ফেনীতে শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদী দেয়ালচিত্র

ফেনীতে শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদী দেয়ালচিত্র

ফেনীতে সপ্তাহখানেক আগেও দেয়ালে সাঁটানো এলোমেলো পোস্টারে যেন ভর করেছিল অস্বস্তি। সম্প্রতি সরকার পতনের পর তারুণ্যের দেয়ালচিত্র ও ক্যালিগ্রাফির রং-তুলিতে এখন সেই চিত্র পাল্টে ফুটে উঠছে প্রতিবাদের ভাষা। পরাধীনতা আর অন্যায়ের শিকল ভেঙে নতুন বাংলায় তারা গাইতে চায় সাম্যের গান। চলতি পথে যে কেউ শ্রাবণ বা মুগ্ধের মতো বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহত সব শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে, শিল্পীর রং-তুলি যেন তাই জানান দিচ্ছে।  

ফেনীতে সপ্তাহখানেক আগেও দেয়ালে সাঁটানো এলোমেলো পোস্টারে যেন ভর করেছিল অস্বস্তি। সম্প্রতি সরকার পতনের পর তারুণ্যের দেয়ালচিত্র ও ক্যালিগ্রাফির রং-তুলিতে এখন সেই চিত্র পাল্টে ফুটে উঠছে প্রতিবাদের ভাষা। পরাধীনতা আর অন্যায়ের শিকল ভেঙে নতুন বাংলায় তারা গাইতে চায় সাম্যের গান। চলতি পথে যে কেউ শ্রাবণ বা মুগ্ধের মতো বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহত সব শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে, শিল্পীর রং-তুলি যেন তাই জানান দিচ্ছে।  

সরেজমিনে দেখা যায়, শহরের ফেনী সরকারি কলেজ প্রাঙ্গণ, ডাক্তারপাড়া, কলেজ রোড, মাস্টারপাড়া, মিজান রোড, রাজনন্দিনীর দিঘীর পাড় ও মুক্তবাজারসহ বিভিন্ন এলাকার দেয়ালে দেয়ালে সচেতনতার পাশাপাশি শোভা পাচ্ছে শিক্ষার্থী ও স্বেচ্ছাসেবকদের আঁকা রঙিন গ্রাফিতি। জেলা শহর থেকে শুরু করে উপজেলাগুলোতেও তারুণ্যের রং-তুলিতে ফুটে উঠেছে বদলে যাওয়া নতুন বাংলাদেশের গল্প, ছাত্র আন্দোলনের স্মরণীয় সব মুহূর্ত ও বীরত্বগাথা। বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা স্বেচ্ছায় অংশ নিয়েছেন এই কার্যক্রমে। ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের ত্যাগ মানুষের মাঝে স্মরণীয় রাখতেই এ উদ্যোগ, বলছেন তারা।

এদিকে ‘৩৬শে জুলাই’, ‘বিকল্প কে? আমি, তুমি, আমরা’, ‘বিকল্প কে? ছাত্র’, ‘কারার ঐ লৌহকপাট’, ‘এবার সভ্যতা আনব’, ‘স্বাধীনতা এনেছি, সংস্কারও আনবো’, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ’, ‘ধর্ম যার যার, দেশ সবার’ ‘রাজনীতি করলে দুর্নীতি ছাড়েন, দুর্নীতি করলে রাজনীতি ছাড়েন’, ‘পলকে পলকে ইন্টারনেট শেষ’, ‘আমরা হার মানবো না’, ‘২৪-এর তারুণ্য’, ‘দেশকে ভালোবাসলে আগলে রেখো’, ‘দুর্গম গিরি কান্তার মরু, দুস্তর পারাবার হে’, ‘ভয়ের দেওয়াল ভাঙলো, এবার জোয়ার এলো ছাত্র-জনতার’, ‘রক্তাক্ত জুলাই ২০২৪’, ‘দেশটা আমাদের সবার’-এমন অসংখ্য লিখনি ও আন্দোলনের নানা চিত্রে জেলার দেয়ালগুলো এখন রঙিন।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, বৈষম্যহীন নতুন এক বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে এসব কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। এ ছাড়া পরবর্তী প্রজন্মের কাছে সমাজ বা রাষ্ট্রের কী চাওয়া এবং ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহত সব শহীদের আত্মত্যাগকে স্মরণীয় করে রাখতে এ উদ্যোগ।  

শহরের ডাক্তার পাড়ায় দেয়াল অঙ্কনের সময় মাহবুবা তাবাসসুম ইমা নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, শিক্ষার্থীদের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় এমন একটি সুন্দর পরিবেশ পেয়েছি। এবার সবাই মিলে আমরা দেশ সংস্কারে ভূমিকা রাখতে চাই। এ ছাড়া আমাদের শহীদ ভাইদের স্মরণ করতে ও তাদের স্মৃতি ধরে রাখতে লিখনিতে নানা চিত্র তুলে ধরছি।  

কামরুল আরেফিন নামে আরেকজন বলেন, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে দেশে যা হয়েছে আগামী প্রজন্ম যেন এসব থেকে শিক্ষা নিয়ে সুন্দর দেশ গঠনে ভূমিকা রাখতে পারে সেজন্য আন্দোলনের নানা প্রেক্ষাপট দেয়ালে তুলে ধরা হয়েছে। গ্রাফিতিতে আন্দোলনে পুলিশের ভূমিকা থেকে শুরু করে শহীদ মুগ্ধ, শ্রাবণ কিংবা আবু সাঈদদের বীরত্বগাথা, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়া ও অভ্যুত্থানের মাধ্যমে স্বৈরাচারের পতনের চিত্রকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। 

ফেনী ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী সিয়াম সাজ্জাদ বলেন, আমরা ৫২ বা ৭১ দেখিনি, তবে ২০২৪ দেখেছি। গত দুইমাসে ছাত্র আন্দোলন থেকে স্বৈরাচার সরকারের পতন, এই সময়টা তরুণ প্রজন্ম পার করেছে। সেই বিষয়গুলো দেয়াল লিখনিতে তুলে ধরতে শতাধিক শিক্ষার্থী-স্বেচ্ছাসেবকরা স্বেচ্ছায় এসে কাজ করছেন। অভিভাবকরাও খাবার, পানিসহ নানা সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে এসেছেন।

শহরের শান্তি চত্বর-সংলগ্ন সোনালী ব্যাংকের দেয়ালে রং-তুলিতে ফুটে উঠেছে আবু সাঈদের বীরত্বগাথা। তার পাশেই ফেনীর শহীদ শ্রাবণের একটি ফেসবুক পোস্ট অঙ্কন করে তাকে স্মরণ করা হয়েছে। ইব্রাহিম ভূঞা নামে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া এক শিক্ষার্থী বলেন, আবু সাঈদ এ প্রজন্মকে দেখিয়ে দিয়েছে কীভাবে বুক চিতিয়ে লড়াই করতে হয়৷ তাকে পুলিশ যেভাবে হত্যা করেছে আমি সে চিত্র এখানে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।

এ ব্যাপারে নিষাদ আদনান নামে এক স্বেচ্ছাসেবক ঢাকা পোস্টকে বলেন, ফেনী জেলা স্বেচ্ছাসেবক পরিবারের আয়োজনে ৯ দিন ধরে গ্রাফিতি, টাইপোগ্রাফি ও ক্যালিগ্রাফি কার্যক্রম চলছে। সাধারণ শিক্ষার্থী ও দেয়াল অঙ্কনের কাজ করছে। সপ্তাহের ব্যবধানে জেলাশহর থেকে শুরু করে বিভিন্ন উপজেলার দেয়ালগুলোতেও রং-তুলির আঁচড়ে বদলে গেছে চিত্র। 

ওসমান গনি নামে একজন বলেন, এমন কার্যক্রমে গত কয়েকদিনে শিক্ষার্থীদের মধ্যে কোনো ক্লান্তি দেখা যায়নি। বৃষ্টি ও তপ্ত রোদ উপেক্ষা করে সারাদিন কাজ করে শহরের চিত্র বদলে দিয়েছেন তারা। গ্রাফিতি ও ক্যালিগ্রাফি দেখে সাধারণ মানুষজনও প্রশংসা করছেন। বদলে যাওয়া বাংলাদেশের জন্য এসব আমাদের জন্য ইতিবাচক ও আনন্দের। 

তারেক চৌধুরী/এএমকে

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *