স্বাধীনতার ৫২ বছর এবং কবির মৃত্যুর ৪৭ বছর পেরিয়ে গেলেও কাজী নজরুল ইসলামকে জাতীয় কবি হিসেবে গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়নি। জাতীয় কবিকে যথাযথ মূল্যায়নের দাবিতে শিগগিরই ১৫ দফা দাবি পেশ করতে যাচ্ছে নজরুল স্টাডি সেন্টারসহ নজরুল বিষয়ক বিভিন্ন সংগঠন, নজরুল গবেষক ও নজরুল অনুরাগীরা।
স্বাধীনতার ৫২ বছর এবং কবির মৃত্যুর ৪৭ বছর পেরিয়ে গেলেও কাজী নজরুল ইসলামকে জাতীয় কবি হিসেবে গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়নি। জাতীয় কবিকে যথাযথ মূল্যায়নের দাবিতে শিগগিরই ১৫ দফা দাবি পেশ করতে যাচ্ছে নজরুল স্টাডি সেন্টারসহ নজরুল বিষয়ক বিভিন্ন সংগঠন, নজরুল গবেষক ও নজরুল অনুরাগীরা।
অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বরাবর ওই দাবি পেশ করা হবে বলে সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে।
সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পরাধীনতা, বৈষম্য, অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রামে কাজী নজরুল ইসলাম পৃথিবীর সকল দেশের, সকল মানুষের অনুপ্রেরণা ও পথপ্রদর্শক। বাংলাদেশের ছাত্র-জনতার সাম্প্রতিক বৈষম্য বিরোধী সংগ্রামে নজরুলের কবিতা-গান ছিল সকলের মুখে মুখে। একটি বৈষম্যহীন, সাম্য, সুন্দর, সম্প্রীতির টেকসই বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে জাতীয় কবিকে আমাদের চিন্তা-চেতনা ও কর্মের কেন্দ্রবিন্দুতে রাখা আবশ্যক।
সরকারের নিকট পেশ হতে যাওয়া ১৫ দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে—
১) জাতীয় কবির গেজেটটি দ্রুত প্রণয়ন করা;
২) জাতীয় কবির প্রোটোকল সংক্রান্ত অধ্যাদেশ/আইন প্রণয়ন করা;
৩) নজরুল ইনস্টিটিউট নামটিকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে ‘কবি নজরুল ইনস্টিটিউট’ করা হয়েছে। ‘কবি’ না লিখলে নাকি নজরুলকে চেনা যায় না! তাহলে তার সঙ্গীতসহ বিপুল সৃষ্টিকর্ম ও দর্শন কোথায় গেল? তাছাড়া তিনি তো কেবল কবি নন, তিনি আমাদের ‘জাতীয় কবি’! ইনস্টিটিউটের নামটি পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হবে এবং এই অপকর্মের সাথে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনতে হবে;
৪) নজরুল ইনস্টিটিউটকে যারা ব্যর্থ প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছে তাদেরকে চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনতে হবে;
৫) নজরুল ইনস্টিটিউটকে নজরুল বিষয়ক বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত করতে হবে;
৬) জাতীয় কবি কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়, ত্রিশাল থেকে নজরুল বিদ্বেষী দালাল চক্রকে বিতাড়িত করতে হবে;
৭) নজরুল ইনস্টিটিউটের জন্য যুগোপযোগী অর্গানোগ্রাম তৈরি করতে হবে; ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরিকে পেনশনযোগ্য করতে হবে;
৮) নজরুল-স্মৃতি বিজড়িত সকল স্থান ও স্থাপনা অবিকৃত আকারে সংরক্ষণ করতে হবে;
৯) নজরুল-স্মৃতি বিজড়িত ধানমণ্ডি লেককে নজরুল সরোবর হিসেবে নামকরণ করতে হবে;
১০) নজরুলের সকল সৃষ্টি ইংরেজি, আরবি, ফ্রেঞ্চ, স্প্যানিশসহ পৃথিবীর প্রধান প্রধান ভাষায় অনুবাদ করতে হবে;
১১) বিদেশে বাংলাদেশের সকল মিশনে নজরুল কর্নার প্রতিষ্ঠা করতে হবে;
১২) দেশের সকল জেলা ও উপজেলায় নজরুল ইনস্টিটিউটের শাখা অফিস প্রতিষ্ঠা করতে হবে;
১৩) নজরুল ইনস্টিটিউটে জরুরিভিত্তিতে কয়েকটি ফ্যাকাল্টি তৈরি করে ফ্যাকাল্টি মেম্বার হিসেবে প্রথিতযশা ২০ জন নজরুল সঙ্গীত শিল্পী এবং ১০ জন নজরুল গবেষককে নিয়োগ দিতে হবে;
১৪) বাংলা অ্যাকাডেমির অনুকরণে নজরুল ইনস্টিটিউটে সকলকে সদস্য হওয়ার সুযোগ তৈরি করতে হবে এবং সদস্যদের অংশগ্রহণে নিয়মিত সভার আয়োজন করতে হবে;
এবং ১৫) নজরুল ইনস্টিটিউটে ট্রাস্টি বোর্ডের পরিবর্তে ডায়নামিক পরিচালনা পর্ষদ গঠন করতে হবে; যেখানে সকল নজরুল সংগঠনের প্রতিনিধিত্ব থাকবে।
এর আগে ২০২২ সালে হাইকোর্টে এ বিষয়ে রিট দাখিল করা হয়েছিল। ওই রিটে দাবি করা হয়, স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ২৪ মে বঙ্গবন্ধুর উদ্যোগে কবিকে বাংলাদেশে আনা হয়। বসবাসের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে ধানমন্ডিতে তাকে একটি বাড়ি দেওয়া হয়। বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে অবদানের জন্য ১৯৭৪ সালের ৯ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাকে ডি-লিট উপাধিতে ভূষিত করা হয়।
এরপর ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব দিয়ে সরকারি আদেশ জারি করা হয়। ১৯৭৬ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি তাকে ‘একুশে পদক’ দেওয়া হয়। কিন্তু স্বাধীনতার ৫২ বছর এবং কবির মৃত্যুর ৪৭ বছর পেরিয়ে গেলেও জাতীয় কবির রাষ্ট্রীয় আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতির বিষয়ে কোনো যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
আরএম/এমজে