মেহেরপুরে অতিবৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়ায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি

মেহেরপুরে অতিবৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়ায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি

মেহেরপুর জেলার ওপর দিয়ে টানা চারদিনের অবিরাম বৃষ্টিতে মাঠের উঠতি ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। মরিচসহ বিভিন্ন সবজি আউশ ধান বিনষ্টের পাশাপাশি অনেক নিচু এলাকার আমন ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে পুকুর ও মাছের ঘের। ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে মাঠে কাজ করছে কৃষি অফিস।

মেহেরপুর জেলার ওপর দিয়ে টানা চারদিনের অবিরাম বৃষ্টিতে মাঠের উঠতি ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। মরিচসহ বিভিন্ন সবজি আউশ ধান বিনষ্টের পাশাপাশি অনেক নিচু এলাকার আমন ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে পুকুর ও মাছের ঘের। ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে মাঠে কাজ করছে কৃষি অফিস।

গত (১৩ সেপ্টেম্বর) থেকে শুরু হওয়া এই ঝোড়ো হাওয়া ও ভারি বৃষ্টি সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিকেল পর্যন্ত একইভাবে তা অব্যাহত রয়েছে। এতে আউশ ধান পানিতে তলিয়ে গেছে ও মাটিতে নেতিয়ে পড়েছে। একই অবস্থা মরিচ, লাউ, চিচিঙ্গা, ঢেড়শ, মিস্টি কুমড়া, বাঁধাকপি, ফুলকপির ক্ষেতসহ বিভিন্ন সবজি ক্ষেতের।

কৃষকরা বলছেন, বেশ কয়েক বছর পর অতিবৃষ্টিতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। এ ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কৃষকরা মোটা অঙ্কের লোকসানে পড়বে। জেলায় আবহাওয়া অফিস না থাকায় ও আগাম প্রস্ততি নিতে না পারায় বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে।

সরেজমিনে মেহেরপুর জেলার বিভিন্ন ফসলের মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, পানির নিচে তলিয়ে গেছে নিচু এলাকার জমির ফসল। অন্যদিকে সবজি ক্ষেতে পানি জমে থাকায় গাছ মরতে শুরু করেছে। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছে মরিচ ক্ষেত। আউশ মৌসুমের ধান কাটতে যাদের বাকি ছিল তারাও প‌ড়ে‌ছেন চরম বিপাকে। এছাড়াও নিচু এলাকার আমন ধান তলিয়ে গেছে পানির নিচে। তলিয়ে গেছে সবজিক্ষেত, বাঁধাকপি, ফুলকপি, লাউ, চিচিঙ্গা ও ঢেঁড়সের মাঠ।

জেলা কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় চলতি সময়ে ২ হাজার ২১৫ হেক্টর জমিতে আউশ, ২ হাজার ৬৬০ হেক্টর আমন ধান, ৪ হাজার ৫৪৫ হেক্টর মরিচ এবং ৪ হাজার ২৩০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন সবজির আবাদ হয়েছে। যা জেলার সারা বছরের চাহিদা পূরণ করে দেশের বিভিন্ন জেলার চাহিদা পূরণ এবং তা বিক্রি করে সংসার খরচ চলে কৃষকদের।

এদিকে ঝোড়ো হাওয়া ও ভারী বৃষ্টিতে ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করছে জেলা কৃষি বিভাগ। তথ্য বলছে, শুক্রবার থেকে রবিবার পর্যন্ত প্রায়  ১ হাজার হেক্টর জমির আমন ধান, ১৫০০ হেক্টর আউশধান, ৪৫০ হেক্টর জমির মরিচ আবাদ এবং ৮০০ হেক্টর জমির সবজি পানিতে তলিয়ে গেছে। তবে শেষ পর্যন্ত ব্যাপক ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানা গেছে।

মেহেরপুর সদর উপজেলার মোনাখালী গ্রামের মরিচ চাষি মতলেব হোসেন বলেন, দুই বিঘা ৫ কাঠা জমিতে মরিচ লাগিয়েছি দেড়মাস আগে। প্রতিটি গাছে ফুল ধরেছে। কিছু গাছে মরিচ ধরেছে। বাতাস ও ভারী বৃষ্টিতে মরিচ গাছ নেতিয়ে পড়েছে। অনেক মরিচ গাছ মরতে শুরু করেছে।

কৃষক ছাইদুল ইসলাম বলেন, দেড়বিঘা জমিতে লাউ আবাদ করেছি। চারদিনের বৃষ্টির পানিতে লাউয়ের মাচা পর্যন্ত পানি উঠেছে। এভাবে পানিতে জমি ডুবে থাকলে লাউগাছ মরে যাবে।

সদরের মদনাডাংগা গ্রামের কৃষক কোরবান আলি জানান, দুই বিঘা জমির আউশ ধান কেটে মাঠে বিচালি শুকানোর জন্য জমিতে ফেলে রাখা হয়েছিল। পুরো জমির ধান পানিতে ভাসছে। ধানে চারা গজিয়ে পড়েছে। দুই বিঘা জমিতে অন্তত ৩৫ থেকে ৪০ মণ ধান ঘরে উঠত।

গাংনীর গাড়াডোব গ্রামের কৃষক রহমতুল্লা বলেন, মেহেরপুর জেলায় আমাদের মতো হাজারও কৃষক আছে। যারা শুধু সবজি চাষ করে। কিন্তু  মেহেরপুর জেলায় তেমন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না থাকায় সবজির চাষ করে লাভবান হই। অথচ হঠাৎ এই দুর্যোগের কারণে সব সবজি পানির নিচে। আমার একবিঘা জমির আগাম জাতের বাঁধাকপির জমিতে পানি জমে থাকায় মরে যাচ্ছে।

ভাটপাড়া গ্রামের মরিচ চাষি আব্দুল আলীম বলেন, ঝোড়ো হাওয়ায় মরিচের গাছ পড়ে গেছে। বৃষ্টির পানিতে ডুবে গেছে মরিচের গাছ।

ধানচাষি রহিদুল ইসলাম বলেন, আউশ ধান লাগিয়েছি দেড়বিঘা। ধান পেকে গেছে। দু-একদিনের মধ্যেই ধান কাটামাড়াই করে ঘরে তুলতাম। জমিতে গিয়ে দেখি শুধুই পানি। দু-একদিনের মধ্যেই ধানে চারা গজিয়ে যাবে। এ ধান ঘরে তুলতে না পারলে সংসার চালানো মুশকিল হয়ে পড়বে।

এদিকে টানা বৃষ্টিতে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে জনজীবন। কখনো হালকা বৃষ্টি আবার কখনো ভারী বৃষ্টিপাতের কবলে পড়েছে মেহেরপুর জেলা। এতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। শ্রমজীবী এবং কর্মজীবী মানুষ ঘর থেকে বের হলেও যানবাহন না পেয়ে বিপাকে পড়ছেন। অন্যদিকে বৃষ্টির মধ্যে ছোট ছোট যানবাহন নিয়ে বের হলেও যাত্রী পাচ্ছেন না চালকরা। এতে অলস সময় পার করছেন তারা। 

এদিকে জরুরি প্রয়োজনে ঘর থেকে মানুষ বের হলেও পাচ্ছেন না কাঙ্ক্ষিত সেবা। অব্যাহত বৃষ্টির কারণে রাস্তাঘাট হয়ে পড়েছে ফাঁকা। ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সব কাজেই বিরূপ প্রভাব পড়েছে। কার্যত অচল অবস্থা বিরাজ করছে জনজীবনে। 

বঙ্গোপসাগরের গভীর স্থল নিম্নচাপ এবং মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে মেহেরপুর জেলাসহ খুলনা বিভাগের সব জেলায় বৃষ্টিপাত ও ঝড় হচ্ছে বলে জানায় চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিস।

চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র পর্যবেক্ষণ কর্মকর্তা রকিবুল হাসান জানান, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর অঞ্চলে গতকাল রোববার সকাল ৬টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ১০৮ মিলিমিটার এবং বাতাসের গতিবেগ ছিল ৩৫ থেকে ৪০ কিলোমিটার।

মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ বিজয় কৃষ্ণ হালদার বলেন, মেহেরপুর জেলা একটি কৃষিনির্ভর জেলা। এ জেলায় প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ নেই। জেলায় প্রচুর সবজি, ফল, ধান ও মরিচ হয়। গত শুক্রবার থেকে একটানা বর্ষণ ও ঝোড়ো হাওয়া বইছে। এতে ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। বিশেষ করে উঠতি ফসলের ক্ষতি হয়েছে বেশি। তবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণে কৃষি বিভাগ কাজ করছে। ইতোমধ্যে প্রাথমিকভাবে একবার ক্ষয়ক্ষতির রিপোর্ট প্রেরণ করা হয়েছে। আবারও মাঠ পর্যায়ে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করার কাজ অব্যাহত রয়েছে। তবে সবজির জমি থেকে দ্রুত পানি নিষ্কাশন করা এবং পচনরোধক স্প্রে করতে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

পিএইচ

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *