স্বাস্থ্য সেবা ও সুরক্ষা আইন ২০২৪ : কী আছে প্রস্তাবিত অধ্যাদেশে?

স্বাস্থ্য সেবা ও সুরক্ষা আইন ২০২৪ : কী আছে প্রস্তাবিত অধ্যাদেশে?

এই অধ্যাদেশে সেবা গ্রহীতা এবং সেবাপ্রদানকারীর সুরক্ষার বিষয়ে বেশকিছু উল্লেখযোগ্য নির্দেশনা থাকলেও আইনটির নামসহ অনেক ক্ষেত্রে অস্পষ্টতা, ভাষাগত দুর্বোধ্যতা, আইনি ভাষা প্রয়োগের অভাব, সেবা গ্রহীতা এবং সেবাপ্রদানকারীর কার্যকারী সুরক্ষার দিক নির্দেশনার অভাবসহ নানান ধরনের দুর্বলতা প্রত্যক্ষভাবে লক্ষণীয়।

স্বাস্থ্য খাত সর্বদাই অবহেলা বা খামখেয়ালিপনার শিকার। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়েও এর ব্যতিক্রম হয়নি। দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের জন্য পাঁচটি কমিশন গঠন করা হলেও স্বাস্থ্য খাতের সংস্কারে কমিশন গঠন করা হয়নি। গুরুত্ব এবং জটিলতা বিবেচনায় স্বাস্থ্য খাতের ট্রান্সফরমেশন-এর জন্য একটি শক্তিশালী কমিশন গঠন যে অপরিহার্য তা বোঝার জন্য বিশেষজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন নেই।

দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সংস্কার করার জন্য ১১ সদস্যের দায়সারা গোছের একটি প্যানেল গঠন থেকে বোঝা যায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নিকটও স্বাস্থ্য খাত তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়। এ কমিটি যে শুধু দায়সারা তার বড় প্রমাণ, কমিটি থেকে কোনো প্রকার রিপোর্ট পাওয়ার আগেই ‘স্বাস্থ্য সেবা ও সুরক্ষা আইন ২০২৪’, অধ্যাদেশ আকারে পাস করার প্রচেষ্টা করা হচ্ছে যা ঘোড়ার আগে গাড়ি জুড়ার অবস্থার মতো।

১২টি অধ্যায়, ৪৬টি ধারা এবং ১১২টি উপধারা বিশিষ্ট এই অধ্যাদেশে মূলত: সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল স্থাপন ও ব্যবস্থাপনা; ব্যক্তিগত চেম্বার ব্যবস্থাপনা; লাইসেন্স প্রদান, লাইসেন্স বাতিল ও ফি নির্ধারণ; পরিদর্শন, প্রবেশ ও জব্দ করার ক্ষমতা; অ্যাম্বুলেন্স ও মরদেহ ব্যবস্থাপনা; বিদেশি স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী ব্যক্তি কর্তৃক সেবা প্রদান; স্বাস্থ্য সেবা প্রদানকারী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সুরক্ষা; হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের প্রাতিষ্ঠানিক দায়িত্ব ও কর্তব্য; স্বাস্থ্য সেবায় খাদ্য, ওষুধ ও মালামাল সরবরাহকারীর দায়িত্ব; রোগীর অধিকার, দায়িত্ব ও চিকিৎসা অবহেলা; চিকিৎসা সেবায় অবহেলাজনিত ক্ষতির প্রতিকার; জরুরি স্বাস্থ্য সেবা প্রদান; বেসরকারি হাসপাতালে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও দরিদ্র প্রতিবন্ধী রোগীদের হ্রাসকৃত মূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান; ডিজিটাল প্লাটফর্মে চিকিৎসা সেবা ও স্বাস্থ্যসেবা প্রদান; চিকিৎসা সেবার মান, যথার্থতা পরীক্ষণ, মূল্যায়ন ও রেফারাল; রেজিস্টার্ড সংরক্ষণ; স্বাস্থ্য সেবা সুরক্ষা কমিটি গঠন; মোবাইল কোর্টের ক্ষমতা এবং উক্ত আইন বহির্ভূত কোনো কাজে জড়িত থাকলে কী কী দণ্ড প্রদান করা হবে তার ব্যাখ্যাসহ নানাবিধ বিষয়ের উল্লেখ আছে।

এই অধ্যাদেশে সেবা গ্রহীতা এবং সেবাপ্রদানকারীর সুরক্ষার বিষয়ে বেশকিছু উল্লেখযোগ্য নির্দেশনা থাকলেও আইনটির নামসহ অনেক ক্ষেত্রে অস্পষ্টতা, ভাষাগত দুর্বোধ্যতা, আইনি ভাষা প্রয়োগের অভাব, সেবা গ্রহীতা এবং সেবাপ্রদানকারীর কার্যকারী সুরক্ষার দিক নির্দেশনার অভাবসহ নানান ধরনের দুর্বলতা প্রত্যক্ষভাবে লক্ষণীয়।

যেমন ‘ব্যক্তিগত চেম্বারে বেসরকারি চিকিৎসা সেবা’র ক্ষেত্রে রোগীর ব্যবস্থাপত্রে সুস্পষ্টভাবে জেনেরিক ওষুধের নাম বড় অক্ষরে লিখিতে হইবে’ মর্মে একটি ধারা আছে। এই ধারাতে বেসরকারি হাসপাতাল এবং সরকারি হাসপাতালের কথা কিছু বলা হয়নি। কেন শুধুমাত্র ‘ব্যক্তিগত চেম্বারে বেসরকারি চিকিৎসা সেবা’র ক্ষেত্রে এ ধারা প্রযোজ্য হবে?

তাছাড়া এই ধারা প্রয়োগের ক্ষেত্রে বেশ জটিলতা দেখা দেবে। কেননা এই ধারার প্রয়োগ তখনই সম্ভব হবে যখন সব ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলো সমমানের ওষুধ উৎপাদন করবে। ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর তা নিশ্চিত না করতে পারলে ওষুধের বাজার নিম্নমানের কোম্পানি হাতে চলে যাবে।

বিদেশি স্বাস্থ্য সেবা প্রদানকারী ব্যক্তি কর্তৃক সেবা প্রদান সংক্রান্ত বিষয়ে বলা হয়েছে ‘স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অনুমতি সাপেক্ষে এই আইনের অধীনে প্রণীত বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে বিনামূল্যে বা অর্থের বিনিময়ে চিকিৎসা সেবা প্রদানের উদ্দেশ্যে কোনো হাসপাতালে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদে বিদেশি স্বাস্থ্য সেবা প্রদানকারী ব্যক্তিকে নিয়োগ করা যাইবে’।

এক্ষেত্রে ‘বাংলাদেশ মেডিকেল এবং ডেন্টাল কাউন্সিল’ (বিএমডিসি) থেকে লাইসেন্স প্রাপ্তির প্রয়োজন হবে কি না তা উল্লেখ করা হয়নি। উল্লেখ্য, বিএমডিসি-এর লাইসেন্স প্রাপ্তি ছাড়া কোনো বিদেশি চিকিৎসক মেডিকেল ইথিক্স অনুযায়ী রোগীর সংস্পর্শে আসা সমীচীন নয়।

“স্বাস্থ্য সেবা সংক্রান্ত অভিযোগ: স্বাস্থ্য সেবার অভিযোগ গ্রহণ ও নিষ্পত্তির লক্ষ্যে সরকার প্রতিটি জেলায় ‘স্বাস্থ্য সেবা সুরক্ষা কমিটি’ নামে একটি কমিটি গঠন করিবে” মর্মে একটি উপধারা আছে। কিন্তু, জেলা পর্যায়ে স্বাস্থ্য সেবা সুরক্ষা কমিটি এর মাধ্যমে অভিযোগ গ্রহণ ও নিষ্পত্তি আদৌ সম্ভব কি না তা বিবেচনাযোগ্য।

এই অধ্যাদেশে সেবা গ্রহীতা এবং সেবাপ্রদানকারীর সুরক্ষার বিষয়ে বেশকিছু উল্লেখযোগ্য নির্দেশনা থাকলেও আইনটির নামসহ অনেক ক্ষেত্রে অস্পষ্টতা, ভাষাগত দুর্বোধ্যতা, আইনি ভাষা প্রয়োগের অভাব, সেবা গ্রহীতা এবং সেবাপ্রদানকারীর কার্যকারী সুরক্ষার দিক নির্দেশনার অভাবসহ নানান ধরনের দুর্বলতা প্রত্যক্ষভাবে লক্ষণীয়।

এজন্য রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে একটি সংস্থা গঠন করতে হবে এবং সার্বক্ষণিকভাবে টেলিফোনসহ বিভিন্ন মাধ্যমে অভিযোগ জানানো, অভিযোগ গ্রহণ ও নিষ্পত্তির ব্যবস্থাসহ ফিডব্যাক সিস্টেম থাকতে হবে। তাছাড়া, স্বাস্থ্য সেবা প্রাপ্তির সুযোগ সুবিধা না বাড়িয়ে এ ধারা সংযুক্ত হলে সেবা প্রদানকারী হেনস্থার শিকার হতে পারে। অন্যদিকে, রোগীরাও কোনো প্রতিকার পাবে না। ফলে রোগী-চিকিৎসক সম্পর্ক খারাপ হওয়ার ঝুঁকি আছে।

আবার, একদিকে যেমন বেশকিছু ধারা এবং উপ-ধারা প্রবিধানে স্থান পাওয়ার যোগ্য সেগুলোর অন্তর্ভুক্তিতে অধ্যাদেশটি ভারবাহী হয়েছে, অন্যদিকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বাদ পড়েছে। যেমন প্রেক্ষাপট, যৌক্তিকতা এবং উদ্দেশ্য সুনির্দিষ্টভাবে বর্ণনা করা হয়নি। স্বাস্থ্যকে ‘উন্নয়ন এজেন্ডা’ হিসেবে বিবেচনা করা এবং সে অনুযায়ী গুরুত্ব প্রদান করার বিষয় সংযোজন করা হয়নি।

দেশের সব নাগরিকের জন্য বৈষম্যহীনভাবে এবং স্বল্পমূল্যে গুণগতমানের সব ধরনের স্বাস্থ্য সেবা (প্রোমোটিভ, প্রেভিন্টিভ, কিউরেটিভ, রিহ্যাবিলিটেটিভ এবং প্যালিয়াটিভ) নিশ্চিতকরণে বর্তমান স্বাস্থ্য ব্যবস্থা যেসব চ্যালেঞ্জ এর মুখোমুখি হতে হয় তা মোকাবিলায় প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো এবং অর্থায়ন পদ্ধতির যেসব সংস্কার প্রয়োজন তা সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়নি।

গ্রাম অঞ্চলে সবার জন্য গুণগতমানের প্রমোটিভ, প্রিভেন্টিভ ও কিউরেটিভ সেবা সম্বলিত প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতকরণে প্রাথমিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর বিষয়ে কোনো সুস্পষ্ট উল্লেখ নেই। শহর অঞ্চলে সবার জন্য গুণগতমানের প্রমোটিভ, প্রিভেন্টিভ ও কিউরেটিভ সেবা সম্বলিত প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের কোনো উল্লেখ নেই। সরকারি হাসপাতালে স্বাস্থ্য সেবার পরিধি, গুণগতমান, সহজলভ্যতাসহ সার্বিক উন্নয়নের বিষয়ে কোনো ধারায় উল্লেখ করা হয়নি। যদিও অধ্যাদেশে সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় রেফারাল ব্যবস্থা প্রবর্তনের প্রবিধান তৈরি করার বিষয় উল্লেখ আছে, কিন্তু রেফারাল ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠাকরণের জন্য কোনো সুস্পষ্ট ঘোষণা নেই। তাছাড়া বেসরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় রেফারাল ব্যবস্থা প্রবর্তনের কোনো ধারা সংযোজন করা হয়নি।

এই অধ্যাদেশে মেন্টাল হেলথ, জেরিয়াট্রিক কেয়ার, ইমার্জিং ও ইমার্জিং রোগের প্রতিরোধ এবং প্রতিকার বিষয়ে কোনো কিছু উল্লেখ নেই। নিরাপদ স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতের জন্য গুণগতমানের হেলথ ওয়ার্কফোর্স তৈরির লক্ষ্যে বিএমডিসি শক্তিশালীকরণের মাধ্যমে সব ধরনের ক্লিনিক্যাল হেলথ ওয়ার্কফোর্স-এর মেডিকেল প্র্যাকটিসের সনদ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে লাইসেন্সিং পরীক্ষা চালু এবং প্রতি তিন থেকে পাঁচ বছর পর পর লাইসেন্স নবায়নের পরীক্ষা চালুর বিষয়ে কিছু উল্লেখ করা হয়নি।

হেলথ ওয়ার্কফোর্সের ইন্টার্নশিপ এবং প্রশিক্ষণ ভাতা যুগোপযোগী করার কোনো ধারা সংযোজিত হয়নি। হেলথ ওয়ার্কফোর্সের অনুপ্রেরণার জন্য কোনো বিশেষ ব্যবস্থার কথা উল্লেখ নেই। হেলথ ওয়ার্কফোর্সের সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ‘কন্টিনিউয়াস  প্রফেশনাল ডেভেলপমেন্ট সিস্টেম’ তৈরির কোনো ধারা সংযোজিত হয়নি। স্বাস্থ্য ক্যাডারে নিয়োগের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য সেবা, মেডিকেল শিক্ষা, মেডিকেল প্রশাসন এবং জনস্বাস্থ্যে পৃথক ধারা প্রবর্তনের বিষয়ে কোনো ধারা সংযোজিত হয়নি।

তাছাড়া, বাংলাদেশে জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের মতো হেলথ সার্ভিস কমিশন গঠনের বিষয়টির উল্লেখ নেই। বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স পরিচালনার নীতিমালা নির্ধারণ এবং রেজিস্ট্রেশনের বিষয়ে কোনো ধারা সংযোজিত হয়নি। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দুটি বিভাগকে একত্রীকরণ অথবা পুনর্বিন্যাসের বিষয়ে কোনো ধারা সংযোজিত হয়নি। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন অধিদপ্তরের মধ্যে সমন্বয় সাধনের বিষয়ে কোনো ধারায় উল্লেখ নেই।

নানাভাবে বিভাজিত ও বিক্ষিপ্ত এমআইএস-এর পরিবর্তে একটি শক্তিশালী ডিজিটাল হেলথ ইকোসিস্টেম তৈরি করার লক্ষ্যে সমন্বিত এবং আন্তঃসংযুক্ত এমআইএস প্রবর্তনের বিষয়ে কোনো ধারার উল্লেখ নেই। 

‘সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে সরকার স্বাস্থ্য কার্ড, সরকারি স্বাস্থ্য ইনস্যুরেন্স কাভারেজ ব্যবস্থা প্রবর্তনসহ পৃথক কার্যক্রম, কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করিতে পারিবে’ এই মর্মে একটি ধারা থাকলেও তা বাস্তবায়নের বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়নি।

এছাড়া, তা ব্যবস্থাপনার জন্য যে ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান দরকার (যেমন ন্যাশনাল হেলথ অথরিটি) তার গঠন, কার্যক্রম এবং অর্থায়নের বিষয়ে কোনো কিছু উল্লেখ করা হয়নি। বেসরকারি হাসপাতালে নিয়মিত সেবা কার্যক্রম চালু রাখার নিমিত্তে ক্লিনিক্যাল ওয়ার্কফোর্সের ক্ষেত্রে বিশেষ করে চিকিৎসকের ক্ষেত্রে কত শতাংশ নিজস্ব জনবল থাকতে হবে তা উল্লেখ করা হয়নি। রোগীর সুরক্ষা নিশ্চিতে অপ্রয়োজনীয় অপারেশন এবং অপ্রয়োজনীয় আইসিইউ-এর ব্যবহার রহিত করার জন্য কোনো সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থার উল্লেখ নেই।

ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরকে শক্তিশালীকরণের বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে কোনো ধারা সংযোজিত হয়নি। ওষুধের দাম নির্ধারণ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য অন্যান্য দেশের মতো ‘ন্যাশনাল ফার্মাসিউটিকাল প্রাইসিং অথোরিটি’ গঠনের বিষয়ে কোনো ধারাতে কিছু উল্লেখ নেই। ইডিসিএল এবং সিএমএসডিকে শক্তিশালীকরণের বিষয়ে কিছু উল্লেখ নেই।

অপ্রয়োজনীয় ওষুধ প্রেসক্রিপশন রহিত করার জন্য কোনো প্রেসক্রিপশন অডিট ব্যবস্থার কথা উল্লেখ করা হয়নি। সরকারি হাসপাতালে নিরবচ্ছিন্ন ওষুধ সরবরাহ নিশ্চিতকরণ এবং ওষুধের গুণগতমান রক্ষার জন্য ওষুধের আধুনিক স্টোরেজ ফেসিলিটিসহ সামগ্রিক সাপ্লাই চেইন উন্নত করার বিষয়ে কিছু উল্লেখ নেই।

রোগীর সুরক্ষা নিশ্চিতে অপ্রয়োজনীয় অপারেশন এবং অপ্রয়োজনীয় আইসিইউ-এর ব্যবহার রহিত করার জন্য কোনো সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থার উল্লেখ নেই।

প্রশিক্ষণ ও গবেষণার ক্ষেত্রে রিপোর্ট, হেলথ ইকোনমিক্স ইউনিট এবং বিএমআরসির মধ্যে সমন্বয় সাধনের বিষয়ে কোনো কিছুর উল্লেখ নেই। গবেষণার ফলাফল এবং সুপারিশসমূহ সঠিকভাবে বাস্তবায়নের জন্য কোনো কিছু উল্লেখ নেই। পাবলিক হেলথ এডুকেশনের ক্ষেত্রে দ্বৈততা দূরীকরণের লক্ষ্যে নিপসম, আপিএইচ এবং আইপিএসএনকে একই ছাতার নিচে আনার বিষয়ে কোনো উল্লেখ নেই।

এসব বিষয় অন্তর্ভুক্তকরণের মাধ্যমে আইনটি পাস করে তা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা হলে দেশে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার যুগান্তকারী পরিবর্তনের আশা করা যায়। আর আইনটি বর্তমান অবস্থায় পাস করা হলে দেশের দীর্ঘ আইনের তালিকায় আরেকটা আইন যুক্ত হবে, কিন্তু কাজের কাজ তেমন কিছু হবে না।

বরং এই আইনের শিরোনামে ‘স্বাস্থ্য সেবা’ শব্দদ্বয় থাকায় দেশের সব নাগরিকের জন্য বৈষম্যহীনভাবে এবং স্বল্পমূল্যে গুণগতমানের সব ধরনের স্বাস্থ্য সেবা (প্রোমোটিভ, প্রেভিন্টিভ, কিউরেটিভ, রিহ্যাবিলিটেটিভ এবং প্যালিয়াটিভ) নিশ্চিতকরণে ‘জাতীয় স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন’ নামে আরেকটা আইন পাসের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াবে।

তাই এ ক্ষেত্রে দুটি উপায় আছে। একটি হলো—এই আইনে ওপর বর্ণিত অসম্পূর্ণ, দুর্বল এবং অস্পষ্ট দিক আছে তা বর্তমান যে বিশেষজ্ঞ প্যানেল আছে তাদের মাধ্যমে অথবা নতুন কোনো টাস্কফোর্স গঠনের মাধ্যমে বিভিন্ন মহলের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে চূড়ান্ত করা। অন্যটি হলো—এই আইনটি বিভিন্ন মহলের সাথে আলোচনার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন সাপেক্ষে ‘স্বাস্থ্য সেবা’ গ্রহীতা এবং স্বাস্থ্য সেবা প্রদানকারীর সুরক্ষা আইন, ২০২৪ নামে চূড়ান্ত করা।

দ্বিতীয় পথটি গ্রহণ করা হলে সর্বজনীন স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতে ‘জাতীয় স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন’ নামে আরেকটা আইন তৈরির উদ্যোগও গ্রহণ করতে হবে। আশা করি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এসব পরামর্শ আমলে নিয়ে অগ্রসর হবেন।

ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ ।। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক এবং আহবায়ক, অ্যালায়েন্স ফর হেলথ রেফর্মস বাংলাদেশ (এএইচআরবি)

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *