‘আমরা বাস্তুহারা হয়ে পড়েছি। আমাদের বাড়িঘর ভেঙে সব তলিয়ে যাচ্ছে। আমরা পথের ভিখারি হয়ে গেছি। কোথাও যাওয়ার মতো পরিস্থিতি নেই। আমাদের পূর্ব পুরুষের কবরগুলোও ভেঙে গেছে। ভয়ে আমরা এখন রাতে ঘরে ঘুমাতে পারি না। কখন যে ঘরগুলো ভেঙে পানির স্রোতে তলিয়ে যায়। আমরা বউ-বাচ্চা নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছি। এমন অবস্থায় সরকারই পারে খালে জিও ব্যাগ, ডাম্পিংসহ বাঁধ নির্মাণ করে আমাদেরকে বাঁচাতে।’
‘আমরা বাস্তুহারা হয়ে পড়েছি। আমাদের বাড়িঘর ভেঙে সব তলিয়ে যাচ্ছে। আমরা পথের ভিখারি হয়ে গেছি। কোথাও যাওয়ার মতো পরিস্থিতি নেই। আমাদের পূর্ব পুরুষের কবরগুলোও ভেঙে গেছে। ভয়ে আমরা এখন রাতে ঘরে ঘুমাতে পারি না। কখন যে ঘরগুলো ভেঙে পানির স্রোতে তলিয়ে যায়। আমরা বউ-বাচ্চা নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছি। এমন অবস্থায় সরকারই পারে খালে জিও ব্যাগ, ডাম্পিংসহ বাঁধ নির্মাণ করে আমাদেরকে বাঁচাতে।’
মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে লক্ষ্মীপুরের সদর উপজেলা মান্দারী ইউনিয়নের ওয়াপদা খাল ভাঙন রোধে জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে আয়োজিত মানববন্ধনে ভুক্তভোগী বাসিন্দারা এসব কথা বলেন। একই সময় সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ ইউনিয়নের পিয়ারাপুর ব্রিজ এলাকায়ও ভুক্তভোগীরা মানববন্ধন করে ভাঙন রোধে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
এ সময় বক্তব্য রাখেন মান্দারী ইউনিয়ন পরিষদের ৬নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য (মেম্বার) জাকির হোসেন, সাবেক ইউপি সদস্য জিল্লুর রহিম, মোসলেহ উদ্দিন খান, হারুনুর রশিদ খান, আবদুল কাদের, নাজিম উদ্দিন খান, হুমায়ুন কবির খান ও সিরাজ উদ্দিন খান।
তারা জানায়, প্রায় ৫০ বছর আগে তাদের বাড়ির পাশ দিয়ে ওয়াপদা খাল কাটা হয়। খালের দক্ষিণ পাশে বেড়িবাঁধ, উত্তর পাশে তাদের বাড়ি। দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে খালে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। তাদের জমি ভেঙে খাল প্রশস্ত হয়ে গেছে। একশ ফুট প্রস্থের খাল এখন ৫০০ ফুট হয়েছে। প্রতি বর্ষা মৌসুমে বসতবাড়ির বাগান, ফসলি জমি খালে ভেঙে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এবারের বন্যায় খালে তীব্র স্রোত থাকায় ভাঙন আরও ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। এতে কোব্বাত খান পাঠান বাড়ির অন্তত ৫০টি পরিবার ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। তারা নিয়মিত জমির খাজনা পরিশোধ করে আসছেন। কিন্তু জমি খালের মাঝখানে। বিভিন্ন সময়ে তারা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করলেও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়নি। তাই তাদের ভিটেমাটি রক্ষায় দ্রুত ব্লক বসিয়ে বাঁধ নির্মাণ করলে ভাঙনরোধ সম্ভব বলে জানান তারা।
নাজিম উদ্দিন খান বলেন, কখন যে ঘরগুলো ভেঙে খালে বিলীন হয়ে যায়, এ ভয়ে রাতে ঘরে ঘুমাতে পারছি না। বউ বাচ্চা নিয়ে খুব ভয়ে আছি। সরকারের কাছে আকুতি জানাচ্ছি খাল তীর রক্ষা বাঁধ দিয়ে আমাদেরকে বাঁচান।
আবদুল কাদের বলেন, খালের ভাঙনে প্রায় ২০০ পরিবার বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়েছে। আমাদেরই ২০০ বিঘা জমি খালের ভেতর চলে গেছে। ভাঙন রোধ না হলে আমরাও ধ্বংস হয়ে যাব। সিরাজ উদ্দিন খান বলেন, আমাদের প্রধান দাবি ওয়াপদা খাল ভাঙন রোধ করা।
সাবেক ইউপি সদস্য জিল্লুর রহিম বলেন, খালের দক্ষিণ পাশে একটি চর রয়েছে। ওই চর খনন করলে খালের ভাঙন কমে যাবে। এছাড়া বিগত দিনে প্রভাবশালীরা অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে। এখন খালের ভাঙন দিন দিন বেড়ে চলেছে।
ইউপি সদস্য জাকির হোসেন বলেন, বন্যার পানি কমার পরপরই ভাঙন বেড়ে গেছে। আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। ভাঙন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে অসংখ্য ঘর বাড়ি বিলীন হয়ে যাবে।
লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক (ডিসি) সুরাইয়া জাহান বলেন, ওয়াপদা খালের বিভিন্ন এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভুক্তভোগীরা মানববন্ধন করেছে। আমাদেরকে স্মারক লিপিও দিয়েছেন। এটা নিয়ে পানি উন্নয়নবোর্ড কাজ করছে। পানি উন্নয়নবোর্ডকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য। জিও ব্যাগ ডাম্পিং করে ভাঙন রোধের চেষ্টা করতেও বলা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ভবানীগঞ্জ ইউনিয়নের পিয়ারারপুরসহ আশপাশ এলাকায় ওয়াপদা খালের ভাঙনে প্রায় ৩০টি ঘর বিলীন হয়ে গেছে। এতে ভাঙন রোধে জরুরি পদক্ষেপের দাবিতে ৮ সেপ্টেম্বর দুপুরে লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে পিয়ারাপুর গ্রামবাসী মানববন্ধন করেন। পরে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপিও প্রদান করেন।
হাসান মাহমুদ শাকিল/আরকে