সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশে হত্যা, ১২৬ জনের নামে মামলা

সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশে হত্যা, ১২৬ জনের নামে মামলা

কুষ্টিয়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে মাথায় গুলি করে বাবলু ফারাজী (৫৮) নামে এক হকারকে হত্যার ঘটনায় মামলা করা হয়েছে। মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে নির্দেশদাতা হিসেবে আসামি করা হয়েছে।

কুষ্টিয়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে মাথায় গুলি করে বাবলু ফারাজী (৫৮) নামে এক হকারকে হত্যার ঘটনায় মামলা করা হয়েছে। মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে নির্দেশদাতা হিসেবে আসামি করা হয়েছে।

এই মামলায় কুষ্টিয়ার সাবেক তিন সংসদ সদস্য, কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পলাশ কান্তি নাথ, কুষ্টিয়া মডেল থানার ওসি মাহফুজুল হকসহ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাকর্মী ও জনপ্রতিনিধিসহ মোট ১২৬ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। মামলায় অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে আরও ৪০/৫০ জনকে।

সোমবার (১৯ আগস্ট) বিকেলে নিহত বাবুলের ছেলে সুজন মাহমুদ বাদী হয়ে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদা সুলতানার আদালতে মামলাটি করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ওই আদালতের পেশাদার মতিয়ার রহমান।

মতিয়ার রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, নিহতের ছেলে সুজন মামলা করেছেন। বিচারক অভিযোগটি আমলে নিয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছেন। পিবিআই অভিযোগের অনুসন্ধান করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করবে।

গত ৫ অাগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে বিকেল ৩টার দিকে শহরের থানার মোড় এলাকায় বাবুলকে গুলি করে ও এলোপাতাড়ি মারপিট করে হত্যা করা হয়। সে শহরের বিভিন্ন জায়গায় ফেরি করে গামছা, বিছানার চাদর ও লুঙ্গি বিক্রি করতেন। বাবুল কুষ্টিয়া সদর উপজেলার হরিপুর গ্রামের মৃত নওশের আলীর ছেলে।

এ ঘটনায় সোমবার বিকেলে করা হত্যা মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, কুষ্টিয়া-২ (মিরপুর-ভেড়ামারা) আসনে এমপির কামারুল আরেফিন, কুষ্টিয়া-৪ (খোকসা-কুমারখালী) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুর রউফ, সদর উপজেলার চেয়ারম্যান ও শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান আতা, কুষ্টিয়ায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পলাশ কান্তি নাথ, কুষ্টিয়া মডেল থানার ওসি মাহফুজুল হক, কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সদর উদ্দিন খান, সাধারণ সম্পাদক আজগর আলী, জাহিদ হোসেন জাফর, শামছুজ্জামান অরুন, বাবুল আক্তার, মিনহাজুল আবেদীন দ্বীপ, কুষ্টিয়া মডেল থানার ওসি (তদন্ত) শ্রী দিপেন্দ্র নাথ সিংহ, এসআই আসাদুজ্জামান আসাদ, সাহেব আলী, মোস্তাফিজুর রহমান, এএসআই উজ্জল হোসেন, জেলা যুবলীগের সভাপতি রবিউল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল হক স্বপন, অজয় কুমার সুরেখা, বিশ্বনাথ সাহা বিশু, রমেশ ঠাকুর, মতিউর রহমান মজনু, আনিছুর রহমান আনিছ, পারভেজ আনোয়ার তনু, আলী জিন্নাহ, কামাল ঠাকুর, অমূল্য, আরশাদ আলীসহ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাকর্মী ও জনপ্রতিনিধিসহ মোট ১২৬ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

নিহতের ছেলে সুজন এজাহারে উল্লেখ করেছেন, তার বাবা বাবলু রাস্তাঘাট, হাটে-বাজারে ঘুরে গামছা, লুঙ্গি, বিছানার চাদর ইত্যাদি বিক্রয় করিয়া জীবিকা নির্বাহ করতেন। আসামিদের পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী এক নম্বর আসামি সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের নির্দেশনায় ২ থেকে ১২ নম্বর আসামিদের হুকুমে অন্যান্য আসামিরা  আগ্নেয়াস্ত্র, রামদা, হাসুয়া, চাইনিজ কুড়াল, বেঁকি, হাতুড়ি, লোহার রড, বাঁশের লাঠি, কাঠের বাটাম, ইট-পাটকেলসহ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও অসহযোগ আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে আক্রমণ করতে থাকে। হকার বাবলু ব্যবসার কাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে বিকেল ৩টা ২০ মিনিটের দিকে থানা মোড়ের পশ্চিম পার্শ্বে পদ্মা প্রিন্টার্সের সামনের গলিতে অসহযোগ আন্দোলনকারী ও আসামিদের সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে। ১২ থেকে ১৮ নম্বর আসামিরা তাদের কাছে থাকা বিভিন্ন প্রকার আগ্নেয়াস্ত্র দ্বারা আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে গুলি করতে থাকে। অন্যান্য আসামিরা তাদের বিভিন্ন প্রকার দেশীয় অস্ত্র দ্বারা এবং ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে আন্দোলনকারীদের ওপর তাণ্ডব চালাতে থাকে। এ সময় হকার বাবলুকে লক্ষ্য করে আসামি এস. আই সাহেব আলী গুলি করে। বাবলুর মাথার ডান পাশ দিয়ে গুলি ঢুকে বাঁ পাশ দিয়ে বের হয়ে গেলে সে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। পরবর্তীতে পরিস্থিতি একটু শান্ত হলে পার্শ্ববর্তী সাক্ষীরা বাবলুকে উদ্ধার করে রিকশাযোগে হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে দায়িত্বরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এজাহারে উল্লিখিত অন্য আসামিরা হলেন, হাজী এনামুল হক, মানব চাকী, ওমর ফারুক, শেখ হাফিজ চ্যালেঞ্জ, ইয়াসির আরাফাত তুষার, হারুন অর রশিদ হারু, আব্দুল কাদের মোল্লা, আবু বক্কর সিদ্দীকি, খাকসার আলী জোয়াদ্দার, তাইজাল আলী খান, নিপুনুজ্জামান শান্তনু, রবিউল ইসলাম, অন্নম হোসেন, অমি, মানজিয়ার রহমান চঞ্চল, মামুনার রশিদ ওরফে টাইগার মামুন, আব্বাস উদ্দিন লাদেন, মিঠুন আলী, নাজমুল সাকিব, হাসিব কোরাইশী, শাহিনুর ইসলাম ফানি, বিপুল হোসেন, আতাই চোর, দ্বীন ইসলাম রাসেল, রুহুল আজম, কামাল জোয়াদ্দার, আশিক, জুয়েল আহম্মেদ রনি, শেখ আরিফুর রহমান আরিফ,  মীর অভি, সাদ আহম্মেদ, নাসিম আহম্মেদ (মালেক),  মজিদ মেম্বার, মেহেদী, মমিজ, পল্লব, আফু শেখ, মিলন মন্ডল, ফিজু শেখ, এনামূল, হান্নান, সেলিম, কাজল, হালিম, পিঠু, সোহেল রানা, ফরহাদ, আব্দুল মালেক, মিন্টু, আজিজ মন্ডল, সুরুজ্জামান সুজন, হারুন, শহিদ মন্ডল, রাশিদুল, মন্টু মন্ডল, তাজন, শেখ মো. আরব আলী, রিপন, আমিরুল, আমিরুল, ঈমানুর, জেমস খান, আরিফ হোসেন, সাগর, ওসমান, সালাউদ্দিন খান তারেক, হারুন-অর-রশিদ হারুন, জহুরুল ইসলাম, হাসান আলী, শাহাজুল হক, তারেক আজিজ টিক্কা, ওমর আলী, রফিক কমিশনার, সোহেল রানা পবন,  রতন, পিপুল হোসেন, শামীম উল ইসলাম শামা, আঃ মজিদ, রবিউল ইসলাম, মোয়াজ্জেম হোসেন, মনিরুল ইসলাম, আব্দুর রহমান, সুরুজ মোল্লা, তরিকুল ইসলাম,  আল মাসুম মোরশেদ শান্ত, রহিম উদ্দিন খান, আতিকুল ইসলাম আতিক, সেলিম হোসাইন, ওহিদুল, আসাদুল, রিফাউল, সিরাজ মন্ডল, মুসা আহম্মেদ, মিলন শেখ, আব্দুল আলিম, কামরুজ্জামান নাহিদ।

রাজু আহমেদ/এএমকে

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *