মানুষকে কীভাবে নিয়মের মধ্যে আনতে হয় সেটা শিক্ষার্থীরা ভালোভাবে শিখিয়েছে। তাদের মতো করে জাতিকে এর আগে কেউ কখনো এভাবে শেখাতে পারেনি।
মানুষকে কীভাবে নিয়মের মধ্যে আনতে হয় সেটা শিক্ষার্থীরা ভালোভাবে শিখিয়েছে। তাদের মতো করে জাতিকে এর আগে কেউ কখনো এভাবে শেখাতে পারেনি।
শনিবার (১০ আগস্ট) রাজধানীর প্ল্যানার্স টাওয়ারে আয়োজিত ‘নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে পরিকল্পনাবিদদের প্রত্যাশা’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) পরিকল্পনাবিদরা এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানের মূল প্রবন্ধে বিআইপির সাধারণ সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ শেখ মুহম্মদ মেহেদী আহসান বলেন, একটা নগরকে কীভাবে গড়তে হয়, কীভাবে নিয়মের মধ্যে আনতে হয় সেটা শিক্ষার্থীরা যেভাবে জাতিকে শিখিয়েছে, সেভাবে আর কেউ শেখাতে পারেনি কখনো।
তিনি আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন, সংবিধানের ক্ষমতা কাঠামোর ভারসাম্য পুনরুদ্ধার, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন পরিচালনা, বিচার বিভাগ, নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, মানবাধিকার কমিশনের স্বাধীন পরিচালনা, সরকারি, আধাসরকারি ও স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে শুদ্ধি অভিযান পরিচালনার পরামর্শ প্রদান করেন।
শেখ মুহম্মদ মেহেদী আহসান বলেন, বাংলাদেশের সব এলাকার জন্য নগর, অঞ্চল ও গ্রামীণ পরিকল্পনা প্রণয়ন করা প্রয়োজন; এই সব পরিকল্পনা দলিলকে অনুসরণ করে সব ধরনের উন্নয়ন কর্মসূচি গ্রহণ করা এবং এতদসংক্রান্ত প্রতিষ্ঠান সমূহের পুনর্গঠন করা দরকার। এছাড়াও দেশের অর্থনৈতিক এবং স্থানিক (নগর, অঞ্চল ও গ্রামীণ) উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণে ও বাস্তবায়নে জন্য উপযুক্ত প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো তৈরি এবং পেশাজীবীদের যথাযথ সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করা এবং এতদ্সংক্রান্ত গবেষণার সুযোগ বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।
বিআইপির সহ-সভাপতি পরিকল্পনাবিদ সৈয়দ শাহরিয়ার আমিন বর্তমান পরিস্থিতিতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ঢেলে সাজানো, বহুত্ববাদ চর্চা করা, শোষণ ও বৈষম্য দূর করতে তথ্যের অবাধ প্রবাহ ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা, এবং স্থানিক পরিকল্পনা যথাযথ বাস্তবায়ন করার ওপর জোর দেন। এছাড়াও মুক্ত স্বাধীন গণমাধ্যম ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
বিআইপির যুগ্ম সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ তামজিদুল ইসলাম বলেন, স্থানীয় সরকারের ক্ষমতার ভারসাম্য আনতে চাইলে সরকার ব্যবস্থাপনার পরিবর্তন আনতে হবে। এর জন্য তিনি পার্শ্ববর্তী দেশ নেপালের কথা বলেন, যেখানে রয়েছে তিন স্তর বিশিষ্ট সরকার ব্যবস্থা। সুতরাং সে পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের দেশেও হবে তিন স্তর বিশিষ্ট। এখানে কেন্দ্রীয় সরকারের কাজ হবে নীতি নির্ধারণ ও উন্নয়ন করবে প্রাদেশিক এবং স্থানীয় সরকার। তাহলেই দেশের ভারসাম্য রক্ষা হবে। এবং ভিন্নমত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকতে হবে সবার।
বিআইপির কোষাধ্যক্ষ পরিকল্পনাবিদ ড. মোসলেহ উদ্দীন হাসান বলেন, সুষম নগরায়ণের জন্যে ঢাকাকেন্দ্রিক উন্নয়ন ধারণার বিকেন্দ্রীকরণ করে দেশের আঞ্চলিক পর্যায়ে উন্নয়ন নিশ্চিত করবার পরিকাঠামো ও অর্থায়ন নিশ্চিত করা দরকার।
বিআইপির সাবেক সভাপতি পরিকল্পনাবিদ আরিফুল ইসলাম বলেন, জাতীয় ভৌত পরিকল্পনা বাস্তবায়নে জোর দেওয়া, প্রকল্প গ্রহণে বৈষম্য দূর করা ও সার্বজনীন প্রকল্প গহণ করা, প্রকল্পের লোকেশন গ্রহণে বৈষম্য দূর করা এবং রাতের অন্ধকারে প্রকল্প গ্রহণ না করে জনগণের প্রয়োজনে প্রকল্প নেয়া প্রয়োজন।
সংবাদ সম্মেলন শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে বিআইপির সভাপতি পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, সুশাসন বাদ দিয়ে দেশের উন্নয়ন করা সম্ভব না। দেশের বেশি সংখ্যক মানুষকে সুবিধা দিতে হবে। খেলার মাঠ, ফাঁকা জায়গা এবং পার্ক উন্নয়নের নামে ধ্বংস করা যাবেনা। ‘গ্রাম হবে শহর’ বলে গ্রামের প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট করা যাবে না। এই জিনিসগুলো আগে পরিকল্পনাবিদরা বললেও পরিকল্পনা বাস্তবায়নে গ্রহণ করা হতো না। যেহেতু বিপ্লব পরবর্তী রাষ্ট্রে কাঠামোগত পরিবর্তনের উদ্যোগ নেওয়া সম্ভব, তাই সুশাসনের মাধ্যমে কম খরচে অধিক উন্নয়নের দিকে আমাদের হাঁটতে হবে।
এএসএস/এমএ