প্রতিবাদের রঙিন গ্রাফিতিতে বদলে গেছে সুনামগঞ্জের দেয়াল 

প্রতিবাদের রঙিন গ্রাফিতিতে বদলে গেছে সুনামগঞ্জের দেয়াল 

সাম্প্রতিক বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সরকার বদলের সঙ্গে সঙ্গে বদলে যাচ্ছে সুনামগঞ্জের দেয়ালগুলোর রূপও। শহরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টের দেয়ালে গ্রাফিতির মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে প্রতিবাদ, দেশপ্রেম, সাম্য, সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্ববোধের বার্তা।

সাম্প্রতিক বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সরকার বদলের সঙ্গে সঙ্গে বদলে যাচ্ছে সুনামগঞ্জের দেয়ালগুলোর রূপও। শহরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টের দেয়ালে গ্রাফিতির মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে প্রতিবাদ, দেশপ্রেম, সাম্য, সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্ববোধের বার্তা।

সুনামগঞ্জের জেলা শহরের  রিভারভিউ, কমরেড বরুণ রায় সড়ক, এসসি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দেয়াল, এইচএমপি উচ্চ বিদ্যালয়ের দেয়ালসহ বিভিন্ন এলাকার দেয়ালে শোভা পাচ্ছে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের আঁকা রঙিন প্রতিবাদী গ্রাফিতি। চলতি মাসের ৬ তারিখ থেকে শুরু হয়ে এসব গ্রাফিতি আঁকা বুধবার (১৪ আগস্ট) পর্যন্ত চলমান আছে। আরও দুই দিন পর্যন্ত এই কর্মসূচি চলবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। 

সুনামগঞ্জের গুরুত্বপূর্ণ সড়কের দেয়ালে নেই আর কোনো রাজনৈতিক দলের স্লোগান। কিংবা দলীয় নেতাদের পোস্টার। সব সড়কের গুরুত্বপূর্ণ দেয়ালে ঠাঁই করে নিয়েছে আবেগের প্রতিবাদের রঙিন গ্রাফিতি ও দেয়াল লিখন। সেখানে জায়গা করে নিয়েছে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মানবিক এক দেশ গড়ার আওয়াজ। পথচারী থেকে শিক্ষার্থী সবার নজর কাড়ছে এসব গ্রাফিতি।

বিদ্রোহী কবি কাজি নজরুলের ‘বল বীর চির উন্নত মম শির’, কারো কাছা হাতের ছোঁয়ায় বন্ধুর প্রতি আহ্বান ‘মনুষ্যত্বহীন হইও না বন্ধু’ শাসকের শাসনে কোণঠাসা মানুষদের জানানো হয়েছে ‘নতুন বাংলায় আপনাকে স্বাগত’, ‘এ বাংলায় স্বৈরাচারের ঠাঁই নাই’, ২৮ বছর আগে গুম হওয়া পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর অধিকার আদায়ের নেত্রী ‘কল্পনা চাকমা কোথায়?’—এমন প্রশ্নও ঠাঁই পেয়েছে দেয়ালে।

মুষ্টিবদ্ধ হাত, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের হাতে প্ল্যাকার্ড, উপরে উড়ছে শাসকের হেলিকপ্টার, পাশে লেখা ‘হোক প্রতিবাদ’—এমন একটি গ্রাফিতি ঠাঁই করে নিয়েছে রিভারভিউ এলাকার দেয়ালে। শাসকের রুদ্ধদ্বার থেকে বন্দিদের আনতে লেখা হয়েছে, ‘কারার ঐ লৌহ কপাট’ অঙ্কিত আরেকটি গ্রাফিতি একই এলাকায় জায়গা করে নিয়েছে।

সুবোধ অনেক আগেই পালিয়েছে। কে এই সুবোধ না জানা গেলেও সারাদেশে এই গ্রাফিতির ব্যাপক পরিচিতি রয়েছে। সেখানে লেখা হতো ‘সুবোধ তুই পালিয়ে যা’। তবে সাম্প্রতিক বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সরকার বদলের কারণে সুবোধকে ফিরে আসার আহ্বান জানানো হয়েছে। সেখানে লেখা হয়েছে, ‘সুবোধ তুই ফিরে আয়, সময় এখন পক্ষে’। সুবোধের দু’হাতে রয়েছে খাঁচা বন্দি রক্তিম সূর্য। শহরের রিভার ভিউ এলাকায় এই গ্রাফিতিটি আঁকা হয়েছে। এ ছাড়া লাল-সবুজের পতাকা, বিকল্প কে? গুলিবিদ্ধ শিক্ষার্থী, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনেক গ্রাফিতি দেয়ালে দেয়ালে আঁকা হয়েছে।

সুনামগঞ্জ শহরের কমরেড বরুণ রায় সড়ক এলাকার দেয়ালে বুধবার একদল শিক্ষার্থী গ্রাফিতি আঁকছিলেন। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের এই শিক্ষার্থীদের রং-তুলির ছোঁয়ায় দেয়ালটিতে প্রাণের সঞ্চার হয়। তারা বাংলাদেশ শিরোনামে আঁকছে, বাংলাদেশ সংস্কৃতির প্রতিচ্ছবি, বাউল, ‘মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ও আদিবাসী’।

শিক্ষার্থী সাবা, সিমরাহ, রুপন্তি ও প্রভা ঢাকা পোস্টকে জানান, আমরা বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় ৩০ জন শিক্ষার্থী গ্রাফিতি আঁকছি। ২০২৪-এর ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে নতুন একটি স্বাধীনতা আমরা পেয়েছি। এর জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে। সবকিছু স্মরণীয় করে রাখবে দেয়ালের এই গ্রাফিতি।

শিক্ষার্থী শুভ তালুকদার বললেন, পুরো শহরে অনেক গ্রাফিতি আঁকা হচ্ছে। সবকিছুর মধ্যে দারুণ একটা পরিবর্তন হয়েছে। সবাই নিজের মত প্রকাশ করতে পারছেন। সামনে আমরা একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ চাই। একটি নিয়মতান্ত্রিক দেশ, যেখানে মানুষ ছবি আঁকতে পারবে, গান গাইতে পারবে, সিনেমা বানাতে পারবে—সেরকম দেশ চাই।

শিক্ষার্থী শতাব্দী দাশ ঢাকা পোস্টকে জানান, আমরা চাই, সবার মাঝে অসাম্প্রদায়িকতা বজায় থাকুক। সবার শান্তি ফিরে আসুক। আমি চেষ্টা করছি আমার আর্টের মাধ্যমে সমাজের সুন্দর দিকগুলো ফুটিয়ে তোলার। 

শিক্ষার্থী আলী আহনাফ অনি ঢাকা পোস্টকে জানান, আমরা একটি সুন্দর, শান্তিপূর্ণ দেশ চাই। যে দেশে সবাই মিলে-মিশে বেঁচে থাকতে পারবো। এই বিষয়গুলোকে পুরো শহরে গ্রাফিতির মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছি। নিজেদের সংস্কৃতি সবার মধ্যে তুলে ধরতে কয়েকদিন ধরে কাজ করছি।

সচেতন নাগরিকদের সংগঠন সুনামগঞ্জ জনউদ্যোগের আহ্বায়ক রমেন্দ্র কুমার দে মিন্টু বললেন, সমাজ পরিবর্তনে ও মানুষের সমস্যা সমাধানে গ্রাফিতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সুনামগঞ্জ শহরে আঁকা গ্রাফিতি মানুষের মাঝে প্রতিবাদ, দেশপ্রেম, সাম্য, সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্ববোধের বার্তা পৌঁছে দিচ্ছে।

সুনামগঞ্জের সচেতন নাগরিক ও সাংবাদিক খলিল রহমান ঢাকা পোস্টকে জানান, শিক্ষার্থীরা শহরের দেয়াল নতুন রূপে সাজাচ্ছেন যা সত্যিই প্রশংসনীয় কাজ৷ আমি তাদের সবার মঙ্গল কামনা করি।

এএমকে

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *