বিএসইসির দুর্নীতি-অনিয়মের ফিরিস্তি তুলে ধরলো ডিবিএ

বিএসইসির দুর্নীতি-অনিয়মের ফিরিস্তি তুলে ধরলো ডিবিএ

শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান এম খাইরুল হোসেন এবং অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতি, অনিয়মের অভিযোগ তুলে ধরেছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সদস্যদের সংগঠন ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিবিএ)।

শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান এম খাইরুল হোসেন এবং অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতি, অনিয়মের অভিযোগ তুলে ধরেছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সদস্যদের সংগঠন ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিবিএ)।

সংগঠনটির দাবি, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের এ চেয়ারম্যান দীর্ঘসময় অপেশাদার এবং অনৈতিক কর্মকাণ্ড করেছে। ফলে বাজারের কোনো উন্নতি হয়নি বরং বিনিয়োগকারীদের আস্থা তলানিতে এসে পৌঁছায়।

সোমবার (১২ আগস্ট) দেশের শেয়ারবাজারের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে বিএসইসির বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ তুলে ধরা হয়। সংবাদ সম্মেলনে ডিবিএর পক্ষে বক্তব্য দেন সংগঠনটির সভাপতি সাইফুল ইসলাম।

সাইফুল ইসলাম বলেন, আমরা বিশ্বাস করি এ সরকার (অন্তর্বর্তী সরকার) একটি বৈষম্যহীন, দুর্নীতিমুক্ত এবং উন্নত রাষ্ট্র গঠনে কাজ করবে। তারা সর্বস্তরে সুশাসন নিশ্চিত করে দেশকে আর্থিকভাবে সমৃদ্ধশালী করবে। আমরা পুঁজিবাজারের উন্নয়নে এ সরকারকে আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে সর্বপ্রকার সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত।

২০০৯-২০১০ সালে শেয়ারবাজার পতনের পর লাখ লাখ বিনিয়োগকারী তাদের পুঁজি হারিয়ে পথে বসে যান। শেয়ার ক্রয়ে মার্জিন ঋণ প্রদানকারী বহু প্রতিষ্ঠান দেউলিয়া হয়ে যায়। এরপর থেকে বাজার পরিস্থিতির কোনরূপ উন্নতি না হওয়ায় বারবার ক্ষতির মুখে পড়ে লাখ লাখ বিনিয়োগকারী বাজার ছেড়ে চলে যান।

বাজার পতনের কারণ ও দোষীদের খুঁজে বের করতে তৎকালীন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর প্রয়াত ইব্রাহিম খালেদের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। তাদের তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে আসা বাজার কারসাজিতে জড়িত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আজও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ফলশ্রুতিতে সেই কারসাজি চক্র আরও সক্রিয় হয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা তুলে নিয়ে যায়।

২০১১ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত প্রায় ১৪ বছর ধরে ড. এম খাইরুল হোসেন ও অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তারা উভয়েই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা পেশা থেকে এসে এ পদে আসীন হন। এ দীর্ঘসময়ে তাদের অপেশাদার এবং অনৈতিক কর্মকাণ্ডের ফলে বাজারের কোনো উন্নতি হয়নি বরং বিনিয়োগকারীদের আস্থা তলানিতে এসে পৌঁছায়।

ডিবিএ সভাপতি বলেন, ২০১০ সালের বাজার পতনের পর ড. এম খাইরুল হোসেন ও অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বাজারে ইনসাইডার ট্রেডিং বন্ধ করা, কারসাজি রোধে বাজারে স্বচ্ছতা, সুশাসন ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা, ভালোমানের আইপিও এনে বাজারে বিনিয়োগকারীর আস্থা ফিরিয়ে আনা, প্লেসমেন্ট বাণিজ্যের ন্যায় ভয়াবহ অরাজকতা বন্ধ করা, কোম্পানির নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার যে অঙ্গীকার নিয়ে তারা বাজারের দায়িত্ব নিয়েছিলেন, তা পূরণে তারা ব্যর্থ হয়েছেন। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, উপরোক্ত প্রতিটা অনিয়মে তাদের ব্যক্তিগত সম্পৃক্ততা পরিলক্ষিত হয়েছে।

আইপিওর নামে গত ১৪ বছরে যে পরিমাণ দুর্নীতি ও অনিয়মের আশ্রয় নেওয়া হয়েছে, তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। আইপিওর মাধ্যমে বাজারে অনুপযুক্ত, দুর্বল, মানহীন, দেউলিয়াগ্রস্ত কোম্পানিকে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। আপনারা পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে এ বিষয়গুলো তুলে ধরেছেন। আপনারা প্রতিটি আইপিওর দুর্বলতা ও নেতিবাচক দিকগুলো বিশদভাবে প্রকাশ করেছেন।

সম্প্রতি ‘ফ্লোরপ্রাইস’ নামক একটি অদ্ভুত নিয়ম আমাদের বাজারে আরোপ করা হয়েছে। এ ফ্লোর প্রাইস শেয়ার ক্রয়-বিক্রয়ে বাধা সৃষ্টি করে এবং বাজারের স্বাভাবিক লেনদেন ও বিনিয়োগকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। শেয়ার দরের ফ্লোরপ্রাইস একটি অযৌক্তিক ও ক্ষতিকর নিয়ম হিসেবে বিনিয়োগকারীদের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করেছে। এ নিয়মের কারণে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীর একটি বড় অংশ আমাদের বাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। পরবর্তীতে ফ্লোরপ্রাইস তুলে দিলে বাজার কিছুদিনের জন্য ভালো হয়, কিন্তু পুনরায় ফ্লোরপ্রাইস আরোপে বাজারের স্বাভাবিক গতি থেমে যায় এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা ভেঙে পড়ে।

এনএম/এমজে

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *