রংপুরে সেবা মিলছে সব থানায়, সড়কে সরব ট্রাফিক পুলিশ

রংপুরে সেবা মিলছে সব থানায়, সড়কে সরব ট্রাফিক পুলিশ

ছাত্র-জনতার রক্তস্নাত গণঅভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে পতন হয়েছে স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার। উদ্ভূত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে জনরোষ থেকে বাঁচতে পেশাগত দায়িত্ব পালনে দেখা মেলেনি পুলিশ সদস্যদের। পুলিশ বাহিনীতে সংস্কারসহ বিভিন্ন দাবি নিয়ে সরব ছিলেন অনেক সদস্যই। অবশেষে দাবি আন্দোলনের কর্মবিরতি ছেড়ে অন্তর্বর্তী সরকারের কড়া নির্দেশনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় মাঠে ফিরতে শুরু করেছে পুলিশ।

ছাত্র-জনতার রক্তস্নাত গণঅভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে পতন হয়েছে স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার। উদ্ভূত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে জনরোষ থেকে বাঁচতে পেশাগত দায়িত্ব পালনে দেখা মেলেনি পুলিশ সদস্যদের। পুলিশ বাহিনীতে সংস্কারসহ বিভিন্ন দাবি নিয়ে সরব ছিলেন অনেক সদস্যই। অবশেষে দাবি আন্দোলনের কর্মবিরতি ছেড়ে অন্তর্বর্তী সরকারের কড়া নির্দেশনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় মাঠে ফিরতে শুরু করেছে পুলিশ।

সরকার পতনের সাত দিন পর রংপুর মহানগরসহ জেলার বিভিন্ন পয়েন্টে দেখা মিলেছে ট্রাফিক পুলিশের। বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থানরত ট্রাফিক পুলিশের সদস্যদের হাতে শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। আর দুই দিন আগে থেকেই সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় থানাগুলোতে শুরু হয়েছে সেবা কার্যক্রম। এতে করে স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছে জনমনে। সাধারণ ছাত্র-জনতার পক্ষ থেকে নিরাপত্তা নিশ্চিতের আশ্বাসে খুশি পুলিশ সদস্যরা।

সোমবার (১২ আগস্ট) সকাল থেকে রংপুর মহানগরীর বিভিন্ন সড়কে দায়িত্ব পালন শুরু করেন মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের সদস্যরা। এতে করে প্রায় এক সপ্তাহ পর স্বাভাবিক হয়েছে মহানগরীর ট্রাফিক ব্যবস্থা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সোমবার সকাল থেকে নগরীর মডার্ন মোড়, শাপলা চত্বর, জাহাজ কোম্পানি মোড়, পায়রা চত্বর, সিটি বাজার মোড়, কাচারি বাজার মোড় ও জিলা স্কুল সংলগ্ন স্বাধীনতা চত্বর, চেক পোস্ট, মেডিকেল মোড় পয়েন্টে ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা যানবাহন নিয়ন্ত্রণের কাজ করছেন। সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে ট্রাফিক পুলিশের পাশাপাশি এখনো বিভিন্ন পয়েন্টে দাঁড়িয়ে ফায়ার সার্ভিস, আনসার, বিএনসিসি, স্কাউটস, রেড ক্রিসেন্টসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের যানবাহন নিয়ন্ত্রণের কাজ করতে দেখা যায়। সড়কে চলাচলকারী গাড়িগুলোর মধ্যে যেগুলো সন্দেহ হয় সেগুলো তল্লাশি, হেলমেট ছাড়া মোটরসাইকেল চালকদের সতর্ক করা এবং প্রতিটি সড়ক দুটি লেনে বিভক্ত করে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। তবে কোনো যানবাহনের বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগের খবর পাওয়া যায়নি।

রংপুর জিলা স্কুল মোড়ে ট্রাফিক সিগন্যালের দায়িত্ব পালন করা এম আরএইচ সুমন ঢাকা পোস্টকে বলেন, খুব ভালো লাগছে আমাদের পুলিশ ভাইয়েরা তাদের দায়িত্বে ফিরেছে। অতীতে যা হয়েছে তা আমরা ভুলে যেতে চাই। বেশ কয়েক দিন কর্মবিরতির পর পুলিশ কর্মে ফিরেছে, তাই আমরা আনন্দিত। পুলিশের অনুপস্থিতি ও অভাব এবং পরিশ্রম আমরা সকল শিক্ষার্থী ও নগরবাসী অনুভব করেছি। জনস্বার্থে পুলিশ কাজ করবে এমনটাই প্রত্যাশা করছি। বাংলাদেশ স্কাউটস রংপুর জেলা রোভারের পক্ষ থেকে কর্মে ফিরে আসা সকল পুলিশ সদস্যকে অভিনন্দন ও ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়েছে।

এদিকে রংপুরের আট উপজেলাতেও দায়িত্বে ফিরে প্রাণবন্ত হয়ে সড়কে দাঁড়িয়ে শৃঙ্খলা ফেরাতে চেষ্টা করছেন ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা। যেন সড়কপথের শৃঙ্খলা রক্ষায় নব উদ্যোমে কার্যক্রম শুরু করেছেন তারা। সকাল থেকেই জেলার কোতোয়ালি থানাধীন পাগলাপীর মোড়ে, মিঠাপুকুর থানাধীন শঠিবাড়ী বাসস্ট্যান্ড এলাকায়, কাউনিয়া বাজার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ও তারাগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড এলাকায় মহাসড়কে জনগণ ও যানবাহন চলাচলের নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ট্রাফিক পুলিশ কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। জেলার সিনিয়র কর্মকর্তারা ট্রাফিক বিভাগের কার্যক্রম তদারকি করছেন।

রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরপিএমপি) উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মো. মেনহাজুল আলম বলেন, সাধারণ মানুষ ও শিক্ষার্থীরা পুলিশ সদস্যদের সহায়তা করছেন। পুলিশ কাজে ফেরায় মিষ্টি বিতরণ ও পুলিশ সদস্যদের ফুল দিয়ে বরণ করে নিয়েছেন তারা। আমরা কোথাও প্রতিবন্ধকতা অনুভব করছি না। বরং সবার কাছ থেকে আন্তরিক ভালোবাসা ও সহযোগিতা পাওয়ায় মনোবল বেড়েছে।

এদিকে মেট্রোপলিটন পুলিশের পাশাপাশি জেলার সব থানায় কাজ শুরু হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করতে শুরু করেছে পুলিশ সদস্যরা। জেলার পুলিশ সুপারের নির্দেশনায় অব্যাহত অপারেশনাল কার্যক্রমকে আরও গতিশীল করা হয়েছে। থানায় আগত সেবাপ্রার্থীদের জিডি, লিখিত অভিযোগ ও মামলা গ্রহণ করাসহ সার্বিক কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। তদনুযায়ী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। থানার গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে থানা পুলিশের মোবাইল টিম টহল দিচ্ছে।

সর্বসাধারণের জানমালের নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষার প্রত্যয়ে নিষ্ঠা, দক্ষতা ও পেশাদারিত্ব নিয়ে পুলিশ সেবায় সর্বদা নিয়োজিত বলে জানিয়েছেন জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইফতে খায়ের আলম। তিনি জানান, রংপুর জেলা পুলিশের সিনিয়র কর্মকর্তারা সরেজমিনে বিভিন্ন ইউনিটসমূহ পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা প্রদান করছেন। প্রত্যেকটি থানা এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে পুলিশ অঙ্গীকারবদ্ধ। এজন্য যেকোনো ধরনের অপরাধ সংক্রান্ত তথ্য দিয়ে পুলিশকে সহায়তা করার জন্য জনসাধারণকে অনুরোধ করেন তিনি।

এর আগে ১১ দফা দাবিতে কর্মবিরতি শুরু করেছিলেন পুলিশ সদস্যরা। তাদের দাবি বিবেচনার আশ্বাস দিয়ে কাজে ফেরার জন্য সময় বেঁধে দেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন। পাশাপাশি ঘোষণা দেন পুলিশের ইউনিফর্ম ও লোগো পরিবর্তনের। এর পরই রোববার রাতে কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে কাজে ফেরার ঘোষণা দেন আন্দোলরত বিক্ষুব্ধ পুলিশ সদস্যরা।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এমজেইউ

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *