চিকিৎসা খরচ যোগাতে পারছেন না গুলিবিদ্ধ বশির

চিকিৎসা খরচ যোগাতে পারছেন না গুলিবিদ্ধ বশির

গত ১৯ জুলাই বৈষম্যবিরাধী ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষার্থীদর পানি ও শরবত খাওয়াতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হন ভোলার মো. বশির উদ্দিন (৪০) নামের এক প্রাইভেট কার চালক। অর্থসংকটের কারণে উন্নত চিকিৎসা না পাওয়ায় গুলিবিদ্ধ স্থানে ইনফেকশন হয়ে ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছেন তিনি।

গত ১৯ জুলাই বৈষম্যবিরাধী ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষার্থীদর পানি ও শরবত খাওয়াতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হন ভোলার মো. বশির উদ্দিন (৪০) নামের এক প্রাইভেট কার চালক। অর্থসংকটের কারণে উন্নত চিকিৎসা না পাওয়ায় গুলিবিদ্ধ স্থানে ইনফেকশন হয়ে ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছেন তিনি।

বশির ভোলার দৌলতখান উপজলার চরপাতা ইউনিয়নের চৌধুরী মিয়ার-হাট গ্রামের আজম মালের বাড়ির মৃত মো. কুব্বাত আলী মাল ও মৃত রওশন আরা দম্পত্তির ছোট ছেলে। তিনি রাজধানী ঢাকার মিরপুর ১৩ নম্বর এলাকায় দুই সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন। সেখানেই একটি ভাড়ায় চালিত প্রাইভেট কার চালিয়ে সংসার চালাতেন বলে জানিয়েছে তার পরিবার। গত ১৯ জুলাই বিকেল পৌনে ৫টায় মিরপুর ১০ নম্বরে গুলিবিদ্ধ হন।

মুঠোফোনে বশির বলেন, ‘১৯ জুলাই শিক্ষার্থীদর পানি ও শরবত খাওয়ানোর পর আমি বিকেল পৌনে ৫টার দিকে বাড়ি ফেরার সময় পুলিশের সাথে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ শুরু হয়। এক পর্যায়ে মিরপুর ১০ নম্বরের বিআরটিএ অফিস সংলগ্ন আল শরীফ স্কুলের সামনে পুলিশের একটা গুলি আমার পেট ছিদ্র করে বেরিয়ে যায়। সাথে সাথেই আমি অজ্ঞান হয়ে পড়ি। পরে কী হয়েছে আমার কিছু মনে নাই। জ্ঞান ফেরার পর দেখি আমি হাসপাতালে। পরে ডাক্তার বলছে আমার ৬টা নাড়ি ছিদ্র করে পেছন দিয়ে গুলি বেরিয়ে গেছে।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘আমি ছাড়া আমার সংসারে উপার্জন করার মত কেউ নেই। আমি যদি মরে যাই তাহলে কীভাবে চলবে আমার সংসার? আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানে না। তাই সরকারের সহযোগিতা চাই।’

তার স্ত্রী হালিমা বেগম বলেন, ‘আমার স্বামী গুলিবিদ্ধ হওয়ার পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল নিয়ে যান। পরে তাকে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করাই। হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা দেওয়া হলেও বাহির থেকে দৈনিক প্রায় তিনশ টাকার ওষুধ কিনতে হয়। একদিকে টাকার অভাবে স্বামীর জন্য ওষুধ ও অন্যদিকে ছেলে-মেয়েদের খাওয়া-দাওয়া এবং সংসার চালাতে পারছি না।’

তিনি আরও বলেন, ‘সংসারের একমাত্র আয়ের উৎস আমার স্বামী দীর্ঘ দিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকায় সংসারের আয় বন্ধ। বড় মেয়ে সাদিয়া আক্তার এইচএসসি পরীক্ষার্থী, ছেলে মো. আসিফ তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। এখন আমি আমার সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়েও মহা চিন্তায় পড়েছি।’

বশিরের বড় ভাই মো. ফিরোজ মাল বলেন, ‘মোর ভাই তো আর আন্দোলন করতে যায় নায়, মানুষ হিসেবে বিবেকের তাড়নায় আমার ভাই আন্দোলনের পোলাইনদের ওট্টু (একটু) পানি খাওয়াইতে গেছে। এইডাই কি মোর ভাইর অন্যায়? মোর ভাইরে গুল্লি মারলো ক্যা? আল্লাহ না করুক যোদি মোর ভাইডা মইরা যায় তাহলে মোর ভাইচ্চতা-ভাইজি (ভাইয়ের ছেলে-মেয়ে) দুইডারে কে খাওয়াইব? মোরা ভাইরা অন্যের বদলা দিয়া (দিনমজুরি) খাই। নিজেরাই ঠিক মতন তিনবেলা খাইতে পারি না। মোরাও অনেক অসহায়।’

সরেজমিনে বশিরের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে জানা যায়, ৮ ভাই ১ বোনের সংসারে অভাবের তাড়নায় ২০০৩ সালে ঢাকাতে গিয়ে রিকশা চালাতেন বশির। গ্রামের বাড়িতে নেই ভিটেমাটি। বিগত কয়েক বছর আগে প্রাইভেট কার চালানো শিখে উপার্জন শুরু করেছিলেন। 

এমআইকে

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *