বন্দিচুক্তির দাবিতে ইসরায়েলে হাজার হাজার মানুষের বিক্ষোভ

বন্দিচুক্তির দাবিতে ইসরায়েলে হাজার হাজার মানুষের বিক্ষোভ

ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ডে অবিরাম হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। টানা ১১ মাসেরও বেশি সময ধরে চালানো এই হামলায় নিহত হয়েছেন ৪১ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি। তবে এরপরও হামাসের হাতে আটক থাকা বেশিরভাগ বন্দিকেই উদ্ধার করতে পারেনি ইসরায়েল।

ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ডে অবিরাম হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। টানা ১১ মাসেরও বেশি সময ধরে চালানো এই হামলায় নিহত হয়েছেন ৪১ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি। তবে এরপরও হামাসের হাতে আটক থাকা বেশিরভাগ বন্দিকেই উদ্ধার করতে পারেনি ইসরায়েল।

এই পরিস্থিতিতে গাজায় আটক বন্দিদের ফিরিয়ে আনার দাবিতে ইসরায়েলে রাস্তায় বিক্ষোভ করেছেন হাজার হাজার মানুষ। বিক্ষোভের সময় তারা সেনা সদরদপ্তরের পাশাপাশি বিভিন্ন সরকারি ভবনের সামনে সমবেত হন এবং নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে স্লোগান দেন।

রোববার (১৫ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, হাজার হাজার সরকারবিরোধী ইসরায়েলি বিক্ষোভকারী তেল আবিবের প্রাণকেন্দ্রে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেছেন। এসময় গাজায় আটক থাকা বন্দিদের মুক্তির জন্য আরও প্রচেষ্টার আহ্বান জানান তারা।

বিক্ষোভকারীরা শনিবার সেনা সদর দপ্তর এবং অন্যান্য সরকারি ভবনের বাইরে জড়ো হর এবং প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে স্লোগান দেয়। এছাড়া যুদ্ধ-বিধ্বস্ত অঞ্চলে এখনও আটক থাকা প্রায় ১০০ বন্দিকে ফিরিয়ে আনার জন্য ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের সাথে চুক্তিতে পৌঁছানোর দাবি জানান তারা।

আল জাজিরা বলছে, গাজা থেকে ছয় বন্দির লাশ উদ্ধারের পর বাকি বন্দিদের ফেরত আনার দাবিতে গত দুই সপ্তাহে ইসরায়েলে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে। এর মধ্যে আনুমানিক সাড়ে ৭ লাখ মানুষ গত সপ্তাহান্তের সমাবেশে অংশ নিয়েছিলেন।

শনিবারের সমাবেশে অংশ নেওয়া বন্দিদের পরিবার জানিয়েছে, বন্দিদের দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকারের ব্যর্থ আলোচনায় তারা হতাশ। অনেকে হামাসের সাথে চুক্তিতে পৌঁছাতে না পারার জন্য নেতানিয়াহুকে দোষারোপ করেছেন কারণ তারা বিশ্বাস করেন, আলোচনা ব্যর্থ হওয়া মানে এটি তাকে যতদিন যুদ্ধ চলবে ততদিন ক্ষমতায় থাকতে সাহায্য করবে।

গাজায় আচক থাকা ইসরায়েলি সৈন্য নিমরোদ কোহেনের ভাই ইয়োটাম কোহেন বলছেন, ‘চুক্তি-বিনাশকারী এই সরকার বন্দিদের পরিত্যাগ করছে এবং তাদের মৃত্যুর মুখে ছেড়ে দিয়েছে।’

কোহেন দ্য অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস নিউজ এজেন্সিকে বলেছেন, ‘যতদিন নেতানিয়াহু ক্ষমতায় থাকবেন, এই যুদ্ধ অনির্দিষ্টকালের জন্য চলবে এবং কোনও বন্দি চুক্তি হবে না। বন্দিদের জীবন বাঁচাতে নেতানিয়াহুকে অবশ্যই সরাতে হবে।’

আল জাজিরার হামদাহ সালহুত জর্ডানের রাজধানী আম্মান থেকে জানিয়েছেন, ইসরায়েলি জনসাধারণ নেতানিয়াহুর প্রতি ক্রমশ হতাশ হয়ে পড়ছেন। তিনি বলেন, ‘তারা বলছেন- তিনি (নেতানিয়াহু) সক্ষম নন বা চুক্তি মেনে নিতে ইচ্ছুক নন। … তারা বলছেন- নেতানিয়াহু এবং তার সরকার বন্দিদের মুক্তি নিশ্চিত করার জন্য কিছুই করছে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘নেতানিয়াহু দেশীয় বা আন্তর্জাতিক চাপের মুখে বলেছেন- যুদ্ধের সমস্ত লক্ষ্য অর্জন না হওয়া পর্যন্ত তিনি যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়াকে উপযুক্ত মনে করেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো- এই লক্ষ্যগুলোর কোনটিই প্রায় এক বছর পরেও অর্জিত হয়নি।’

উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন আন্তঃসীমান্ত হামলার পর থেকে ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েলি এই হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে।

এছাড়া ইসরায়েলি আগ্রাসনের কারণে প্রায় ২০ লাখেরও বেশি বাসিন্দা তাদের বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। মূলত ইসরায়েলি আক্রমণ গাজাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। জাতিসংঘের মতে, ইসরায়েলের বর্বর আক্রমণের কারণে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।

ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ডের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গাজায় ইসরায়েলের আক্রমণের ফলে এখন পর্যন্ত ৪১ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। এছাড়া আহত হয়েছেন আরও ৯৫ হাজারের বেশি মানুষ।

এছাড়া ইসরায়েল ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিজে) গণহত্যার দায়ে অভিযুক্ত হয়েছে।

টিএম

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *