বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে বেড়েছে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি রোগীর সংখ্যা। বছরের শুরু থেকে মাসে দু-একজন আক্রান্ত রোগী ভর্তি হলেও গতমাস থেকে হাসপাতালে প্রায় নিয়মিত ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হচ্ছেন। মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) হাসপাতালের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী বরগুনায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৪৫ জন।
বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে বেড়েছে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি রোগীর সংখ্যা। বছরের শুরু থেকে মাসে দু-একজন আক্রান্ত রোগী ভর্তি হলেও গতমাস থেকে হাসপাতালে প্রায় নিয়মিত ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হচ্ছেন। মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) হাসপাতালের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী বরগুনায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৪৫ জন।
জুলাই মাসের পরপরই বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা গেলেও বরগুনায় এ বছর গত আগস্ট মাসের মাঝামাঝি থেকে বেড়েছে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। এসব রোগীদের সঠিক চিকিৎসা নিশ্চিত করতে ও রোগের বিস্তার ঠেকাতে হাসপাতালে চালু করা হয়েছে নারী ও পুরুষের জন্য আলাদা দুটি ইউনিট। তবে ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধি পেলেও বরগুনায় এখনো ওষুধ প্রয়োগসহ নেওয়া হয়নি মশক নিধনে কোনো প্রকার ব্যবস্থা।
মঙ্গলবার দুপুরের দিকে সরেজমিনে বরগুনা জেনারেল হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, জ্বরে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের পরীক্ষায় ডেঙ্গু সনাক্ত হলেই ভর্তি করা হচ্ছে হাসপাতালে। তবে এসব ভর্তি রোগীদের অভিযোগ, হাসপাতালে ভর্তির পর প্রতিদিন দেখা মিলছে না চিকিৎসকের। এমনকি তিন-চার দিন পার হলেও অনেক সময় আসেন না কোনো চিকিৎসক। দায়িত্বরত নার্সদের পরামর্শেই চলছে আক্রান্তদের চিকিৎসা সেবা।
বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ ২৩, নারী ১২ এবং শিশু রোগীর সংখ্যা ১০ জন। এ ছাড়া গত এক বছরে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসাসেবা নিয়েছেন ৫২৪ জন। এর মধ্যে গত এক মাসেই ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন প্রায় ৩৫০ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী।
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি বরগুনা সদর উপজেলার ঢলুয়া ইউনিয়নের নলি এলাকার বাসিন্দা মো. মনির হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি ছয় দিন হয়েছে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। এখান থেকে খাবার ছাড়া একমাত্র প্যারাসিটামল পাই। এ ছাড়া প্রয়োজনীয় সকল পরীক্ষা-নিরীক্ষাসহ ওষুধ ও স্যালাইন বাইরে থেকেই কিনতে হয় আমাদের।
বরগুনার নলি মাইঠা নামক এলাকার বাসিন্দা জেসমিন বেগম ডেঙ্গুতে আক্রান্ত বোনের ছেলেকে নিয়ে ভর্তি আছেন হাসপাতালে। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, এখানে ভর্তি রোগী সবাইকে নাপা ও গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ দেওয়া হয়। তবে চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় স্যালাইন কিনতে হয় বাইরে থেকে।
ময়না বেগম পাথারঘাটার কাকচিড়া থেকে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত স্বামী অব্দুল করিমকে নিয়ে গত এক সপ্তাহ ধরে ভর্তি আছেন বরগুনা হাসপাতালে। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার স্বামী জ্বরে আক্রান্ত হলে প্রথমে বাইরে থেকে পরীক্ষা করালে ডেঙ্গু সনাক্ত হয়। পরে তাকে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। এখান থেকে আমরা প্রয়োজনীয় ওষুধসহ সব কিছু ঠিকভাবেই পেয়েছি। আমার স্বামী এখন আগের থেকে সুস্থ।
মো. মনির হোসেন নামের আরেকজন ভর্তি রোগী ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি যখন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি তখন আমার রক্তে প্লাটিলেট ছিল ৬৮ হাজার। পরে চার দিন অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত আসেনি কোনো চিকিৎসক। আজ (মঙ্গলবার) আবার পরীক্ষা করলে রক্তে প্লাটিলেট কমে দাঁড়িয়েছে ২৭ হাজার। এখন এ অবস্থায় আমি এখানে থাকব নাকি উন্নত চিকিৎসার জন্য অন্য কোথাও যাব তা নিয়ে আমি ও আমার স্বজনরা চিন্তিত।
বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. এ কে এম নজমূল আহসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, বর্তমানে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। হাসপাতালে মোট ৩৫১ জন ভর্তি রোগী রয়েছে। এর মধ্যে নারী, পুরুষ ও শিশুসহ মোট ৪৫ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত। গত বছরের তুলনায় এ বছর এখন পর্যন্ত বরগুনায় ডেঙ্গু রোগী কম থাকলেও এখন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার সময়। এ কারণে আমাদের চিকিৎসকদের প্রতি নির্দেশনা দেওয়া আছে। এ ছাড়া চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় সব কিছুই আমাদের রয়েছে। তারপরও আক্রান্ত কারো যদি অবস্থা বেশি খারাপ হয় তাহলে উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রেরণ করি।
মো. আব্দুল আলীম/এএমকে