শিশুদের রং-তুলিতে গণহত্যার প্রতিচ্ছবি

শিশুদের রং-তুলিতে গণহত্যার প্রতিচ্ছবি

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন থেকে গড়ে ওঠা ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের স্মরণে শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও দুই দিনব্যাপী চিত্রপ্রদর্শনীর আয়োজন করেছে চারুকলা শিল্পীসমাজ রংপুর।

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন থেকে গড়ে ওঠা ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের স্মরণে শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও দুই দিনব্যাপী চিত্রপ্রদর্শনীর আয়োজন করেছে চারুকলা শিল্পীসমাজ রংপুর।

শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৩টায় রংপুর টাউন হল চত্বরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও বৈষম্যবিরোধী সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সহযোগিতায় এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। এতে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় দেড় শতাধিক শিশুশিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে।

‘২০২৪ এর গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের স্মরণ’ শিরোনামে এক ঘণ্টার এই চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় ছোট্ট শিশুরা রং-তুলির আঁচড়ে ফুটিয়ে তুলেছে ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগ, পুলিশি নির্যাতন ও গুলিবর্ষণসহ শহীদ আবু সাঈদ-মুগ্ধদের বীরত্বগাঁথা জীবন উৎসর্গের প্রতিচ্ছবি। শিশুদের রং আর তুলির সমন্বয়ে হাতের নিখুঁত ছোঁয়ায় মুহূর্তেই ফুটে উঠে এসব চিত্রকর্ম। শিশুদের কেউ কেউ রং-তুলিতে তুলে ধরে নতুন বাংলাদেশের সোনালি সকাল, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বৈচিত্র্যময় চিত্রসহ রূপসি গ্রাম-বাংলা।

নগরীর সফুরা ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী ফারহানা জামান তার হাতের ছোঁয়ায় এঁকেছে লাল-সবুজের ছোঁয়ায় গ্রামীণ প্রতিচ্ছবি। অপর আরেক প্রতিযোগী ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী আরণ্যক পাল প্রাচুর্য ফুটিয়ে তুলেছে শহীদ মুগ্ধের ছবি। কারও রং-তুলিতে জুলাই-আগস্ট গণহত্যাসহ শহীদ আবু সাঈদের হাত উঁচিয়ে প্রাণ উৎসর্গের প্রতিচ্ছবি। যেন একেকটি ছবিতে শিশুরা শুধু তাদের রং-তুলিতে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের প্রতিচ্ছবিই নয় তুলে ধরে ওদের মনে জায়গা করে নেওয়া চব্বিশের চেতনাকেও। এ আয়োজনে অংশগ্রহণ করা শিশুরা বেশ উচ্ছ্বসিত ছিল।

ঘণ্টাব্যাপী চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা শেষে সন্ধ্যায় অংশগ্রহণকারী শিশুদের মাঝে সনদপত্র বিতরণ করা হয়। এর আগে বিকেল ৩টায় শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও চিত্রপ্রদর্শনীর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন শহীদ তাহির জামান প্রিয়’র মা শামসি আরা জামান কলি। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন শিল্পী ও সংগঠক জহির আলম নয়ন, অ্যাডভোকেট পলাশ কান্তি নাগ, হৃদয় জে জে প্রমুখ।

সনদ বিতরণ পর্বে বক্তব্যের সময় কান্নাজড়িত কণ্ঠে শহীদ তাহির জামান প্রিয়’র স্মৃতিচারণ করেন মা শামসি আরা জামান কলি। তিনি বলেন, ছাত্র আন্দোলনে কত নির্মমতার প্রতিচ্ছবি আমরা দেখেছি, তা কখনো ভুলে যাওয়ার মতো নয়। আমার ছেলে প্রিয়কে পুলিশ গুলি করে হত্যা করেছে। মৃত্যু নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ওকে অমানবিক কষ্ট দিয়েছে। আমার ছেলের মৃত্যুর ভিডিও ফুটেজ দেখে আমি বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। কয়েক দিন নীরব ছিলাম। কিন্তু এক প্রিয়কে হারিয়ে আমি শত শত ছেলে-মেয়ের মা হয়েছি। আজ আমাকে শহীদের মা বলে সম্বোধন করা হয়। শুধু আমার সন্তানই নয়, সকল শহীদ পরিবারের পক্ষ থেকে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে রাষ্ট্রযন্ত্র নিয়ন্ত্রিত গণহত্যার বিচার চাই।

আয়োজক সংগঠক চারুকলা শিল্পীসমাজের প্রতিষ্ঠাতা ভাস্কর আহসান আহমেদ বলেন, নানা আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে সারা দেশে জুলাই-আগস্টের শহীদদের স্মরণ করা হচ্ছে। আমরা রংপুরেও এই আয়োজনের মধ্য দিয়ে নতুন প্রজন্মের শিশুদের মধ্যে চব্বিশের চেতনার বিকাশ ঘটাতে চাই। শিশুরা শহীদ আবু সাঈদ-মুগ্ধদেরকে ওদের রং-তুলিতে তুলে এনেছে। এসব ছবি আমাদের প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করবে। চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার পাশাপাশি দুই দিনব্যাপী চিত্রপ্রদর্শনীর ব্যবস্থাও করেছি। প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত টাউন হল চত্বরে এ প্রদর্শনী চলবে। এতে শিশুদের পাশাপাশি বড়দের আঁকা চিত্রকর্ম প্রদর্শিত হবে।

চিত্রাঙ্গন প্রতিযোগিতা সম্পর্কে শিল্পী ও সংগঠক জহির আলম নয়ন ও পলাশ কান্তি নাগ বলেন, এই আয়োজনে ছোট্ট ছোট্ট সোনামণিদের হাতের নিখুঁত ছোঁয়ায় আমাদের ছাত্র-জনতার বিজয়ের প্রতিচ্ছবিসহ শহীদদের নানা প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে। তাদের অঙ্কনকৃত এসব ছবি দেখে সত্যিই নিজেকে গর্বিত মনে হচ্ছে যে আমাদের শিশুরাই এই নতুন বাংলাদেশ গড়বে। ওদের রং-তুলিতে ধর্ম-বর্ণ-জাত-পাত নেই বরং ওরা সম্প্রীতির ছবি অঙ্কন করেছে। শিশুদের আঁকা প্রতিটি ছবি সুন্দর আগামীর প্রতিচ্ছবি। বৈষম্যমুক্ত সমতা ও ন্যায্যতার বাংলাদেশ নতুন বিনির্মাণে এই শিশুরা অগ্রণী ভূমিকা রাখবে বলে আশাবাদী তারা।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এমজেইউ

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *