লালমনিরহাটে কমতে শুরু করেছে তিস্তার পানি

লালমনিরহাটে কমতে শুরু করেছে তিস্তার পানি

উজানের পাহাড়ি ঢল আর কয়েকদিনের টানা ভারী বৃষ্টিতে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ বেড়ে বিপৎসীমার ২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও দুপুরের দিকে কমতে শুরু করেছে। বন্যা পানি তলিয়ে গেছে লালমনিরহাট সান্তাহার রেলরুটের অর্ধকিলোমিটার পথ।  ফলে দিনভর ঝুঁকি নিয়েও ধীর গতিতে ট্রেন চলাচল করেছে। একইসঙ্গে জরুরিভিত্তিতে সংস্কার করা হয় রেললাইন। আপাতত রেল যোগাযোগ স্বাভাবিক রয়েছে।

উজানের পাহাড়ি ঢল আর কয়েকদিনের টানা ভারী বৃষ্টিতে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ বেড়ে বিপৎসীমার ২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও দুপুরের দিকে কমতে শুরু করেছে। বন্যা পানি তলিয়ে গেছে লালমনিরহাট সান্তাহার রেলরুটের অর্ধকিলোমিটার পথ।  ফলে দিনভর ঝুঁকি নিয়েও ধীর গতিতে ট্রেন চলাচল করেছে। একইসঙ্গে জরুরিভিত্তিতে সংস্কার করা হয় রেললাইন। আপাতত রেল যোগাযোগ স্বাভাবিক রয়েছে।

রোববার (২৯ সেপ্টেম্বর) বিকেলে বন্যার পানিতে ডুবে থাকা রেললাইন সংস্কার করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। তবে বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে ট্রেনচলাচল বিঘ্নিত হতে পারে বলে জানিয়েছে রেলওয়ে বিভাগ।

রোববার বিকেল ৩টায় হাতীবান্ধা উপজেলার দোয়ানীতে দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ৭ মিটার। যা বিপৎসীমার ৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয় (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ১৫ মিটার)। এর আগে সকাল ৬টায় বিপৎসীমার ২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।

বন্যা সতর্কীকরণকেন্দ্র জানায়, শনিবার দুপুর থেকে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে তিস্তা নদীর ডালিয়া পয়েন্টের পানি। রোববার সকাল ৬টায় বিপৎসীমার ২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। পরবর্তীতে দুপুর নাগাদ কমে বিপৎসীমার নিচে নেমে আসে পানিপ্রবাহ। বিকেল ৩টায় বিপৎসীমার ৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে তিস্তা নদীর পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয় ডালিয়া পয়েন্টে। তবে লালমনিরহাটের পাঁচটি উপজেলায় এখনো পানিবন্দি হয়ে রয়েছে প্রায় ২৫ হাজার পরিবার। প্রতিমুহূর্তে বাড়ছে এর সংখ্যা। আতঙ্কে রয়েছে তিস্তাপাড়ের মানুষ।

পানির চাপ বেড়ে যাওয়ায় লালমনিরহাট সান্তাহার রেলরুটের লালমনিরহাট সদর উপজেলার গোকুন্ডা ইউনিয়নের রতিপুর এলাকায় অর্ধকিলোমিটার রেলপথ ডুবে যায়। এ সময় পানির স্রোতে ভেসে যায় রেল লাইনের পাথর। ফলে দিনভর ঝুঁকি নিয়ে ধীর গতিতে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রেখেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। একইসঙ্গে জরুরিভিত্তিতে সংস্কার করা হয় রেল লাইন। আপাতত রেল যোগাযোগ স্বাভাবিক রয়েছে।

টানা দুই দিনের বন্যায় নদী তীরবর্তী এলাকার বেশ কিছু রাস্তাঘাট ব্রিজ-কালভার্ট ভেঙে গেছে পানির তোরে।  আমন ধান ও বিভিন্ন সবজিক্ষেত ডুবে আছে বন্যার পানিতে। দীর্ঘ সময় ডুবে থাকলে এসব ফসলের মারাত্মক ক্ষতির শঙ্কা করছেন চাষিরা। একইসঙ্গে বন্যার পানির তোড়ে ভেসে গেছে বেশকিছু পুকুরের মাছ। মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে সলেডি স্প্যার বাঁধসহ বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধগুলো। শনিবার রাতভর সলেডি স্প্যার বাঁধ-২-এর উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়। বাঁধ ভেসে যাওয়ায় শঙ্কায় আতঙ্কিত হয়ে পড়ে ভাটিতে থাকা শত শত পরিবার।  স্থানীয় বাসিন্দারা রাতে বালুভর্তি বস্তা ফেলে রক্ষা করেন।

গবাদি পশু পাখি নিয়েও নিদারুণ কষ্টে পড়েছেন খামারি ও সাধারণ কৃষকরা। ঘর বাড়িতে পানি প্রবেশ করায় রাস্তা বা বাঁধের উঁচু স্থানে পলিথিন সাঁটিয়ে রাখা হয়েছে এসব গৃহপালিত পশু-পাখি। অনেক পরিবার বাড়ি থেকে উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। বড় বিপাকে পড়েছেন শিশু-বৃদ্ধ আর প্রতিবন্ধীরা।

টয়লেট ডুবে যাওয়ায় প্রসব পায়খানা করতে বড় বিপাকে পড়েছেন বন্যাকবলিত এলাকার নারীরা। পুরুষ বাহিরে সেড়ে নিতে পারলেও বিপদে পড়েন নারীরা। বন্যাকবলিতদের জন্য জেলা প্রশাসন থেকে ত্রাণ বরাদ্দ দেওয়া হলেও তা এখন পর্যন্ত বন্যাকবলিতদের মাঝে বিতরণ শুরু হয়নি। খুব দ্রুত ত্রাণ বিতরণ শুরু হবে বলেও জেলা প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছে।

সলেডি স্প্যার বাঁধ-২ এলাকার সোবাহান নামে একজন বলেন, সলেডি স্প্যার বাঁধে ব্রিজ অংশের ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়েছে। এ সময় বাঁধ কাঁপছিল। আমরা ভয় পেয়েছিলাম যে, স্প্যার বাঁধ বুঝি ভেসে যায়। স্থানীয় বাসিন্দারা রাত জেগে বাঁধে বস্তা ফেলে রক্ষা করেছেন। বন্যার সময় নির্ঘুম রাত কাটে তিস্তাপাড়ের মানুষদের। আমন ধানের ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে। এ নিয়ে চিন্তায় পড়েছি। আমন ক্ষেত ডুবেছে বন্যায়। বেশি সময় এমন থাকলে ধান গাছ পচে নষ্ট হতে পারে।

ডাউয়াবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মশিউর রহমান বলেন, আমার ইউনিয়নে তিন-সাড়ে তিন হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বিষয়টি উপজেলা ও জেলা প্রশাসনকে অবগত করা হয়েছে। শুকনো খাবার এখন পর্যন্ত বরাদ্দ আসেনি। বরাদ্দ এলে পৌঁছে দেওয়া হবে।

লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শুনিল কুমার বলেন, রোববার সকাল ৬টায় তিস্তা নদী ডালিয়া পয়েন্টে পানিপ্রবাহ বেড়ে বিপৎসীমার ২ সেন্টিমিটার ওপর প্রবাহিত হয়। দুপুরে তা কমে গিয়ে বিপৎসীমার নিচে নেমে আসে। আশা করছি দ্রুতই বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে।

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার বলেন, বন্যাকবলিতদের জন্য ১৩ লাখ টাকা ও ৯০ মেট্রিকটন জিআর চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আজকে স্বল্প পরিসরে বিতরণ শুরু করেছি। সোমবার সকলের কাছে পৌঁছে যাবে ত্রাণ। বন্যা বাড়লে তা মোকাবিলা করতে জেলা উপজেলা প্রশাসন আমরা প্রস্তুত রয়েছি।

নিয়াজ আহমেদ সিপন/এএমকে

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *