অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে জাতীয় নির্বাচনের একটি রোডম্যাপ ঘোষণা করার দাবি জানিয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। তারা বলছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী তাদের সংস্কার কার্যক্রমের ধরন ও প্রক্রিয়া কী হবে এবং কতদিনের মধ্যে সংস্কার কার্যক্রম শেষ করবে, তা অতিদ্রুত প্রকাশ করার আহ্বান জানাচ্ছি।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে জাতীয় নির্বাচনের একটি রোডম্যাপ ঘোষণা করার দাবি জানিয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। তারা বলছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী তাদের সংস্কার কার্যক্রমের ধরন ও প্রক্রিয়া কী হবে এবং কতদিনের মধ্যে সংস্কার কার্যক্রম শেষ করবে, তা অতিদ্রুত প্রকাশ করার আহ্বান জানাচ্ছি।
দলটি বলছে, দেশ-জনগণের কল্যাণে একটি স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরি এবং অর্থনীতি পুনর্গঠনে আমরা সরকারকে সহযোগিতা করে যেতে চাই।সেক্ষেত্রে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে দেশের শান্তিকামী জনগণ এবং ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী ছাত্র-জনতা ও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আস্থার পরিবেশ তৈরি করতে হবে।
মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টন দলীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন দলের নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিম।
তিনি বলেন, হাজারো ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে একটি সফল ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ইতিহাসের জঘন্যতম ফ্যাসিবাদী স্বৈরশাসকের পতন পরবর্তী দেশের বিরাজমান পরিস্থিতি ও বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করেছে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা আন্তর্জাতিক খ্যাতিমান ব্যক্তিত্ব নোভেলজয়ী ড. মোহাম্মদ ইউনূস গত ১৮ আগস্ট বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে ব্রিফিংয়ে বলেছেন, পাঁচটি খাতে সংস্কারের পর জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন করবেন। নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন, বিচার বিভাগ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গণমাধ্যম এই পাঁচটি ক্ষেত্রে আমূল এবং ব্যাপক সংস্কারের কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা। আমরাও মনে করি এসব প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাপক সংস্কার প্রয়োজন। কারণ, বিগত সরকার অবৈধভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকতে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে ফেলেছে। তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এসব প্রতিষ্ঠানগুলো কতদিনের মধ্যে সংস্কার সম্পন্ন করবে তা নির্ধারিত হওয়া প্রয়োজন।
‘ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ প্রত্যাশা করে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তাদের সংস্কার কার্যক্রমের ধরন ও প্রক্রিয়া কী হবে এবং কতদিনের মধ্যে সংস্কার কার্যক্রম সম্পন্ন করবে, তা অতিদ্রুত প্রকাশ করবে এবং জাতীয় নির্বাচনের একটি রোডম্যাপ ঘোষণা করবে।’
জুলাই বিপ্লব এবং ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরসরকারের পেটোয়া বাহিনী পুলিশ, বিজিবি এবং আওয়ামী লীগ, যুব লীগ, ছাত্র লীগের নৃশংস আক্রমণে সহস্রাধিক ছাত্র-জনতা শাহাদাত বরণ করেছেন। প্রায় ৩০ হাজার আহত হয়েছেন। আমরা সরকারের প্রতি আহতদের দ্রুত চিকিৎসার যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, পতিত ফ্যাসিস্ট ও স্বৈরাচার আওয়ামী সরকার নির্বাচন কমিশন এবং প্রশাসনকে ব্যবহার করে ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি ৩টি ভুয়া জাতীয় নির্বাচন করেছে। এসব একতরফা, ভুয়া, পাতানো ও ডামি নির্বাচনের মাধ্যমে তারা তাদের অবৈধ ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করেছে। যারা তাদের এসব অবৈধ ও প্রহসনের নির্বাচনে সহযোগিতা করে আওয়ামী লীগকে অবৈধভাবে ক্ষমতায় থাকার সুযোগ করে দিয়েছে তারাও সমান অপরাধী।
গণ দুশমন, গণহত্যাকারী, লুটেরা, দুর্নীতিবাজ আর ভোট চোরেরা যাতে আগামীতে পুনর্বাসিত হতে না পারে তা নিশ্চিত করতে হবে। সে লক্ষ্যে তিনি ৭ দফা দাবি উত্থাপন করেন।
১. গ্রহণযোগ্য তদন্ত কমিশন ও স্বতন্ত্র ট্রাইব্যুনাল গঠন করে জুলাই গণহত্যাকাণ্ডের বিচার করতে হবে। একই সঙ্গে গত ১৬ বছরে সংগঠিত সব রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক হত্যাযজ্ঞ, গণহত্যা, গুম ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিচার করতে হবে। এক্ষেত্রে যে সব ব্যক্তি বা সংগঠন দোষী সাব্যস্ত হবে, তাদের রাজনীতি ও নির্বাচন থেকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ করতে হবে।
২. তদন্ত সাপেক্ষে বিগত বছরের সব দুর্নীতিবাজ ও বিদেশে অর্থ পাচারকারীদের সব সম্পত্তি ক্রোক করে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা করতে হবে এবং বিদেশে পাচার করা টাকা ফেরত আনবার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। বিগত বছরে যারা ক্ষমতায় ছিলেন তাদের সম্পদের হিসাব দিতে হবে। সব দুর্নীতি ও টাকা পাচারের শ্বেতপত্র প্রকাশ করতে হবে।
৩. আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রশাসন, বিচার বিভাগসহ প্রজাতন্ত্রের যে সব কর্মচারী আইন, সংবিধান, শপথ লঙ্ঘন করে অপেশাদার আচরণ করেছেন তাদের বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।
৪. দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর চিন্তা-চেতনা ও অনুভূতির বিরুদ্ধে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না।
৫. নির্বাচন কমিশনকে পুনর্গঠন করতে হবে এবং অবাধ, সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন (পিআর) পদ্ধতি চালু করতে হবে।
৬. আওয়ামী দুঃশাসনের বিগত ১৬ বছরে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এদেশের সাধারণ শিক্ষাখাতের মান ও নৈতিকতা। এই ক্ষতি দ্রুত সময়ের মধ্যে কাটিয়ে ওঠার লক্ষ্যে দেশপ্রেমিক শিক্ষাবিদ ও উলামায়ে কেরামের সমন্বয়ে একটি জাতীয় শিক্ষাকমিশন গঠন করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
৭. গ্রাম পুলিশকে জাতীয়করণ করে তাদের সম্মানজনক বেতন ও ভাতার ব্যবস্থা করতে হবে।
তিনি বলেন, ছাত্র-জনতার এই আন্দোলন হত্যা, লুটতরাজ ও অবৈধ ক্ষমতা প্রয়োগের বিরুদ্ধে ছিল। শিল্প ও কল-কারখানা ধ্বংসের বিরুদ্ধে ছিল না, ছিল না সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ। সেজন্য আমরা বিশ্বাস করি, যারা লুটতরাজ, দখলদারি-অরাজকতা ও সংখ্যালঘুদের ওপর কোনো রকম হুমকি সৃষ্টিকারী কার্যকলাপে লিপ্ত, তারা এই আন্দোলনে সম্পৃক্ত কেউ না বরং তারা সুযোগ সন্ধানী। সুতরাং আমরা বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে এ সব অরাজকতা সৃষ্টিকারীদের প্রতি কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান করছি।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনে করে, দেশের সব নাগরিক সমান মর্যাদা ও অধিকার প্রাপ্ত। ধর্মের কারণে কাউকে আঘাত করা বা কাউকে প্রতিপক্ষ বানানোকে ইসলাম ও রাষ্ট্রীয় আইনও সমর্থন করে না। আমাদের আন্দোলনের চেতনাও তা সমর্থন করে না। সেজন্য বলবো, দেশের সংখ্যালঘুদের প্রতিটি উপাসনালয়ে ও ধর্মীয় স্থাপনায় সিসি ক্যামেরার ব্যবস্থা করুন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন দলের মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, আমিনুল ইসলাম ও কে এম আতিকুর রহমান।
জেইউ/এসএম