বিগত সরকারের আমলে যে কোনো সেক্টরে ভারতীয় প্রতিষ্ঠানের ছিল একছত্র আধিপত্য। এর ব্যতিক্রম হয়নি টেলিযোগাযোগ শিল্পেও। দেশের শীর্ষস্থানীয় একটি মোবাইল অপারেটর তাদের নেটওয়ার্ক ম্যানেজের পুরো কাজটি করছেন ভারতীয় প্রতিষ্ঠান উইপ্রো। সেই ভারতীয় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান উইপ্রো বাংলাদেশ থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছেন। প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরত বাংলাদেশি অনেক কর্মচারী তা নিশ্চিত করেছেন।
বিগত সরকারের আমলে যে কোনো সেক্টরে ভারতীয় প্রতিষ্ঠানের ছিল একছত্র আধিপত্য। এর ব্যতিক্রম হয়নি টেলিযোগাযোগ শিল্পেও। দেশের শীর্ষস্থানীয় একটি মোবাইল অপারেটর তাদের নেটওয়ার্ক ম্যানেজের পুরো কাজটি করছেন ভারতীয় প্রতিষ্ঠান উইপ্রো। সেই ভারতীয় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান উইপ্রো বাংলাদেশ থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছেন। প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরত বাংলাদেশি অনেক কর্মচারী তা নিশ্চিত করেছেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানের প্রধান মানবসম্পদ কর্মকর্তা শাহরিয়ার তুষারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়া বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না। প্রতিষ্ঠানে ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, নিয়মিত কর্মীদের দ্বারা সম্পন্ন করা কাজ, বিদেশি একটি কোম্পানির হাতে তুলে দেওয়ার পর দেশে স্বাভাবিক ভাবে এই শিল্পে তরুণদের কর্মসংস্থানের হার সংকুচিত হয়ে পড়ে।
উইপ্রো দায়িত্ব নেয়ার পর শুরুতে তারা কয়েক ডজন ভারতীয় কর্মী নিয়োগ প্রদান করে, ফলে দেশের তরুণরা তখন থেকেই বঞ্চিত হওয়া শুরু করে। বিদেশি কর্মীরা কাজ শুরু করার পর স্বভাবতই কাজের প্রয়োজনে তাদেরকে বিভিন্ন টেলিযোগযোগ সিস্টেমে এক্সেস প্রদান করা হয়। দেশীয় কর্মীদের আপত্তি উপেক্ষা করে এ কাজ করা হয়। অরক্ষিত হয়ে পড়ে দেশের বিপুল সংখ্যক গ্রাহককে সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের নেটওয়ার্ক ও ডাটা সিকিউরিটি।
আরও বলেন, এতদিন ক্ষমতা প্রয়োগ করে উইপ্রো বাংলাদেশি কর্মীদের তাদের প্রাপ্য আইনসংগত ইনক্রিমেন্ট ও বোনাস থেকেও বঞ্চিত করে আসছিল। তাদেরকে বারবার বাংলাদেশের লেবার-ল অনুসারে কর্মীদের সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করতে বলা হলেও তারা তাতে কর্ণপাত করেনি।
উল্টো ক্ষমতার পট পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে টেলিকম অপারেটরটি উইপ্রোর সঙ্গে চুক্তি বাতিলের ঘোষণা দিয়ে বসে এবং সেই একই কর্মকর্তারা বিগত সরকারের আইসিটি খাতে লুটপাটে থাকা শীর্ষ কোম্পানিটির সঙ্গে নতুন করে ম্যানেজ সার্ভিস প্রদানের চুক্তি সম্পাদন করে। ত্রিপক্ষীয় এই যোগসাজশে উইপ্রো সুযোগ পেয়ে যায় বাংলাদেশ থেকে তাদের ব্যবসা গুটিয়ে নেয়ার। তারা কর্মীদের সবাইকে টার্মিনেশন নোটিশ পাঠিয়ে দেয়। এ অবস্থায় কর্মীরা তাদেরকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী লং টার্ম ক্যারিয়ার ও গ্লোবাল সুযোগের বিষয়টি সামনে আনলেও মানবসম্পদ বিভাগ তাতে কর্ণপাত করেনি। হঠাৎ করে প্রায় দেড় শতাধিক কর্মীকে চাকরিচ্যুত করার এই নোটিশে কর্মীরা আপত্তি জানালেও কোন কাজ হয়নি। কর্মীরা ক্ষতিপূরণ দাবি করলেও এ ব্যাপারে তারা কোন দায়িত্ব নেবে না বলে জানায় ।
কর্মীরা জানান, উইপ্রোর ইন্ডিয়ান ম্যানেজমেন্ট সেখানে বসেই বাংলাদেশের ব্যবসা পরিচালনা করছিল। যার ফলে কর্মীরা যোগাযোগ করার জন্যও কাউকে সামনাসামনি পাচ্ছেনা। কথা বলার জন্য উইপ্রোর গুলশানস্থ অফিসে গেলে দেখা যায় সেখানে কেউ নেই। নিরাপত্তা প্রহরীর ভাষ্যমতে ম্যানেজমেন্টের কেউ এখানে আসেন না।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে দায়িত্ব নেওয়া নতুন সরকারের উইপ্রোর বাংলাদেশে ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়ার এই পদক্ষেপ সম্পর্কে গভীরভাবে খোঁজ নেওয়া প্রয়োজন। তাদের এতদিন ধরে পরিচালনা করা ব্যবসা বৈধ ছিল কিনা, এর মাধ্যমে তারা অর্থ পাচারে জড়িত ছিল কি না এবং দেশে টেলিকম সেবার মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাচার হয়েছে কিনা সেটা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই করা দরকার। সেই সাথে কর্মীদের বিগত বছরগুলোর ন্যায্য পাওনা আদায়ে ও সরকারের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।
এমএসআই/এমএসএ