দীর্ঘ ৯ বছর পর অবরুদ্ধ পরিবার ফিরে পেল মুক্ত যাতায়াতের রাস্তা

দীর্ঘ ৯ বছর পর অবরুদ্ধ পরিবার ফিরে পেল মুক্ত যাতায়াতের রাস্তা

মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার বেজগাঁও গ্রামে সাতটি পরিবারকে দীর্ঘ ৯ বছর বাড়িতে প্রবেশের রাস্তা বন্ধ করে উঁচু দেয়াল নির্মাণ করে অবরুদ্ধ রাখার অভিযোগ পাওয়া গেছে ওই এলাকার জাপান প্রবাসী হৃদয় বেপারীর বিরুদ্ধে। এলাকাবাসীর সহায়তায় শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) ভুক্তভোগী পরিবারগুলো দেয়াল ভেঙে এখন চলাচল করতে পারছে।

মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার বেজগাঁও গ্রামে সাতটি পরিবারকে দীর্ঘ ৯ বছর বাড়িতে প্রবেশের রাস্তা বন্ধ করে উঁচু দেয়াল নির্মাণ করে অবরুদ্ধ রাখার অভিযোগ পাওয়া গেছে ওই এলাকার জাপান প্রবাসী হৃদয় বেপারীর বিরুদ্ধে। এলাকাবাসীর সহায়তায় শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) ভুক্তভোগী পরিবারগুলো দেয়াল ভেঙে এখন চলাচল করতে পারছে।

জানা গেছে, উপজেলার বেজগাঁও ইউনিয়নের বেজগাঁও গ্রামের ২নং ওয়ার্ডের বাবুর বাড়ি-সংলগ্ন প্রাইমারি স্কুলের উত্তর পাশের পশ্চিম অংশে বসবাস করে সাতটি পরিবার। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওই সাত পরিবারের বের হওয়ার রাস্তায় দীর্ঘ ৯ বছর আগে দেয়াল নির্মাণ করেন একই এলাকার হৃদয় বেপারী। এরপর উঁচু দেয়াল নির্মাণ করে অবরুদ্ধ করে  রাখার অভিযোগ তোলেন ওই সাত পরিবারের একজন রুবেল ও তার গংরা। 

ভুক্তভোগী পরিবারের লোকজন দাবি করে, জোর করে জায়গা দখল করে দেয়াল দিয়েছিলেন হৃদয় বেপারী। স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বেশ কয়েকটি পরিবারের রাস্তায় দীর্ঘদিন দেয়াল তৈরি করে রাখা হয়। তাদের প্রবেশ ও বের হয়ে চলাচলের সহজ কোনো রাস্তা ছিল না। অনেকটা সড়ক ঘুরে বর্ষায় নৌকা দিয়ে বাড়ি থেকে বের হওয়া লাগত তাদের।  যার কারণে ওই স্থানে বসবাস করা কয়েকটি পরিবার কষ্টে এলাকা ছেড়ে ঢাকায় বসবাস শুরু করে। 

জাপান প্রবাসী হৃদয় বেপারী সে নিজের ক্রয়কৃত জায়গা দাবি করে রাস্তা বন্ধ করে দেয়াল নির্মাণ করেন। উভয়পক্ষ বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার বসলেও এর কোনো সমাধান হয়নি। বিগত সরকার বিদায় নেওয়ায় এখন ভুক্তভোগী ওই পরিবারগুলো এলাকাবাসীর সহায়তায় দেয়াল ভেঙে বাড়িতে প্রবেশ ও বের হওয়ার রাস্তা তৈরি করেছে।

ভুক্তভোগী ওই সাত পরিবারের একজন মো. রুবেল খান (৩৪)। তিনি বলেন, আমি পৈত্রিক সূত্রে এই জমির মালিক। বিগত বছরগুলো আমাদের অনেক কষ্ট করে জীবনযাপন করতে হয়েছে। বিগত ৯ বছর হৃদয়ের বেপারী এবং তার আত্মীয়-স্বজনদের কাছে আমি অনেক অনুরোধ করেছি বাড়িতে আসা-যাওয়ার একটু রাস্তার জন্য। উনি প্রবাসে থাকলেও ওনার আত্মীয়-স্বজন জোর করে এখানে দেয়াল তৈরি করেন। তারা আমার কোনো কথাই শোনেননি। উলটো আমাকে আরও ভয় দেখিয়ে বলেছেন, এখানে দেয়াল করবোই। জীবনের ভয়ে অন্যের কাছে কোনো সাহায্য চাইনি। এমনকি আমাকে আইনের সহযোগিতা নিতে দেয়নি। সে আওয়ামী লীগের বড় বড় নেতাদের নিয়ে এসে বাড়িতে আনন্দ-ফুর্তি করেছেন। ভয়ে আমি চুপ ছিলাম। এখন মনে সাহস এসেছে, এলাকাবাসীকে সঙ্গে নিয়ে বাড়িতে প্রবেশের রাস্তার জন্য দেয়াল ভেঙে ফেলেছি। এখান দিয়ে গেট করে বাড়িতে প্রবেশের রাস্তা তৈরি করব।

ভুক্তভোগী রানু বেগম (৬৫) বলেন, ১৯৭১ সালে আমি এই বাড়িতে এসেছি। এখানো এখানেই বসবাস করছি। তবে দীর্ঘ ৯ বছর অবরুদ্ধ ছিলাম, বাড়িতে প্রবেশ ও বের হওয়ার রাস্তা বন্ধ থাকায়। আমার রোপণকৃত অসংখ্য কাঁঠাল গাছ ও তারা কেটে ফেলা হয়। দেয়াল তৈরি করার সময় বাধা দিয়েছি, কোনো কাজ হয়নি। আমার স্বামী একজন প্রতিবন্ধী। সে কিছু বলতে পারে না, তবে চোখে সবই দেখতে পান এবং বুঝতে পারেন। তিন ইশারায় তাদেরকে (হৃদয় বেপারী) বলেছেন, এই জমির মালিক আমরা কিন্তু তারা কোনো কথাই শোনেননি। দেয়াল করে দিয়েছেন।

একই গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা মো. বাবুল সরকার বলেন, দেয়াল করা হয়েছে এটা আমরা দেখেছি, কিন্তু ভয়ে কিছু বলতে পারিনি। অবরুদ্ধ ছিল দীর্ঘ কয়েক বছর, এটাও সত্য ঘটনা। এর মধ্যে হৃদয় বেপারী ক্রয়সূত্রে মালিক আর তাজল খা ও রুবেল—এরা পৈত্রিক সম্পত্তির মালিক। হৃদয় বেপারীর দোষ হচ্ছে, তিনি তার সুবিধার্থে ভূমি অফিসের কর্মকর্তাদের টাকা খাইয়ে অতিরিক্ত জায়গা দখল করছেন। ভালো করে চেক করলে তিনি সঠিক কাগজপত্র দেখাতে পারবে না।

ভুক্তভোগী পরিবারের একজন মো. বিদ্যুৎ খান বলেন, আমি প্রবাসী হৃদয় বেপারীকে একাধিকবার মোবাইল ফোনে বলেছি, ভাই দেওয়াল ভেঙে বাড়িতে যাওয়া-আসার রাস্তা করে দেন। এর জন্য যত টাকা খরচ হয় আমি নিজে দেব। তিনি আমার কথা শোনেননি। তিনি বারবার একই কথা বলেন—‘এটা আমার জায়গা’। এই রাস্তার জমি আমাদের বলে দাবি করেন বিদ্যুৎ খান।

প্রবাসী হৃদয় বেপারীর সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আল্লাহতায়ালা আমাকে অনেক অর্থ-সম্পদ দিয়েছেন। আমি অন্যের জমি দখল করিনি। যে স্থানে দেয়াল করা হয়েছে, এটি আমার নিজের জমি, তাদের (ওই সাত পরিবার) রাস্তা এটা না। আমরা দু-এক দিনের মধ্যেই কাগজপত্র নিয়ে বসব, যদি তাদের জমি হয় তহালে আমি ছেড়ে দেব। তবে আমার দেয়াল ভাঙাটা দুঃখজনক। শিগগিরই বসে একটি সমাধান করা হবে।

এ ব্যাপারে বেজঁগাও ইউনিয়ন পরিষদের ২নং ইউপি সদস্য মো. ইসমাইল মোল্লা বলেন, হৃদয় বেপারী দেয়াল দিলেও এর ভেতর দিয়ে বের হওয়ার মতো রাস্তা ছিল। এখন আমি জেনেছি, রুবেল ও তার ভাইয়েরা মিলে দেয়াল ভেঙে বড় রাস্তা তৈরি করেছে।

ব.ম শামীম/এএমকে

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *