মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সম্পর্কে যে ৭টি তথ্য জানা প্রয়োজন

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সম্পর্কে যে ৭টি তথ্য জানা প্রয়োজন

যুক্তরাষ্ট্রের ভোটাররা দেশের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করার জন্য ভোট দিতে চলেছেন। আমেরিকার পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) স্থানীয় সময় ভোর ৬টায় (গ্রিনিচ মান সময় ১১:০০) ভোটগ্রহণ শুরু হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের ভোটাররা দেশের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করার জন্য ভোট দিতে চলেছেন। আমেরিকার পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) স্থানীয় সময় ভোর ৬টায় (গ্রিনিচ মান সময় ১১:০০) ভোটগ্রহণ শুরু হবে।

ভোটগ্রহণ চলবে ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা সময় ধরে। পঞ্চাশটি অঙ্গরাজ্যে এবং ডিসট্রিক্ট অব কলাম্বিয়ায় ১৮ কোটি ৬০ লাখ ভোটার ভোট দিতে পারবেন। তবে বেশিরভাগ অঙ্গরাজ্যে ডাকযোগে ভোট এবং আগাম ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা থাকায় আট কোটির বেশি মানুষ ইতোমধ্যেই ভোট দিয়ে ফেলেছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের ৬০তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সম্পর্কে ৭টি তথ্য জেনে নেওয়া যাক…

কমালা হ্যারিস

ডেমোক্র্যাটিক পার্টির মনোনীত প্রার্থী ভাইস প্রেসিডেন্ট কমালা হ্যারিস। ৬০ বছর বয়সী হ্যারিস বিজয়ী হলে তিনি প্রথম নারী, প্রথম অশ্বেতাঙ্গ নারী ও প্রথম এশীয় নারী হিসেবে প্রেসিডেন্ট হবেন।

ডোনাল্ড ট্রাম্প

রিপাবলিকান পার্টির মনোনীত প্রার্থী সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি ২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ট্রাম্পের বয়স এখন ৭৮ বছর। তিনিই যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি বয়সী প্রেসিডেন্ট প্রার্থী।

বিজয়ী হলে তিনিই হবেন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সর্বজ্যেষ্ঠ প্রেসিডেন্ট।

তৃতীয় দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থী

বেশিরভাগ অঙ্গরাজ্যে চারটি ছোট দল বা স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ভোট দেওয়ার সুযোগ পাবেন ভোটাররা। তারা হলেন—

· জিল স্টেইন (গ্রিন পার্টি)

· চেইস অলিভার (লিবারটারিয়ান পার্টি)

· রবার্ট এফ. কেনেডি জুনিয়র (স্বতন্ত্র, নির্বাচন থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিলেও এখনো বেশিরভাগ অঙ্গরাজ্যের ব্যালটে তার নাম রয়েছে)

· করনেল ওয়েস্ট (স্বতন্ত্র)

আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে শুধু দেশটির নাগরিকরা ভোট দিতে পারেন। তাদের বয়স নির্বাচনের দিন বা তার আগেই ১৮ হতে হবে। পাশাপাশি, আবাসন সংক্রান্ত কিছু শর্ত মানতে হবে, যা একেক অঙ্গরাজ্যে একেক রকম।

চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত ১৮ কোটি ৬০ লাখ আমেরিকান ভোট দেওয়ার জন্য নিবন্ধন করেছেন। অর্থাৎ, ভোট দেওয়ার বয়স হয়েছে এমন প্রতি ১০ আমেরিকানের মধ্যে ৮ জনই নিবন্ধন করেছেন।

২০টি অঙ্গরাজ্য ও ওয়াশিংটন ডিসিতে ভোটের দিনও নিবন্ধন করা যায়।

ভোটগ্রহণ শুরুর সময়কাল প্রতিটি অঙ্গরাজ্যেই ভিন্ন ভিন্ন। ৫০টি অঙ্গরাজ্য ও ওয়াশিংটন ডিসিতে নির্বাচনের দিন সশরীরে ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা থাকে। ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয়েছিল ৩ নভেম্বর। এ বছরের ক্ষেত্রে দিনটি ৫ নভেম্বর।

পাশাপাশি, বেশিরভাগ অঙ্গরাজ্যে ডাকযোগেও ভোটের ব্যবস্থা থাকে। ভোটাররা চিঠির মাধ্যমে পূরণকৃত ব্যালট পেপার পাঠাতে পারেন অথবা কোনো সুনির্দিষ্ট ড্রপ-অফ স্থানে তা জমা দিয়ে যেতে পারেন।

বেশিরভাগ অঙ্গরাজ্যে আগাম ভোটেরও ব্যবস্থা থাকে। আগাম ভোটদানের সুযোগ কাজে লাগিয়ে ব্যক্তিগতভাবে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে বা ডাকযোগে এরই মধ্যে ৮ কোটিরও বেশি আমেরিকান ভোট দিয়েছেন।

৫ নভেম্বর সন্ধ্যায় সশরীরে ভোট দেওয়ার পালা শেষ হবে। প্রতিটি নির্বাচনী এলাকার নিজ নিজ আইন অনুযায়ী ভোট দেওয়ার সময়সীমা ঘোষণা করা আছে।

বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে ব্যালট গণনা ও কখন চিঠির মাধ্যমে আসা ভোট গ্রহণ করা যাবে, সে সংক্রান্ত আলাদা আলাদা আইন রয়েছে। এ কারণে কয়েকটি অঙ্গরাজ্যের চূড়ান্ত ফলাফল নির্বাচনের পরের দিন বা তারও পরে জানা যাবে।

২০২০ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করতে বেশ কয়েক দিন লেগে গিয়েছিল। এবারও এমন হতে পারে যে নতুন প্রেসিডেন্ট ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পদে বিজয়ীদের নাম জানতে ৫ নভেম্বরের বেশ কয়েকদিন পর পর্যন্ত অপেক্ষার প্রয়োজন দেখা দেবে।

আমেরিকার ভোটাররা যখন ভোট দেন, তখন তারা সরাসরি তাদের পছন্দের প্রেসিডেন্ট প্রার্থীকে তা দেন না। কারিগরি দিক দিয়ে চিন্তা করলে, তারা তাদের পছন্দের ইলেক্টর বেছে নেন, যারা ইলেক্টোরাল কলেজের অংশ। এরপর এই ইলেক্টররা প্রেসিডেন্ট বেছে নেন।

ইলেক্টোরাল কলেজ হচ্ছে এমন একটি প্রক্রিয়া, যেখানে প্রতিটি অঙ্গরাজ্য থেকে প্রতিনিধি বা ইলেক্টর বেছে নেওয়া হয়। প্রতিটি অঙ্গরাজ্যের ইলেক্টরের সংখ্যা ভিন্ন।

যারা আমেরিকার সংবিধানের বুনিয়াদ রচনা করেছিলেন, তাদের প্রত্যাশা ছিল প্রেসিডেন্ট পদের প্রার্থী একটি জাতীয় নির্বাচনের বদলে বেশ কয়েক দফা আঞ্চলিক নির্বাচন জিতে আসবেন, যাতে সেই প্রেসিডেন্ট আরও ভালো করে দেশের মানুষের নানামুখী স্বার্থের প্রতিনিধিত্ব করতে পারেন।

দুইটি অঙ্গরাজ্য (মেইন ও নেব্রাস্কা) ছাড়া, বিজয়ী প্রার্থীর পক্ষেই অঙ্গরাজ্যের সব ইলেক্টর যোগ হয়। এ ক্ষেত্রে পপুলার ভোটে দুই প্রার্থীর মধ্যে ব্যবধান যত ছোট কিংবা বড় হোক না কেন, তাতে কিছু পরিবর্তিত হয় না।

ইলেক্টরের সংখ্যা ৫৩৮, যা কখনও বদলায় না। এই সংখ্যাটি যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের মোট সদস্য সংখ্যার সমান— ৪৩৫ জন প্রতিনিধি, ১০০ জন সিনেটর ও কলাম্বিয়া ডিসট্রিক্টের তিন ইলেক্টর। প্রেসিডেন্ট হিসেবে জয়ী হতে হলে একজন প্রার্থীকে সংখ্যাগরিষ্ঠ ইলেক্টোরাল ভোট জিততে হয়, যা হলো অন্তত ২৭০।

যদি কোনো প্রার্থী ন্যূনতম ২৭০টি ইলেক্টোরাল ভোট না জেতেন, তাহলে হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভ প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করে থাকে। ১১ ডিসেম্বর নাগাদ প্রতিটি অঙ্গরাজ্যে ইলেক্টোরদের স্লেটকে সার্টিফাই বা বৈধতা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

এরপর ১৭ ডিসেম্বর ৫৩৮ ইলেক্টর তাদের নিজ নিজ অঙ্গরাজ্যের রাজধানীতে জমায়েত হয়ে তাদের ভোট দেবেন এবং সনদে সাক্ষর করবেন। ২৫ ডিসেম্বরের মধ্যে অবশ্যই ইলেক্টোরাল সনদগুলোকে ওয়াশিংটনে স্থানান্তর করতে হবে। এরপর ৬ জানুয়ারি কংগ্রেস একটি যৌথ অধিবেশনের মাধ্যমে ইলেক্টোরাল ভোটকে সার্টিফাই করে।

• প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পাশাপাশি, নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি সভার ৪৩৫ আসন ও উচ্চকক্ষ সিনেটের ১০০ আসনের মধ্যে ৩৪ আসনে নির্বাচন হবে।

• ৫০ অঙ্গরাজ্যের মধ্যে ১১টিতে নতুন গভর্নর পদে নির্বাচন হবে।

• সব মিলিয়ে এ বছর পাঁচ হাজারেরও বেশি স্থানীয়, অঙ্গরাজ্য পর্যায়ের ও কেন্দ্রীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।

এসব নির্বাচনের পাশাপাশি অনেক অঙ্গরাজ্যে রেফারেন্ডাম নামেও এক ধরনের ভোট হতে যাচ্ছে। এসব ক্ষেত্রে ব্যালটের মাধ্যমে গর্ভপাত আইন থেকে শুরু করে কর নীতিমালা, মারিজুয়ানার ব্যবহারসহ আরও বিভিন্ন বিষয়ে ভোটাররা সিদ্ধান্ত নেন। ভয়েস অব আমেরিকা

টিএম

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *