১১ বছর পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকাশ্য রাজনীতিতে শিবির 

১১ বছর পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকাশ্য রাজনীতিতে শিবির 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সক্রিয় ১১টি রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের শীর্ষ নেতারা। ক্যাম্পাসের উদ্ভূত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে হওয়া এই আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার শীর্ষ দুই নেতা। এর মাধ্যমে দীর্ঘ ১১ বছর পর প্রকাশ্যে আসল শিবির। সভায় প্রতিটি ছাত্র সংগঠনের নেতারা ডাকসু নির্বাচনের দাবি জানান। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সক্রিয় ১১টি রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের শীর্ষ নেতারা। ক্যাম্পাসের উদ্ভূত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে হওয়া এই আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার শীর্ষ দুই নেতা। এর মাধ্যমে দীর্ঘ ১১ বছর পর প্রকাশ্যে আসল শিবির। সভায় প্রতিটি ছাত্র সংগঠনের নেতারা ডাকসু নির্বাচনের দাবি জানান। 

সবশেষ ২০১৩ সালে ঢাবি ক্যাম্পাসে প্রকাশ্যে মিছিল সমাবেশ করেছিল শিবির।

শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) উপাচার্যের লাউঞ্জে দুই দফায় রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনগুলোর সঙ্গে এই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

দুই দফা বৈঠকে বেলা সাড়ে ১১টায় ছাত্র শিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সাদিক কায়েম ও সাহিত্য সম্পাদক রেজাউল করিম শাকিল, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের আহ্বায়ক কমিটির সাজেদুল ইসলাম ও প্রজ্ঞা চৌধুরী, বিপ্লবী ছাত্র যুব আন্দোলনের পক্ষ থেকে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের আতিক চৌধুরী, নৃবিজ্ঞান নাইম উদ্দিন, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের আদনান আজিজ অংশ নেন।

এরপর দুপুর ২টায় ছাত্রদল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সরকার ও সাধারণ  সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন, ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের ঢাবি শাখার সভাপতি ইয়াছিন আরাফাত, সাবেক সাধারণ সম্পাদক খায়রুল আহসান মারজান, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর ঢাবি শাখার সভাপতি নূজিয়া হাসিন রাশা ও সাধারণ সম্পাদক সামি আব্দুল্লাহ; ছাত্র ফেডারেশনের ঢাবি শাখার আহ্বায়ক আরমানুল হক, ছাত্র ইউনিয়নের ঢাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক মাঈন আহমেদ; সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের (মার্ক্সবাদী) ঢাবি শাখার সভাপতি সাদেকুল ইসলাম সাদিক ও সাংগঠনিক সম্পাদক মোজাম্মেল হক, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের (বাসদ) ঢাবি শাখার সভাপতি সুহাইল আহমেদ শুভ প্রমুখ বৈঠকে অংশ নেন।

বৈঠকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ ও প্রক্টর উপস্থিত ছিলেন। 

বৈঠক শেষে ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করা এখন মূল কাজ। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের সঙ্গে মূলত এই বিষয়ে আলোচনার জন্যই ডেকেছে এবং আমাদের সার্বিক সহায়তা চেয়েছে।

ছাত্র-রাজনীতির বিষয়ে তিনি বলেন, আলোচনায় আমরা ক্যাম্পাসে সুষ্ঠু রাজনীতির বিষয়ে দাবি জানিয়েছি। আসলে গত বৃহস্পতিবার ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতির বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বরং এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সভায় উপস্থিত কয়েকজন আওয়ামী লীগের দোসর সাংবাদিকদেরকে ভুল তথ্য দিয়ে মিসগাইড করেছে। অন্যথায় এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় অফিসিয়াল বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করত। তাই আমরা ফ্যাসিবাদের দোসরদের নিয়ে গঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট কমিটি ভেঙে দেওয়ার দাবি জানিয়েছি।

শিবির সভাপতি সাদিক কায়েম বলেন, গণঅভ্যুত্থানের প্রত্যাশার আলোকে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মেধার রাজনীতি চায়, প্রশাসনের কাছে এমন দাবি রেখেছি আমরা। আমরা প্রশাসনকে জানিয়েছি, ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা কোনো প্রাজ্ঞ সিদ্ধান্ত নয়। গণঅভ্যুত্থানের প্রত্যাশার আলোকে ছাত্ররাজনীতি গড়ে উঠবে। গত ১৫ বছরে ধরে ছাত্ররাজনীতির নামে জুলুমতন্ত্র চলে আসছে। আমরা এটার অবসান চাই। আমরা মেধার ভিত্তিতে রাজনীতি, শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের রাজনীতি চাই।

শিবির সভাপতি বলেন, আমরা ইনক্লুসিভ ছাত্র রাজনীতি চাই। এখানে কোনো বিভাজন থাকবে না। শিক্ষার্থীরা তাদের কথা বলার অধিকার পাবে, স্বাধীনতা পাবে। প্রত্যেকেই তাদের আদর্শ চর্চা করবে কিন্তু কেউ কাউকে বলপ্রয়োগ করে চাপিয়ে দিতে পারবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতির সংস্কার কেমন হবে তা নিয়ে আমরা শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সকল ছাত্র-সংগঠনগুলোকে নিয়ে একটি পলিসি ডিসকাশনের আহ্বান করেছি। সেখানে ছাত্র-সংগঠনগুলো তাদের মতামত তুলে ধরবে।

আজকের আলোচনায় আর কী কী বিষয় ছিল এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা দ্রুত ডাকসু নির্বাচনের দাবি জানিয়েছি। আর ফ্যাসিস্টদের দোসরদের দ্বারা তৈরি সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছি।

গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের কাউন্সিল আহ্বায়ক সাজিদুল ইসলাম বলেন, আলোচনায় আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসু নির্বাচন, তিয়াত্তরের অধ্যাদেশের বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা নিয়ে আলাপ আলোচনা করেছি। ক্যাম্পাসে সুষ্ঠু ধারার রাজনীতি প্রয়োজন। রাজনীতি বন্ধ করা কোনো সঠিক সিদ্ধান্ত নয়। আমরা এই আলোচনায় যারা আন্দোলনের সময় হামলা ও বিভিন্ন ষড়যন্ত্রে শামিল ছিল তাদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছি এবং ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি করার বিষয়ে নিরাপত্তা প্রদানের দাবি জানিয়েছি।

আলোচনায় শিবিরের অংশগ্রহণ বিষয়ে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ সংসদে নিষিদ্ধ ছাত্র সংগঠন কীভাবে এমন আলোচনার দাওয়াত পায় তা আমার জানা নেই। তাদের উচিত একাত্তরে তাদের অবস্থানের বিষয়ে তাদের বক্তব্য ক্লিয়ার করা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ফেডারেশনের আহ্বায়ক আরমানুল হক বলেন, আসলে এতদিন যে ক্যাম্পাসে কোনো রাজনীতি ছিল না। যা ছিল তা হল জুলুম-নিপীড়ন আর চাপিয়ে দেওয়ার সংস্কৃতি। এসবকে ছাত্র রাজনীতি বলা যায় না। সুষ্ঠু সামাজিক বিকাশের জন্য ছাত্র রাজনীতি গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। আমরা এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়েছি এবং দ্রুত ডাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে ক্যাম্পাসের স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছি।

সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সাংগঠনিক সম্পাদক মোজাম্মেল হক বলেন, আমরা ক্যাম্পাসে সন্ত্রাস-দখলদারিত্ব বন্ধ করতে প্রথম বর্ষ থেকে প্রশাসনিক তত্ত্বাবধানে সিট বণ্টন এবং জোর করে রাজনৈতিক কর্মসূচীতে নেওয়া বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছি। আমরা অবিলম্বে পরিবেশ পরিষদের মিটিং আহ্বান এবং ছাত্র সংসদ নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানিয়েছি।

ক্যাম্পাসে পুলিশি হামলার নির্দেশদাতা সিন্ডিকেট সদস্যদের সঙ্গে মিটিং ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান এবং গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষার পরিপন্থি বলে উল্লেখ করেছি। এই সিন্ডিকেট ভেঙে নতুন সিন্ডিকেট গঠনের দাবি জানিয়েছি।

কেএইচ/এসকেডি

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *