‘সবার ছোডু ছেরা আমার আয়াতুল্লাহ। হে আমার কলিজার টুকরা সন্তান আছিন। তারে নিয়া আমার অনেক স্বপ্ন আছিন। একদিন সে বড় হইয়া চাকরি কইরা সংসারের হাল ধরব। কিন্তু আমার হেই স্বপ্ন আর পূরণ হইল না। ছাত্র আন্দোলনের পক্ষে যাইয়া আমার গুলিতে শহীদ হইছে। যারা আমার আয়াতুল্লাহকে গুলি কইরা মারছে, সেই হত্যাকারীদের বিচার চাই।’
‘সবার ছোডু ছেরা আমার আয়াতুল্লাহ। হে আমার কলিজার টুকরা সন্তান আছিন। তারে নিয়া আমার অনেক স্বপ্ন আছিন। একদিন সে বড় হইয়া চাকরি কইরা সংসারের হাল ধরব। কিন্তু আমার হেই স্বপ্ন আর পূরণ হইল না। ছাত্র আন্দোলনের পক্ষে যাইয়া আমার গুলিতে শহীদ হইছে। যারা আমার আয়াতুল্লাহকে গুলি কইরা মারছে, সেই হত্যাকারীদের বিচার চাই।’
এভাবেই কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন সুনামগঞ্জের মধ্যনগরের চামরদানী ইউনিয়নের জলুসা গ্রামের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ আয়াতুল্লাহর মা সুভা আক্তার (৫২)।
এর আগে, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আনন্দ মিছিল গিয়ে গাজীপুর জেলার আনসার ভিডিপি অ্যাকাডেমির সামনে আনসার বাহিনীর গুলিতে গুলিবিদ্ধ হয় আয়াতুল্লাহ। এরপর তাকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। নিখোঁজের ১১ দিন পর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে আয়াতুল্লাহর মরদেহের সন্ধান পায় তার পরিবারের লোকজন।
আয়াতুল্লাহ তার বড় ভাই সোহাগ মিয়ার সঙ্গে গাজীপুরের কালিয়াকৈরে জামতলা এলাকায় থাকতো। তারা সেখানে গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে শ্রমিকের কাজ করতো।
নিহত আয়াতুল্লাহর বাড়ি সুনামগঞ্জের মধ্যনগর উপজেলার চামরদানী ইউনিয়নের জলুষা গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের কৃষক মো. সিরাজুল ইসলামের ছেলে।
আয়াতুল্লাহর বড় ভাই সোহাগ মিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার ভাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণ করতে গিয়ে শহীদ হয়েছে, এখন তাকে তো আমরা ফিরে পাব না। আমার ভাই আয়াতুল্লাহসহ যারা গুলিতে মারা গেছেন, সেসব হত্যাকারীদের কঠোর শাস্তির দাবি জানাচ্ছি এবং এই আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন প্রত্যেককে যেন রাষ্ট্রীয়ভাবে শহীদের মর্যাদা দেওয়া হয়—সেই দাবি জানাই।
সোমবার (১৯ আগস্ট) দুপুরে শহীদ আয়াতুল্লাহর পরিবারকে সমবেদনা জানাতে তার পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন মধ্যনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অতীশ দর্শী চাকমা ও মধ্যনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ এমরান হোসেন।
মধ্যনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ এমরান হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা শহীদ আয়াতুল্লাহর শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাতে তার বাড়িতে গিয়েছিলাম। এই পরিবারের জন্য সরকারি সব সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করাসহ তাদের দাবি-দাওয়ার বিষয়ে সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে বলে আশ্বস্ত করেছি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অতীশ দর্শী চাকমা ঢাকা পোস্টকে বলেন, শহীদ আয়াতুল্লাহর পরিবারকে আমাদের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সহায়তা করা হবে। স্থানীয় যারা আছেন, তারাও যেন পরিবারটির প্রতি সহমর্মিতার হাত বাড়িয়ে দেয়।
রায়হান আলীম তামিম/এএমকে