‘আন্দোলন ভিন্ন খাতে নেওয়ার চেষ্টা করছে রাবির চার শিক্ষার্থী’

‘আন্দোলন ভিন্ন খাতে নেওয়ার চেষ্টা করছে রাবির চার শিক্ষার্থী’

কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক পরিষদ থেকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা হওয়ার পর শিক্ষার্থীদের গোপনীয় তথ্য প্রকাশসহ সরকারের হয়ে ভূমিকা পালন করার অভিযোগ উঠেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) চার শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালান তারা।

কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক পরিষদ থেকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা হওয়ার পর শিক্ষার্থীদের গোপনীয় তথ্য প্রকাশসহ সরকারের হয়ে ভূমিকা পালন করার অভিযোগ উঠেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) চার শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালান তারা।

বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) বিকেল ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ বুদ্ধিজীবী চত্বরের সামনে সংবাদ সম্মেলনে করে এসব কথা বলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৭ সদস্য বিশিষ্ট সমন্বয়ক পরিষদ।

অভিযুক্ত শিক্ষার্থীরা হলেন– আরবি বিভাগের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ নেতা রেজওয়ান গাজী মহারাজ, দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ কর্মী আশিকুল্লাহ মুহিব, রাকসু আন্দোলন মঞ্চের সমন্বয়ক আব্দুল মজিদ অন্তর এবং পপুলেশন সায়েন্সের শিক্ষার্থী ও রাকসু আন্দোলনের সদস্য সচিব আমানুল্লাহ খান। এদের মধ্যে মহারাজ, মুহিব ও আমানুল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক ছিলেন এবং তাদের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন আব্দুল মজিদ অন্তর।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক এফআরএম ফাহিম রেজা বলেন, দীর্ঘ পরিশ্রম ও আন্দোলন-সংগ্রামের পর ছাত্র-নাগরিক গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন ঘটিয়ে আমরা অবশেষে স্বাধীনতার দেখা পেয়েছি। সংগ্রামের এই পথ মোটেও কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না। এর প্রতিটি পদে পদে ছিল ষড়যন্ত্র ও প্রতিবন্ধকতা। ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর দুমুখো সর্প বিভিন্ন সময় আমাদের আন্দোলনকে নস্যাৎ করার চেষ্টা করেছে। এ চারজন সাধারণ ছাত্রদের আবেগকে পুঁজি করে প্রশাসন ও ছাত্রলীগের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী কেন্দ্রের সঙ্গে সমন্বয় না করে নিজস্ব অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নের মাধ্যমে কথিত আন্দোলন পরিচালনা করার কারণে শিক্ষার্থীরা এক পর্যায়ে তাদের অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে।

তিনি বলেন, শুরু থেকে এই গোষ্ঠী ছাত্রলীগ, পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী আলাদা ব্যানারে, ভিন্ন কর্মসূচি দিয়ে আসছিল। তারা পুলিশ ও পশ্চিমাঞ্চল রেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে লিয়াজুঁ করে রেল চলাচলের শিডিউল মোতাবেক অর্থাৎ যে সময় রেল যোগাযোগ বন্ধ থাকে সেসময় কর্মসূচি পালন করে। সারা বাংলাদেশ যখন ব্লকরেইড কর্মসূচি পালন করে তখন তারা শুধু সংবাদ সম্মেলনের মতো হাস্যকর কর্মসূচি দেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে একজন সমন্বয়ক পদত্যাগ করে ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা কর্মসূচি থেকে অন্য তিন সমন্বয়ককে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে।

ফাহিম রেজা বলেন, আপনাদের মনে আছে, হেলিকপ্টার থেকে ব্রাশফায়ার করে গণহত্যার পরপরই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিশ্বাস ঘাতকতা করে এক মাসের জন্য আন্দোলন প্রত্যাহার করে একটা সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছিল। সেখানে ছাত্রলীগের রেজয়ানুল গাজী মহারাজ শিক্ষার্থীদের মামলা প্রত্যাহারের লোভ দেখিয়ে ডিজিএফআই কার্যালয়ে নিয়ে যায়। এরপরই ডিজিএফআইয়ের গাড়িতে করে তাদের নিয়ে এসে সংবাদ সম্মেলন করানো হয়। আগে থেকে আন্দোলনের অন্যান্য সমন্বয়ক ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের তথ্য প্রশাসনের কাছে ফাঁস করতে থাকে তারা। যার কারণে ১৫ জন শিক্ষার্থীসহ অজ্ঞাতনামা অনেকের নামে প্রায় ৭০ লাখ টাকার মামলা করেন ছাত্রলীগের এক নেতা।

তিনি আরও বলেন, এই সংবাদ সম্মেলনের পর রাজশাহীতে আন্দোলন স্তিমিত হয়ে পড়লে সাবেক সাংবাদিক রাশেদ রাজন শিক্ষার্থী এবং সক্রিয় সমন্বয়কদের সঙ্গে যোগাযোগ করে একটি কমিটি দেন। এই কমিটির কার্যক্রম মেনে নিতে না পেরে আব্দুল মজিদ অন্তর, আমানুল্লাহ, আশিকুল্লাহ মুহিব এবং রেজওয়ানুল গাজী মহারাজ ডিবির কাছে আন্দোলনকারীদের তথ্য ফাঁস করতে থাকে। আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক মেহেদী সজিব, ফাহিম রেজা এবং রাশেদ রাজনকে গ্রেপ্তার করানোর জন্য মাঠে নামেন। পরে ডিবি পুলিশ রাশেদ রাজনকে উঠিয়ে নিয়ে যেতে পারলেও পালিয়ে সরে আসেন ফাহিম এবং সজিব। ডিবি পুলিশ কার্যালয়ে ২৪ ঘণ্টা ধরে রাশেদ রাজনকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়।

ফাহিম রেজা বলেন, শুধু তাই নয়, বিজয়ের পরও তারা নানা কুচক্রী মহলের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃত্ব দখলের চেষ্টা চালাচ্ছে। আজ জাতির সামনে তাদের মুখোশ উন্মোচন করার মাধ্যমে আমরা জাতিকে তাদের ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্ক ও সচেতন থাকার পরামর্শ দিচ্ছি। সব অসাধু মহলকে সম্মিলিত উপায়ে প্রতিহত করে দিয়ে একটি সুন্দর, নিরাপদ ও দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়ার জন্য সবাইকে আহ্বান জানাচ্ছি। শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং সর্বমহলের কাছে রাষ্ট্র ও বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কারে সর্বাত্মক সহযোগিতা কামনা করছি।

এসময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৭ সদস্যের সমন্বয়ক পরিষদের ১৪ জন উপস্থিত ছিলেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত মো. আমান উল্লাহ খান বলেন, আজকের সংবাদ সম্মেলনে আমার নাম জড়িয়ে যারা আমার সঙ্গেই আন্দোলন শুরু করেছে তারা কিছু অভিযোগ তুলেছে। ছোট ভাইদের নিয়ে আমার ক্ষোভ বা অভিযোগ নাই। শুধু এটুকুই বলব তাদের কাছে সঠিক তথ্য পৌঁছায়নি। আর যদি তাদের কাছে বিশ্বাসযোগ্য তথ্য থাকে তবে তা জাতির কাছে প্রকাশ করা তাদের নৈতিক দায়িত্ব। সেক্ষেত্রে আমি তাদের সহযোগিতা করব।

অভিযুক্ত আব্দুল মজিদ অন্তর বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না এবং আমার কোনো ধারণা নেই। এ বিষয়ে আমার কারও সঙ্গে যোগাযোগও হয়নি।

এসএসএইচ

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *