দুর্নীতির বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলনে টাকা বিতরণ ও হট্টগোল!  

দুর্নীতির বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলনে টাকা বিতরণ ও হট্টগোল!  

হজ ব্যবস্থাপনায় বিগত সময়ের দুর্নীতি, অনিয়মের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলনে এসে নিজেরাই জড়িয়ে পড়েছেন অনিয়মে। ভাড়া করা লোক এবং সঙ্গে করে নিয়ে আসা কিছু সাংবাদিকদের প্রকাশ্যে টাকা বিতরণ করেছে বৈষম্যবিরোধী হজ এজেন্সির মালিকদের ব্যানারে আসা কয়েকজন এজেন্সি মালিক। টাকা বিতরণের সময় হুড়োহুড়ি করতে গিয়ে বেশ কয়েকজন আহতও হয়েছেন।

হজ ব্যবস্থাপনায় বিগত সময়ের দুর্নীতি, অনিয়মের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলনে এসে নিজেরাই জড়িয়ে পড়েছেন অনিয়মে। ভাড়া করা লোক এবং সঙ্গে করে নিয়ে আসা কিছু সাংবাদিকদের প্রকাশ্যে টাকা বিতরণ করেছে বৈষম্যবিরোধী হজ এজেন্সির মালিকদের ব্যানারে আসা কয়েকজন এজেন্সি মালিক। টাকা বিতরণের সময় হুড়োহুড়ি করতে গিয়ে বেশ কয়েকজন আহতও হয়েছেন।

বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি সাগর রুনি মিলনায়তনে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় ডিআরইউ স্টাফরা তাদের নিবৃত করেন এবং ভাড়া করা লোক ও সাংবাদিকদের বের করে দেন। পুরো ঘটনার একটি ভিডিও রয়েছে ঢাকা পোস্টের কাছে।   

এদিন সকালে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে হজ এজেন্সি অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের (হাব) বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটির পদত্যাগ ও বিলুপ্তির দাবিতে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বৈষম্যবিরোধী হজ এজেন্সির মালিকদের ব্যানারে আসা কয়েকটি হজ এজেন্সির মালিকরা।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন হাবের সাবেক মহাসচিব রশিদ শাহ সম্রাট, বৈষম্যবিরোধী হজ এজেন্সির মালিকদের পক্ষে আহ্বায়ক আকতার উজ্জামান।

সংবাদ সম্মেলন শেষ হওয়ার পর হল রুমের ভেতরে ভাড়া করে নিয়ে আসা লোক ও কিছু সাংবাদিকদের মধ্যে টাকা বিতরণ করেন আয়োজকরা। এ টাকা নিতে গিয়ে হুড়োহুড়ি শুরু হয়। একপর্যায়ে সেখানে মারামারি লেগে যায়। সেখানে উপস্থিত ডিআরইউ স্টাফরা তাদের নিবৃত করে আয়োজকদের রুম থেকে বের হয়ে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেন।

টাকা বিতরণ কেন করছেন— জানতে চাইলে একজন এজেন্সি মালিক বলেন, সংবাদ সম্মেলনে বেশি লোক দেখানোর জন্য বলা হয়। সেজন্য আমরা কিছু লোক নিয়ে আসি। কিন্তু হল রুমে তাদের মধ্যে টাকা বিতরণ করতে গিয়ে এ ঝামেলা হবে তা বুঝতে পারিনি। কিছু সাংবাদিক নিয়ে আসার জন্য আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

এ ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে রশিদ শাহ সম্রাট বলেন, কারা টাকা বিতরণ করেছে, তাদেরকে আমি চিনি না। একই কথা জানান বৈষম্যবিরোধী হজ এজেন্সির মালিকদের পক্ষে আহ্বায়ক আকতার উজ্জামান।

হাবের নেতারা বলছেন, ৮ বছর আগে হজে টিকিটের সিন্ডিকেট, হাজী রিপ্লেস ও ট্রলি বাণিজ্য ছিল ওপেন সিক্রেট। ওই সময় হাবের মহাসচিব ছিল রশিদ শাহ সম্রাট। তার সময়ের হজ অব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রায়ই সংবাদপত্রে শিরোনাম হতো। পরবর্তীতে হজের সেই বিমান টিকিট বাণিজ্য, হাজী রিপ্লেস ও ট্রলি বাণিজ্য পুরোপুরি বন্ধ করা হয়েছে। এখন হজের ব্যবস্থাপনায় সবাই সন্তুষ্ট।

জানতে চাইলে হাবের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মাওলানা ইয়াকুব শরাফতী ঢাকা পোস্টকে বলেন, তাদের মূল দাবি হজের খরচ কমানো। সেই দাবির সঙ্গে আমরা একমত। ইতোমধ্যে প্রধান উপদেষ্টা ও ধর্ম উপদেষ্টাকে হজে খরচ কমানোর জন্য চিঠি দিয়েছি। আর বিমান ভাড়া কমানোর জন্য আমরা আগেও চেষ্টা করেছি, সেই চেষ্টা এখনও অব্যাহত রয়েছে। প্রতি বছর বিমান ভাড়া নিয়ে বাংলাদেশ বিমানের সঙ্গে আমাদের ঝগড়া পর্যন্ত হয়।

বিমানের টিকিটে গত ৮ বছরে কোনো সিন্ডিকেট হয়নি দাবি করে শরাফতী বলেন, যারা এই অভিযোগ করছেন তারাই এক সময় বিমান টিকিটের সিন্ডিকেট, হাজী রিপ্লেস ও ট্রলি বাণিজ্য করতেন। এগুলো আমরা বন্ধ করেছি। আগে হজে গেলে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স লাগতো। ২০১৮ সালে আমরা সেটা বাতিল করিয়েছি।

হাজিদের নিয়ে সিন্ডিকেট করার সুযোগ নেই দাবি করে শরাফতী বলেন, হাজিরা যেখানে ভালো সেবা পাবেন সেখানেই যাবেন। এটা সবার জন্য উন্মুক্ত।

হাব নির্বাচনে ছিলেন আপিল বিভাগের সদস্য, ৬ মাসের ব্যবধানে পাল্টালেন ভোল

হাবের ২০২৪-২০২৬ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। নির্বাচনে দুটি প্যানেল অংশগ্রহণ করে। নির্বাচনে সম্মিলিত ফোরাম থেকে ৪০৪ ভোটে তৃতীয়বারের মতো সভাপতি নির্বাচিত হয় শাহাদাত হোসাইন তসলিম। সেই নির্বাচনে আপিল বোর্ডের সদস্য ছিলেন বৈষম্যবিরোধী হজ এজেন্সির মালিকদের পক্ষের আহ্বায়ক আকতার উজ্জামান। তসলিম দায়িত্ব গ্রহণের দিনের অনুষ্ঠানেও উপস্থিত ছিলেন তিনি।

ছয় মাসের ব্যবধানে এখন তিনি ভোল পাল্টেছেন। নিজেকে বৈষম্যের শিকার দাবি করে সংবাদ সম্মেলনে মার্চ মাসের নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তার অভিযোগ, জাল ভোট ও পাতানো নির্বাচন করে অবৈধভাবে পরপর চার টার্মে মোট ৮ বছরের জন্য হাবের সভাপতি ও মহাসচিব ছিলেন শাহাদাত হোসাইন তসলিম।

অভিযোগের বিষয়ে হাবের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মাওলানা ইয়াকুব শরাফতী বলেন, তার এ অভিযোগ সত্য নয়। দুইবার সভাপতি এবং ছয় মাস আগে তৃতীয়বারের মতো সভাপতি নির্বাচিত হন তসলিম।

তিনি বলেন, হাবের গত নির্বাচন ছিল সবার অংশগ্রহণে। বাণিজ্য ও ধর্ম মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেই নির্বাচনে আমাদেরকে হেফাজত-বিএনপির ট্যাগ দেওয়া হয়েছে আর এখন আওয়ামী লীগের লোক। যারা অভিযোগ করছেন তারাই শেখ হাসিনার সেই ৪০০ কোটি টাকার পিয়ন জাহাঙ্গীরকে দিয়ে তাদের পক্ষে কাজ করিয়েছেন। আকতার উজ্জামান হাবের নির্বাচন আপিল বোর্ডের সদস্য ছিলেন। তিনিই এখন অভিযোগ করেছেন, নির্বাচনে সিন্ডিকেট হয়েছে।

এনএম/এমজে

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *