাতে এরইমধ্যে দেশের মন্দিরগুলোতে উৎসবের আমেজ তৈরি হয়েছে। জানা গেছে, এ বছর সারাদেশে ৩২ হাজার ৬৬৬টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা উদযাপিত হবে।

সোমবার (৭ অক্টোবর) রাজধানীর শ্রী শ্রী ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির ঘুরে দেখা যায়, মন্দিরের ভবনগুলোর দেওয়ালে নতুন রং করা হয়েছে। মণ্ডপের সামনে প্রার্থনার জায়গায় লাগানো হয়েছে শামিয়ানা। এখানে ভক্তদের সুশৃঙ্খলভাবে প্রণামের জন্য বাঁশ দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে জিগজ্যাগ। তার একপাশে তৈরি হচ্ছে মঞ্চ। এছাড়া আলোকসজ্জার কাজও চলছে। অর্থাৎ উৎসবের আগে শেষ মুহূর্তের কাজ চলছে মন্দিরে। সব মিলিয়ে মন্দির এলাকায় উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে।

এদিকে মন্দিরে নিরাপত্তা দিতে একটি কন্ট্রোলে রুম খুলেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ। এখানেই আয়োজন করা হয়েছে মহানগর কেন্দ্রীয় পূজা মণ্ডপের।

৫ দিনব্যাপী আয়োজনে যখন যা হবে

গত ২ অক্টোবর মহালয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে দুর্গাপূজা উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা। তবে উৎসব শুরু হবে ৯ অক্টোবর মহাষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে। পাঁচ দিনব্যাপী এই উৎসবের শেষ হবে দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে। এ বছর দেবী দুর্গার আগমন হবে দোলায় আর স্বর্গে গমন করবেন ঘোড়ায় চড়ে।

মন্দির সূত্রে জানা গেছে, আগামী ৯ অক্টোবর (২৪ আশ্বিন) সকাল ৮টা ১ মিনিটের মধ্যে মহাষষ্ঠী কল্পনারম্ভ শেষ করতে হবে। শায়ণকালে থাকবে দেবীর অধিবাস ও আমন্ত্রণ; ১০ অক্টোবর (২৫ আশ্বিন) সকাল ৭টা ৫৩ মিনিটের মধ্যে দুর্গাদেবীর নবপত্রিকা প্রবেশ ও স্থাপন সপ্তম্যাদি কল্পারম্ভ ও মহাসপ্তমী পূজা শেষ করতে হবে। এরপর হবে বস্ত্র বিতরণ; ১১ অক্টোবর (২৬ আশ্বিন) সকাল ৭টা ১৭ মিনিটের মধ্যে মহাষ্টমী পূজার কল্পারম্ভ ও বিহিতপূজা সন্ধিপূজা আরম্ভ সকাল ৬টা ৫২ মিনিটে এবং শেষ হবে ৭টা ৪১ মিনিটের মধ্যে। এরপর মধ্যাহ্নে মহাপ্রসাদ বিতরণ করা হবে; ১২ অক্টোবর (২৭ আশ্বিন) সকাল ৬টা ১২ মিনিটের মধ্যে মহানবমীর কল্পারম্ভ ও বিহিত পূজা এবং সকাল ৮টা ২৬ মিনিটের মধ্যে দুর্গাদেবীর দশমী বিহিত পূজা ও পূজান্তে দর্পণ বিসর্জন করা হবে। এছাড়া সন্ধ্যায় হবে আরতি প্রতিযোগিতা; ১৩ অক্টোবর (২৮ আশ্বিন) দুপুর ১২টায় হবে স্বেচ্ছায় রক্তদান ও বিকেল ৪টায় বিজয়া শোভাযাত্রা।

পূজামণ্ডপে দায়িত্ব পালন করবে সশস্ত্র বাহিনী

সোমবার (৭ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর ঢাকেশ্বরী মন্দিরে শারদীয় দুর্গাপূজার নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিদর্শন করতে যান বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মো. ময়নুল ইসলাম। পরিদর্শন শেষে তিনি সাংবাদিকদের জানান, এবার সারাদেশে কম-বেশি সাড়ে ৩১ হাজার মণ্ডপে পূজা উদযাপন করা হবে। এসব মণ্ডপে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা করার সুযোগ নেই। পূজামণ্ডপে নিরাপত্তা দিতে প্রতিটি উপজেলা, জেলা ও পুলিশ হেডকোয়ার্টারে কন্ট্রোল রুম চালু করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, পূজামণ্ডপে অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে। পূজার আগে আমরা প্রতিটি জায়গায় টহল বাড়িয়েছি। ইতোমধ্যে আনসার ও ভিডিপি মোতায়েন করা হয়েছে। বোধন এবং ষষ্ঠীপূজা থেকে সব পূজামণ্ডপে আনসার ও ভিডিপি দায়িত্ব পালন করবে। এছাড়া সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা মোতায়েন আছে তারাও পূজার দায়িত্ব পালন করবেন। আমাদের মোবাইল টিম ও স্ট্রাইকিং ফোর্স সবসময় কাছাকাছি দূরত্বে থাকবে। আনসার বাহিনীর সঙ্গে ভলানটিয়ার রয়েছে তারাও কাজ করছে। এতে করে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা বা অপতৎপরতার সুযোগ নেই।

আইজিপি বলেন, ইলেকট্রনিক্স বা সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে কেউ যেন মিথ্যা প্রচারণা ও গুজব ছড়াতে না পারে সেই ব্যবস্থা আমাদের চালু আছে। ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারও (এনটিএমসি) কাজ করছে। যেসব মণ্ডপে আমাদের কাছে ঝুঁকি মনে হয়েছে, সেসব পর্যায় সিসি ক্যামেরা রাখা হয়েছে।

এক সফটওয়্যারের আওতায় প্রায় সাড়ে ৩১ হাজার মণ্ডপ

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ শর্মা বলেন, এনটিএমসি আমাদের ৩১ হাজার ৪৬১টি পূজামণ্ডপকে একটি সফটওয়্যারের আওতায় নিয়ে এসেছে। মিনিটের মধ্যে জানা যাবে কোথায় কী ঘটনা ঘটছে। একদম সঠিক তথ্যটি জানা যাবে। যেন কেউ গুজব ঘটিয়ে কোনো বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে না পারে।

তিনি বলেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় সারাদেশে এবার পূজামণ্ডপের সংখ্যা কিছু কমেছে। এর কারণ হচ্ছে গত কয়েকদিন আগে ফেনী অঞ্চলে ভয়াবহ বন্যার ঘটনা ঘটেছে। উত্তরাঞ্চলেও এখন বন্যা হচ্ছে। এই বন্যার কারণে বেশ কিছু জায়গায় পূজামণ্ডপের সংখ্যা কমেছে। তবে ঢাকায় মণ্ডপের সংখ্যা বেড়েছে। আরেকটা জিনিস হচ্ছে আতঙ্ক-আশঙ্কা কিছুটা আছে। কিন্তু সেনাবাহিনী, পুলিশসহ সব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে আমাদের আশ্বস্ত করা হয়েছে পূজা উদযাপন করার জন্য।

এমএইচএন/জেডএস

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *