প্রেম করার অপরাধে গাছে বেঁধে কিশোরকে মারধর

প্রেম করার অপরাধে গাছে বেঁধে কিশোরকে মারধর

রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলায় প্রেমের সম্পর্কের জের ধরে এক কিশোরকে বেধড়ক পেটানোর অভিযোগ উঠেছে। মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের শিকার যুবকের নাম রাজু মিয়া (১৭)। সে উপজেলার শাল্টি গোপালপুর ইউনিয়নের দুর্গামতি গ্রামের সাহেব আলীর ছেলে।

রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলায় প্রেমের সম্পর্কের জের ধরে এক কিশোরকে বেধড়ক পেটানোর অভিযোগ উঠেছে। মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের শিকার যুবকের নাম রাজু মিয়া (১৭)। সে উপজেলার শাল্টি গোপালপুর ইউনিয়নের দুর্গামতি গ্রামের সাহেব আলীর ছেলে।

শনিবার (১৯ অক্টোবর) ঘটে যাওয়া একটি ভিডিও ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।

সেই ভিডিওতে দেখা যায়, কিশোর রাজুকে একটি আম গাছের সঙ্গে বেঁধে মধ্যযুগীয় কায়দায় বেধড়ক পেটাচ্ছেন কিছু লোকজন। সেখানে দুইজন গ্রাম পুলিশকেও দেখা যায়। কিশোরের হাত ও ঘাড়ে রশি দিয়ে বাঁধা ছিল। কিন্তু এতে কোনো রকম বাধা দেয়নি গ্রাম পুলিশের কর্মীরাও।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নির্যাতনের শিকার কিশোর পড়ালেখা বাদ দিয়ে তার বাবার সঙ্গে কৃষি কাজ করেন। প্রতিবেশী এক মেয়ের সঙ্গে সম্প্রতি তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এ নিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে বিরোধ চলছিল। এরই জের ধরে শনিবার নিজ বাড়ির সামনে থেকে কিশোরকে ধরে নিয়ে যায় মেয়েটির বাড়ির লোকজন। পরে তাকে বাড়ির আঙিনায় আমগাছের সঙ্গে রশি দিয়ে বেঁধে ফেলা হয়। একপর্যায়ে এলাকার আবদুল খালেক, করিম মিয়া, রবিউল, সেহেরুল, মোস্তা, আনারুল, রউফ, তালেব, কুদ্দুস, মিজানসহ ১৫-২০ জন লাঠি দিয়ে তাকে বেধড়ক মারধর করেন। পরে অসুস্থ অবস্থায় রাজুকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। পুলিশ তাকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দিয়ে কারাগারে পাঠায়।

ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর রোববার (২০ অক্টোবর) গণমাধ্যমকর্মীরা ঘটনাস্থলে গেলে এলাকার শতাধিক বাসিন্দা কিশোরের বাড়ির সামনে জড়ো হন। এ সময় তার স্বজনরা বিলাপ করতে থাকেন।

রাজুর বাবা সাহেব আলী জানান, তার ছেলের কোনো দোষ নেই। মেয়েপক্ষের লোকজন অন্যায়ভাবে তার ছেলেকে খুব মেরেছে। তিনি এ ঘটনার ন্যায্য বিচার দাবি করেছেন।

কিশোরের ৮০ বছর বয়সী দাদি জানান, হামার নাতিক আনি দ্যাও। বিনা দোষে ওরা ছইলট্যাক এংকা (এরকম) করি গরুর মতন ডাংগাইলো (মারল)।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক নারীর ভাষ্যমতে, ছেলেটার কোনো দোষ নেই। তিনি শুনেছেন মেয়েটির সঙ্গে কিশোরের প্রেমের সর্ম্পক ছিল। এ অপরাধে তাকে ধরে নিয়ে মারধর করা হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, মেয়েটির বাবা গায়ের জোরে লোকজন ভাড়া করে ছেলেটিকে ধরে খুব মারধর করেছেন। তারা গাছের সঙ্গে রশি দিয়ে বেঁধে অমানবিক নির্যাতন চালিয়েছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মেয়েটির বাবা হাফিজুর রহমান জানান, ছেলেটি তার মেয়েকে বারবার বিরক্ত করে আসছিল। তাই তাকে ধরে শাসন করেছেন তিনি।

সেই কিশোর অপরাধ করে থাকলে আইনের সহযোগিতা না নিয়ে গাছের সঙ্গে বেঁধে মারধরের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে, তিনি কোনো জবাব দেননি। আবদুল খালেক, করিমসহ অন্যরাও একই ধরনের কথা বলেছেন।

মিঠাপুকুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফেরদৌস ওয়াহিদ জানান, ছেলেটিকে গাছের সঙ্গে বেঁধে মারধর করা ঠিক হয়নি। তাকে রক্ষার জন্য আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয়। পরে ১৫১ ধরায় আদালতে পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এফআরএস

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *