বাংলাদেশের সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীদের ওপর সাবেক সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ‘অপ্রয়োজনীয়’ এবং ‘সামঞ্জস্যহীন’ বল প্রয়োগ করেছে বলে মন্তব্য করেছে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনারের (ইউএন-ওএইচসিএইচআর) দপ্তর। আন্দোলন দমনে ব্যাপকমাত্রায় বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে বলেও মন্তব্য করেছে ইউএন-ওএইচসিএইচআর।
বাংলাদেশের সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীদের ওপর সাবেক সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ‘অপ্রয়োজনীয়’ এবং ‘সামঞ্জস্যহীন’ বল প্রয়োগ করেছে বলে মন্তব্য করেছে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনারের (ইউএন-ওএইচসিএইচআর) দপ্তর। আন্দোলন দমনে ব্যাপকমাত্রায় বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে বলেও মন্তব্য করেছে ইউএন-ওএইচসিএইচআর।
শুক্রবার সুইজারল্যান্ডের রাজধানী জেনেভায় এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সরকার পতন আন্দোলনের ওপর একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ইউএন-ওএইচসিএইচআর। জাতিসংঘের মানবাদিকার বিষয়ক হাই কমিশনার ভলকের তুর্ক নিজে উপস্থিতি ছিলেন সংবাদ সম্মেলনে।
‘প্রাইমারি অ্যানালিসিস অব রিসেন্ট প্রোটেস্ট অ্যন্ড আনরেস্ট ইন বাংলাদেশ’ নামের সেই প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, “সংবাদমাধ্যম এবং অন্যান্য নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে, গত ১৬ জুলাই থেকে ১১ আগস্ট পর্যন্ত রাজধানী ঢাকাসহ সারা বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে ৬ শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছেন। এই নিহতদের মধ্যে ৪ শতাধিক প্রাণ হারিয়েছেন ১৬ জুলাই থেকে ৪ আগস্টের মধ্যে।”
তবে নিহতের প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি বলে ধারণা করছে মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনের দপ্তর। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কারফিউ, ইন্টারনেটের শাটডাউন এবং সরকারের তৎপরতার কারণে অনেক নিহতের তথ্য জানা যায়নি।
বাংলাদেশের সদ্য সমাপ্ত আন্দোলন নিয়ে তদন্ত করতে ঢাকায় আসছে জাতিসংঘের প্রতিনিধি দল। তার এক সপ্তাহ আগে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করল জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশন।
শুক্রবারের প্রতিবেদনে শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন কীভাবে সহিংস হয়ে উঠল— সে সম্পর্কেও উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, “যারা আন্দোলনকে সহিংস করে তোলার পক্ষে ছিল— তাদের এবং যারা এই আন্দোলনকে অহিংস রাখতে চেয়েছিল— তাদের, অর্থাৎ উভয়পক্ষকে লক্ষ্য করে ঢালাওভাবে রবার বুলেট, টিয়ারশেল এবং প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করেছে আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা।”
“এমনকি আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে হেলিকপ্টার থেকে গুলি ছোঁড়ার ঘটনাও ঘটেছে। সেই সঙ্গে চলেছে নির্বিচারে গ্রেপ্তার এবং আটক।”
“শিক্ষার্থী-জনতাও অবশ্য নিষ্ক্রিয় ছিল না। তারাও পুলিশ ও সেনাসদস্যদের লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছুড়েছে, সংঘবদ্ধ হামলা চালিয়েছে। তবে তাদের অধিকাংশের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র দেখা যায়নি। দু’পক্ষের এই সংঘাতে আহত হয়েছেন হাজার হাজার আন্দোলনকারী, তাদের সমর্থক এবং সাংবাদিকরা। অনেক হাসপাতাল উপচে পড়ছিল আহত রোগীদের ভিড়ে।”
গ্রেপ্তার সম্পর্কে বলা হয়েছে, “১২ জুলাই থেকে ৩ আগস্ট পর্যন্ত ঢাকাসহ সারা দেশে অভিযান চালিয়ে থেকে অন্তত ৪ লাখ ৫২ হাজার ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার ও আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তাদের মধ্যে ২ হাজার জনের পরিচয় জানা গেছে। গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে শুধু ঢাকায় কমপক্ষে ২৮৬টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। গ্রেপ্তার ও আটকদের কারাগারে নির্যাতন করার অভিযোগও রয়েছে।”
“আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিস্থিতি মোকাবিলায় অপ্রয়োজনীয় এবং অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ করেছে বলে সুস্পষ্ট ইঙ্গিত রয়েছে। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, অবৈধভাবে গ্রেপ্তার ও আটক, জোরপূর্বক গুম করা, নির্যাতন ও খারাপ আচরণ এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশে গুরুতর বাধা দেওয়ার মতো ঘটনা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ঘটেছে।”
সূত্র : এএফপি
এসএমডব্লিউ