রজনীকান্ত সেনের স্বাধীনতার সুখ কবিতায় বাবুই পাখি চড়ুই পাখিকে বলেছিল ‘কষ্ট পাই, তবু থাকি নিজের বাসায়’। এক যুগ আগেও পাখিদের মধ্যে সবচেয়ে আর্কষণীয় শিল্প সমৃদ্ধ বাসা নিয়ে চড়ুই পাখির সঙ্গে বড়াই করলেও এখন আর তেমন দেখা যায় না বাবুই পাখিকে। পরিবেশ বিপর্যয় ও অতিরিক্ত পরিমাণে তালগাছ নিধন করায় আবাসস্থলসহ জীবন সংকটে পড়েছে বাবুই পাখি। বিলুপ্ত প্রায় পাখিটি এখনো নারকেল গাছ, খেজুর গাছ ও তালগাছে বাসা বেঁধে কোনোরকমে বেঁচে আছে।
রজনীকান্ত সেনের স্বাধীনতার সুখ কবিতায় বাবুই পাখি চড়ুই পাখিকে বলেছিল ‘কষ্ট পাই, তবু থাকি নিজের বাসায়’। এক যুগ আগেও পাখিদের মধ্যে সবচেয়ে আর্কষণীয় শিল্প সমৃদ্ধ বাসা নিয়ে চড়ুই পাখির সঙ্গে বড়াই করলেও এখন আর তেমন দেখা যায় না বাবুই পাখিকে। পরিবেশ বিপর্যয় ও অতিরিক্ত পরিমাণে তালগাছ নিধন করায় আবাসস্থলসহ জীবন সংকটে পড়েছে বাবুই পাখি। বিলুপ্ত প্রায় পাখিটি এখনো নারকেল গাছ, খেজুর গাছ ও তালগাছে বাসা বেঁধে কোনোরকমে বেঁচে আছে।
সম্প্রতি শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া, ভেদরগঞ্জ, গোসাইরহাটসহ অন্যান্য উপজেলা ঘুরে বাবুই পাখির এমন জীবনচিত্র দেখা গেছে।
জানা যায়, এক যুগ আগেও জেলার ফসলি মাঠসহ বিভিন্ন স্থানে কিচিরমিচির শব্দে মুখরিত থাকত বাবুই পাখি। প্রাকৃতিকভাবে ফলদ বিভিন্ন বৃক্ষ থেকে খাবার খেয়ে মনের আনন্দে তৈরি করত পশু-পাখির মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় শিল্প-সমৃদ্ধ বাসা। বাবুই পাখির এমন শিল্প-সমৃদ্ধ বাসা নিয়ে প্রকৃতিপ্রেমী রজনীকান্ত সেনসহ অনেক কবি ও সাহিত্যিক রচনা করেছেন কালজয়ী গল্প-কবিতা। কিন্তু বর্তমানে পরিবেশের বিপর্যয়, উজাড়সহ অতিরিক্ত পরিমাণে তালগাছ নিধন করায় জীবনসংকটে পড়েছে বাবুই পাখি।
নিখুঁত কারুকাজে বাসা তৈরি করে শিল্পের কারিগর হিসেবে পরিচিতি পাওয়া বাবুই পাখি এখন বাড়ির কোণের নারকেল গাছ, সুপারি গাছ, খেজুর গাছসহ তালগাছে বাসা বেঁধে কোনোরকমে বেঁচে আছে। আগের মতো তালপাতা পাওয়া না যাওয়ায় খেজুর ও নারকেল গাছের পাতা দিয়েও তারা এখন বাসা তৈরি করছে। বৃক্ষ নিধনের ফলে বন উজাড় হওয়ায় ঝড়বৃষ্টিতে বাসা ভেঙে গেলে অন্য গাছে আশ্রয়ও নিতে পারে না তারা। ফসলি মাঠে কিটনাশকসহ বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক সার ব্যবহার করায় প্রাকৃতিক খাবার সংকটে রয়েছে পাখিটি। এছাড়া শিকারিরা বাবুই পাখি শিকার বন্ধ করছে না। আবার কেউ কেউ বাসাবাড়ি সাজাতে বাবুই পাখির বাসা গাছ থেকে নামিয়ে নিয়ে যায়। প্রকৃতিপ্রেমীরা বলছেন, তালগাছসহ বাবুই পাখির নিরাপদ আশ্রয়স্থল ও খাদ্য সংকটের সমাধান না হলে শিগগিরই পাখিটি বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
প্রকৃতি ও জীবন ক্লাব শরীয়তপুরের সদস্য সচিব এস এম মজিবুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, বাবুই পাখি সাধারণত উঁচু গাছে বাসা বাঁধতে পছন্দ করে। বাবুই পাখি বাসা বাঁধার জন্য তালগাছ বেশি পছন্দ করে। কিন্তু অতিরিক্ত মাত্রায় তালগাছ নিধন, বন উজাড় করায় বাবুই পাখি বাসা বাঁধতে না পারায় বর্তমানে আবাসস্থল সংকটে পড়েছে। এছাড়াও প্রাকৃতিকভাবে তারা বিষমুক্ত খাবার না পাওয়ায় খাদ্য সংকটেও রয়েছে। প্রতিকূল পরিবেশকে গাছ রোপণ করে পাখির নিরাপদ আশ্রয়স্থল সৃষ্টি করলেই বাবুই পাখি প্রকৃতিতে টিকে থাকবে।
শরীয়তপুরে প্রতিনিয়ত তালগাছের সংখ্যাহ্রাস পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বন বিভাগ শরীয়তপুরের কর্মকর্তা মো. সালাহ উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে দুর্যোগ প্রশমনে তাল, খেজুর রোপণসহ স্বমন্বিত প্রকল্প নামে একটি প্রকল্প প্রস্তাব আকারে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি অনুমোদনের জন্য প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। প্রস্তাবটি পাস হলে আমরা শরীয়তপুরে চাহিদা অনুযায়ী তাল ও খেজুর গাছ রোপণ করব।
শরীয়তপুর জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা আবু বকর সিদ্দিক ঢাকা পোস্টকে বলেন, বাবুই পাখি পরিবেশের জন্য উপকারী পাখি। বাবুই পাখি ফসলি মাঠের ক্ষতিকারক পোকামাকড় খেয়ে জীবনধারণ করে। এছাড়াও তারা বনের ফল খায়। বাবুই পাখি দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। এর প্রধান কারণ হলো, পরিবেশের বিপর্যয়, জলবায়ু পরিবর্তন, নির্বিচারে তালগাছ কর্তন, খাদ্যের অভাব ও অসাধু শিকারিদের ফাঁদ। যদি এসব সমস্যা না থাকত, তাহলে বাবুই পাখি স্বাচ্ছন্দ্যে বেঁচে থাকত, আমাদের উপকারে আসত।
সাইফ রুদাদ/পিএইচ