মাকে আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত থাকতে বলে ঘর থেকে বের হন ছাইদুল

মাকে আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত থাকতে বলে ঘর থেকে বের হন ছাইদুল

ফেনী সদর উপজেলার ফাজিলপুর ইউনিয়নের উত্তর ফাজিলপুর এলাকার রফিকুল ইসলামের ছেলে ছাইদুল ইসলাম সাহী (২১)। গত ৪ আগস্ট ফেনীর মহিপালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের গুলিতে প্রাণ হারান তিনি। পিঠে তিনটি ও কানের নিচে একটি গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যায় ছাইদুলের শরীর। সেদিন মহিপাল সার্কিট হাউজ রোডে পড়ে ছিল তার নিথর দেহ। পরে স্থানীয়রা উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার আগেই মৃত্যুবরণ করেন তিনি।

ফেনী সদর উপজেলার ফাজিলপুর ইউনিয়নের উত্তর ফাজিলপুর এলাকার রফিকুল ইসলামের ছেলে ছাইদুল ইসলাম সাহী (২১)। গত ৪ আগস্ট ফেনীর মহিপালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের গুলিতে প্রাণ হারান তিনি। পিঠে তিনটি ও কানের নিচে একটি গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যায় ছাইদুলের শরীর। সেদিন মহিপাল সার্কিট হাউজ রোডে পড়ে ছিল তার নিথর দেহ। পরে স্থানীয়রা উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার আগেই মৃত্যুবরণ করেন তিনি।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে ছেলের সাহসিকতার কথা তুলে ধরে ছাইদুলের মা রেহানা বেগম বলেন, আন্দোলনের শুরু থেকেই সে প্রতিদিন ফেনীতে গিয়ে অংশগ্রহণ করেছিল। তবে সবসময় আমাকে বলে যেত, আমিও কোনদিন যেতে বাধা দেইনি। তবে অভাবের সংসার, তার বাবা লেগুনা গাড়ি চালায়। আর্থিকভাবে সচ্ছল না হওয়াতে তাকে ঠিকভাবে টাকা দিতে পারিনি কোনদিন। ৪ আগস্টও ঘর থেকে বের হওয়ার আগে ২৫ টাকা চেয়েছিল ছাইদুল। তখন তার কাছে ২৫ টাকা আছে, আরও ২৫ টাকা হলে ফেনী গিয়ে আবার ফিরে আসতে পারবে বলেছিল।

রেহানা বেগম বলেন, আমার ছেলে ঘর থেকে বের হওয়ার আগে এবার শেখ হাসিনা সরকারের পতন না হলে আর কখনোই হবে না বলে মন্তব্য করে। প্রয়োজনে আমাদেরও আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত থাকতে বলেছিল।  

তিনি আরও বলেন, আমার তিন ছেলের মধ্যে ছাইদুল দ্বিতীয় সন্তান। ধারদেনা করে তাদের পড়াশোনা করিয়েছি। অনেক স্বপ্ন ছিল তাকে নিয়ে, কিন্তু সন্ত্রাসীরা কোনোকিছু পূরণ হতে দেয়নি। আমার ছেলেকে গুলি করে মেরে ফেলল। আমি এ হত্যার বিচার চাই।

ছাইদুলের বাবা রফিকুল ইসলাম বলেন, আমার তিন সন্তানের মধ্যে ছাইদুল বেশি মেধাবী ছিল। ইচ্ছে ছিল ছেলেকে ডাক্তার বানাব। কিন্তু তার আগেই ছেলে দেশের জন্য শহীদ হয়েছে। আমার স্বপ্ন পূরণ হয়নি।আমি খুনিদের বিচার চাই।

নিহত ছাইদুলের বড় ভাই শহিদুল ইসলাম বলেন, সেদিন সার্কিট হাউজ রোডে আমার ভাইয়ের মরদেহ পড়েছিল। পরে কিছু শিক্ষার্থী তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। কিন্তু তার আগেই ছাইদুল মারা যান। তার মৃত্যুর পর ছাত্ররা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল আর্থিক ও মানসিকভাবে আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। অনেকেই খোঁজখবর নিয়েছেন। তবে এবারের বন্যায় ঘরের কিছুই বাঁচাতে পারিনি। 

তিনি বলেন, আমি ছোট একটি চাকরি করি। মা অসুস্থ, প্রতিদিন ছেলের জন্য কান্না করে যাচ্ছে। ভাই হারিয়েছি খারাপ লাগছে, তবে ভাই হারানোর পর শেখ হাসিনা যেন এক মিনিটও আর না থাকে সেজন্য দোয়া করেছিলাম। আল্লাহর রহমতে ২৪ ঘণ্টা পার হওয়ার আগেই তার পতনের সংবাদ পেয়েছি। তখন মানসিক প্রশান্তি পেয়েছি।

নিশাদ নামে ছাইদুলের এক বন্ধু বলেন, দেশের প্রতি ছাইদুলের অনেক ভালোবাসা ছিল। বিভিন্ন সময় নানা অন্যায়, দুর্নীতি নিয়ে কথা বলতো। খেলাধুলায় তার প্রবল আগ্রহ ছিল। চট্টগ্রামে বিভাগীয় পর্যায়েও সে ফুটবল খেলেছে। তার স্বপ্ন ছিল পরিবারের অভাব অনটন দূর করে মায়ের কষ্ট দূর করবে। কিন্তু শেষপর্যন্ত কিছুই আর হয়নি।

পরিবার তিন সন্তানের মধ্যে দ্বিতীয় ছিল ছাইদুল। ২০২৩ সালে বারৈয়ারহাট কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দেওয়ার কথা থাকলেও অভাবের তাড়নায় সেইবার ছাইদুলের পরীক্ষায় বসা হয়নি। ২০২১ সালে ফাজিলপুর ডব্লিউ-বি কাদরী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন তিনি।

তারেক চৌধুরী/এমএসএ 

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *