ছাত্র আন্দোলনে গুলিতে শিশুর মৃত্যু : মানবাধিকার কমিশনের সুয়োমোটো

ছাত্র আন্দোলনে গুলিতে শিশুর মৃত্যু : মানবাধিকার কমিশনের সুয়োমোটো

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গৃহে থেকেও গুলিতে শিশুর মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে স্বপ্রণোদিত অভিযোগ (সুয়োমটো) গ্রহণ করেছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। আন্দোলনে সম্পৃক্ত না থেকেও এ ধরনের মৃত্যু মানবাধিকারের স্পষ্ট লঙ্ঘন। কীভাবে এতগুলো নিষ্পাপ প্রাণ ঝড়ে পড়লো, তার প্রত্যেকটি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া সমীচীন বলে মনে করে কমিশন।

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গৃহে থেকেও গুলিতে শিশুর মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে স্বপ্রণোদিত অভিযোগ (সুয়োমটো) গ্রহণ করেছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। আন্দোলনে সম্পৃক্ত না থেকেও এ ধরনের মৃত্যু মানবাধিকারের স্পষ্ট লঙ্ঘন। কীভাবে এতগুলো নিষ্পাপ প্রাণ ঝড়ে পড়লো, তার প্রত্যেকটি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া সমীচীন বলে মনে করে কমিশন।

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা ইউশা রহমান বলেন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গৃহে থেকেও গুলিতে শিশুর মৃত্যু বিষয়ক কয়েকটি সংবাদ প্রতিবেদন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের নজরে এসেছে। এ বিষয়ে কমিশন স্বপ্রণোদিত অভিযোগ (সুয়োমটো) গ্রহণ করেছে।

কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ স্বাক্ষরিত সুয়োমটোর বিষয়বস্তুতে উল্লেখ করা হয়, গত ২৪ জুলাই ‘জানালায় দাঁড়াতেই গুলি এসে কেড়ে নিল শিশুটিকে’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। তাতে উল্লেখ করা হয়— ওইদিন (১৯ জুলাই) কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন চলাকালে মিরপুর কাফরুল থানার সামনের সড়কে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ হয়। এ সময় পুলিশের ছোড়া কাঁদানে গ্যাসের ধোঁয়া ঢুকছিল সামিরের ঘরে। জানালা বন্ধ করতে গেলে বাইরে থেকে গুলি এসে বিদ্ধ করে শিশুটিকে। গুলিটি তার চোখ দিয়ে ঢুকে মাথার পেছন দিয়ে বেরিয়ে যায়। পরবর্তীতে শিশুটিকে নিকটস্থ একটি বেসরকারি ক্লিনিকে নিয়ে গেলে ডাক্তার মৃত ঘোষণা করে।

গত ২৪ জুলাই পত্রিকায় “বাসার ছাদে বাবার কোলে ঢলে পড়ে ছোট্ট মেয়েটি” শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, দুপুরে খাওয়ার পর ছাদে খেলতে গিয়েছিল রিয়া। কিছুক্ষণ পরেই রাস্তায় সংঘর্ষ বাধে। বাসার সামনে চিল্লাপাল্লা শুনে বাবা ছুটে যান ছাদ থেকে মেয়েকে ঘরে আনতে। মেয়েকে কোলে নিতেই একটি বুলেট এসে বিদ্ধ হয় রিয়ার মাথায়। মুহূর্তেই ছোট্ট দেহটি ঢলে পড়ে বাবার কোলে।

গত ২৬ জুলাই “বারান্দায় দাঁড়ানো আহাদের ডান চোখে লাগে গুলি” শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বারান্দায় বাবা-মায়ের সঙ্গে দাঁড়িয়েছিল ছোট্ট আহাদ। বাসার নিচে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষ চলছে। আচমকা মেঝেতে লুটিয়ে পড়ে আহাদ। প্রথমে ভেবেছিল আহাদ হয়ত ভয় পেয়ে লুটিয়ে পড়েছে। কিন্তু রক্ত ঝড়তে দেখে আহাদকে দ্রুত ঢাকা মেডিকেলে নেওয়া হলে তাকে মৃত ঘোষণা করে চিকিৎসক।

পত্রিকায় “ফুল হয়ে ফোটার আগেই ঝরলো ওরা” শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে কয়েক দিনের সংঘর্ষে অন্তত ৯ জন শিশু গুলিতে নিহত হয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এসব শিশুর বয়স ৪ থেকে ১৬ বছরের মধ্যে।

প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে প্রাণ গেছে শিক্ষার্থীদের। এছাড়া আরও অনেক শিশু আহত হয়েছে। যাদের অনেকেই এখনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

সুয়োমটোতে উল্লেখ রয়েছে, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে শিশু মৃত্যুর যে মর্মান্তিক চিত্র ফুটে উঠেছে তা অত্যন্ত হৃদয়বিদারক ও মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। শান্তিপূর্ণ সভা বা সমাবেশ করা প্রত্যেক নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার। সেই শান্তিপূর্ণ আন্দোলন কীভাবে সহিংসতায় রূপ নিয়ে এতোগুলো শিশুর প্রাণ কেড়ে নিলো, তা প্রকাশ্যে আসা দরকার।

৯ জনের মধ্যে (৪ থেকে ১১ বছর) চারজন শিশু নিজেদের চরম নিরাপদ আশ্রয়স্থল ঘরের ভেতর পিতামাতার কোলের মধ্যে গুলিবিদ্ধ হয়, যা একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। 

আন্দোলনের সঙ্গে কোনোভাবেই সম্পৃক্ত না থেকেও এ ধরনের মৃত্যু মানবাধিকারের স্পষ্ট লঙ্ঘন। আন্দোলনে সম্পৃক্ত না থাকার পরেও কীভাবে এতগুলো নিষ্পাপ প্রাণ ঝড়ে পড়লো তার প্রত্যেকটি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া সমীচীন বলে মনে করে কমিশন।

এ অবস্থায় প্রকাশিত সংবাদে উল্লিখিত প্রতিটি শিশু মৃত্যুর দায় নিরূপণ করে দ্রুত প্রতিবেদন প্রেরণের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিবকে বলা হয়েছে। আগামী ১২ সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদনের দিন ধার্য করা হয়েছে।

জেইউ/এমজে

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *