ব্যবসায়ীরা ইলিশ কিনে তাতে লবণ দিয়ে সংরক্ষণ করে থাকেন। এটি বাজারে নোনা ইলিশ বলে বিক্রি হয়। দেশে এই ইলিশের বেশ চাহিদা রয়েছে। তাই প্রতি বছর মৌসুম এলেই নোনা ইলিশ তৈরির আড়তগুলোতে চলে ব্যস্ত সময়।
ব্যবসায়ীরা ইলিশ কিনে তাতে লবণ দিয়ে সংরক্ষণ করে থাকেন। এটি বাজারে নোনা ইলিশ বলে বিক্রি হয়। দেশে এই ইলিশের বেশ চাহিদা রয়েছে। তাই প্রতি বছর মৌসুম এলেই নোনা ইলিশ তৈরির আড়তগুলোতে চলে ব্যস্ত সময়।
তিন মাসের এই মৌসুমে প্রায় কোটি টাকার নোনা ইলিশ বিক্রি হয় বলে জানা গেছে। সেগুলো দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহসহ রপ্তানি হয় বিদেশেও। নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার নতুন সম্ভাবনা হয়ে উঠেছে এই নোনা ইলিশ।
জানা গেছে, ব্যবসায়ীরা মৌসুমে কম মূল্যে বড় ও মাঝারি আকারের ইলিশ কিনে সেগুলোর পেট পরিষ্কার ও আঁশ ছাড়িয়ে নেন। বিশেষ কায়দায় মাছগুলো পরিষ্কার করা হয়। এরপর সামুদ্রিক বা মোটা লবণ দিয়ে কিছুদিনের জন্য তা ড্রামে প্রক্রিয়াজাত করে রাখা হয়। পরে ইলিশের মৌসুম শেষ হলে সেগুলো খোলা বাজারে বেশি দামে বিক্রি করা হয়।
ভোজনরসিকরা দৈনন্দিন খাবারে অথবা অতিথি আপ্যায়নে এই নোনা ইলিশ পরিবেশন করে থাকেন। এর ঘ্রাণ ও স্বাদে অতুলনীয় এবং প্রোটিন সমৃদ্ধ।
সরেজমিনে হাতিয়ার চেয়ারম্যানঘাটে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে আসা ইলিশ কিনছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। পরে সেগুলো প্রক্রিয়াজাত করে নোনা ইলিশে পরিণত করবেন তারা। কয়েক মাস মাছঘাটের স্থানীয় কিছু ঘরে স্তূপ করে এবং ড্রামের মধ্যে রেখে নোনা ইলিশগুলো সংরক্ষণ করা হবে। এরপর বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ মাসে এসব ইলিশ বিক্রির জন্য নিয়ে যাওয়া হবে দেশের উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে।
নোনা ইলিশ প্রস্তুতকারক সোহরাব আলী ব্যাপারী ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রক্রিয়াজাত করার সময় প্রথমে ইলিশের পেট থেকে ডিম আলাদা করে ফেলা হয়। এরপর ইলিশ মাছটি ফালি ফালি করে কেটে ভালোভাবে লবণ দিয়ে ছয় থেকে সাত মাস রেখে দেওয়া হয়। সবশেষে লবণ মেশানো ইলিশগুলো ড্রামে করে সংরক্ষণ করা হয়। বৈশাখ মাসে সেগুলোর ভালো দাম পাওয়া যায়। নোনা ইলিশের চাহিদা জামালপুর, ময়মনসিংহে বেশি। তাই মাছগুলো সেখানে পাঠানো হয়।
আরব আলী ব্যাপারী নামের অপর এক ব্যবসায়ী বলেন, প্রতি মৌসুমে প্রায় কোটি টাকার নোনা ইলিশ বিক্রি হয়। তবে, স্থানীয় বাজারে এই মাছের ক্রেতা খুবই কম। বিভিন্ন জেলা থেকে আগত ক্রেতারাই লবণ ইলিশ কেনেন। এ ছাড়া উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় এই মাছের চাহিদা রয়েছে।
মাছ কাটা শ্রমিক জালু মিয়া বলেন, অনেক শ্রমিক এই পেশায় জড়িত। মৌসুমে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়লে আমাদের ব্যস্ততা বেড়ে যায়। যখন নিষেধাজ্ঞা থাকে তখন মাছ কাটার কাজ থাকে না। সবসময় নরম মাছ কাটা হয় না। তাজা মাছও কাটা হয়।
আড়তদার আকবর হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, নোনা ইলিশ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যায়। হাতিয়াতে এটি একটি নতুন সম্ভাবনা। ভালোভাবে প্রস্তুত ও ব্র্যান্ডিং করা গেলে এই ইলিশ বিদেশে আরও বেশি রপ্তানি করা সম্ভব। এক্ষেত্রে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা দরকার।
নোয়াখালী জেলার মৎস্য কর্মকর্তা ইকবাল হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, অঞ্চলভেদে খাদ্যাভ্যাসে ভিন্নতা রয়েছে। কোথাও তাজা ইলিশ আবার কোথাও নোনা ইলিশ পছন্দ করেন ভোজনরসিকরা। বর্তমানে ইলিশের দাম বেশি। তবে, লবণ দিয়ে রাখলে যারা মৌসুম ছাড়া ইলিশ খান তারা স্বাদের ভিন্নতায় এটি খেতে পারেন। চেয়ারম্যানঘাটের ব্যবসায়ীরা নোনা ইলিশ বিক্রি করে ভালো আয় করছেন। এটি যেন তারা আরও ভালোভাবে প্রসেস করে সরবরাহ করতে পারেন সেজন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে।
এফআরএস/