আইসিইউ নেই রাজশাহী বিভাগের ছয় জেলার হাসপাতালে

আইসিইউ নেই রাজশাহী বিভাগের ছয় জেলার হাসপাতালে

পুরো বিভাগে শুধুমাত্র রাজশাহী ও বগুড়া জেলায় রয়েছে নিবিড় পর্যবেক্ষণ ইউনিট (আইসিইউ) সুবিধা। এর বাইরে ছয় জেলার হাসপাতালগুলোতে নেই কোনো আইসিইউ। রোগীর জরুরি পরিস্থিতিতে পুরো বিভাগের অন্য সব জেলার রোগীদের একমাত্র ভরসা রামেক ও শজিমেক হাসপাতাল। জেলা সদরে আইসিইউ সুবিধা না থাকায় মুমূর্ষু রোগীদের দূরের হাসপাতালে নেওয়ার ক্ষেত্রে বাড়ছে মৃত্যুর ঝুঁকি।

পুরো বিভাগে শুধুমাত্র রাজশাহী ও বগুড়া জেলায় রয়েছে নিবিড় পর্যবেক্ষণ ইউনিট (আইসিইউ) সুবিধা। এর বাইরে ছয় জেলার হাসপাতালগুলোতে নেই কোনো আইসিইউ। রোগীর জরুরি পরিস্থিতিতে পুরো বিভাগের অন্য সব জেলার রোগীদের একমাত্র ভরসা রামেক ও শজিমেক হাসপাতাল। জেলা সদরে আইসিইউ সুবিধা না থাকায় মুমূর্ষু রোগীদের দূরের হাসপাতালে নেওয়ার ক্ষেত্রে বাড়ছে মৃত্যুর ঝুঁকি।

তবে বিভাগের অধিকাংশ হাসপাতালে আইসিইউ অনুমোদন রয়েছে। কিন্তু জনবলসহ বিভিন্ন সংকটের কারণে চালু করা সম্ভব হয়নি। ফলে আইসিইউ চালুর চেষ্টা চিঠি চালাচালি পর্যায়ে রয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

নিবিড় পরিচর্যা ইউনিট নিবিড় থেরাপি ইউনিট (আইটিইউ) বা ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ) নামেও পরিচিত। একটি হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যসেবা সুবিধার একটি বিশেষ বিভাগ। মুমূর্ষু রোগীদের জীবন বাঁচানোর ক্ষেত্রে এই সেবা দেওয়া হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পুরো বিভাগে মাত্র ৫০টি আইসিইউ বেডের মধ্যে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ৪০টি ও বগুড়া শহিদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে রয়েছে ১০টি। এছাড়া বিভাগের চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর, জয়পুরহাট, নওগাঁ, সিরাজগঞ্জ, পাবনা জেলার সদর হাসপাতালগুলোতে নেই কোনো আইসিইউ সুবিধা। ফলে এসব জেলার মুমূর্ষু রোগীদের আইসিইউ সাপোর্টের জন্য স্বজনদের ছুটতে হয় রামেক ও শজিমেক হাসপাতালে। সময় মতো হাসপাতালে নিতে না পারায় পথেই মৃত্যু হয় অনেক রোগীর। রামেক হাসপাতলের একটি সূত্র বলছে, বিভাগের বিভিন্ন জেলা থেকে মুমূর্ষ রোগীরা এখানে ভার্তি হয়। অনেক সময় রোগীর অবস্থা খুব জটিল হওয়ার কারণে দ্রুত আইসিইউতে দেন চিকিৎসকরা। লিমিট থাকায় আইসিইউ বেড পাওয়া নিয়ে রোগীর স্বজনদের সিরিয়াল নিতে হয়। ফাঁকা হলে তারপরে রোগীকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। আবার আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় অনেকের মৃত্যু হয়। কারণ রোগীর যে সময়টা আইসিইউ সাপোর্ট প্রয়োজন ছিল তখন পায়নি। সেক্ষেত্রে জেলার হাসপাতালগুলোতে এই সুবিধা থাকলে রামেকের ওপর চাপ কমত। যেসব রোগীর বাড়ি প্রতন্ত গ্রামে তাদের হাসপাতালে আসতে অনেক সময় নষ্ট হয়। সে ক্ষেত্রে ঝুঁকি বেড়ে যায়।

রামেক হাসপাতালে রোগীর স্বজন মিলন ইসলাম বলেন, মুমূর্ষ রোগীদের জীবন বাঁচাতে আইসিইউ চিকিৎসা অনেক ভূমিকা রাখে। অনেক গুরুত্বর রোগী আইসিইউতে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছেন। আবার সময় মত আইসিইউতে চিকিৎসা না পেয়ে অনেকের মৃত্যু হয়েছে। অনেক সময় দেখা যায় গুরুত্বর রোগী জেলা সদর হাসপাতালগুলোতে রাখতে চায় না চিকিৎসকরা। কারণ সেখানে সর্বোচ্চ পর্যায়ে চিকিৎসা সেবা আইসিইউ সুবিধা নেই। তাই তারা রোগীদের বড় হাসপাতালে রেফার্ড করে।

গত ১৩ অক্টোবর নাটোরের বড়াইগ্রামে জয়ন্ত (২৪) নামের এক যুবক গুরুতর অসুস্থ হন। তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লক্সে নেওয়ার পরে শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় সেখান থেকে রামেক হাসপাতালে রেফার্ড করে। পথে তার মৃত্যু হয়। রামেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, তার হাসপাতালে আসার আগেই মৃত্যু হয়েছে।

আইসিইউ সুবিধা নেয় জয়পুরহাট ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে। এ বিষয়ে জয়পুরহাট ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে তত্ত্বাবধায়ক ডা. সরদার রাশেদ মোবারক বলেন, হাসপাতালে ১০ শয্যা বিশিষ্ট আইসিইউ রয়েছে। তবে জনবলের অভাবে সেটি উদ্বোধন করা হয়নি। কয়েকবার সরকারকে জনবলের জন্য চিঠি দিয়েও কাজ হয়নি।

অপরদিকে, সিরাজগঞ্জের ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতাল এবং শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কোনটিতেই চালু নেই (আইসিইউ)। এর মধ্যে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে আইসিইউ করার জন্য একটি ভবন সম্প্রসারণের কাজ চলছে ও মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেই পর্যাপ্ত জনবল ও মেশিনারি।

এ বিষয়ে হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) মো. ফরিদুল ইসলাম বলেন, আমাদের আইসিইউ স্থাপনের জন্য একটি ভবন সম্প্রসারণের কাজ চলছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সেটার কাজ শেষ হওয়ার কথা, তারপর চালু করা হবে। সম্প্রসারিত ভবনে ১০ শয্যার আইসিইউ করার কথা রয়েছে। শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এখানে ১০ শয্যার আইসিইউ থাকলেও জনবল সংকট ও কিছু মেশিনারি না থাকার কারণে চালু করা যাচ্ছে না। এছাড়া আরও অনেক বিভাগে জনবল সংকট রয়েছে। যেমন, এখানে ১৬টি অপারেশন থিয়েটার (ওটি) থাকলেও সে তুলনায় পর্যাপ্ত এনেস্থিসিয়ান নেই। এসকল সংকট কাটলেই আমাদের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ) চালু করা হবে।

এছাড়া নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালে ভারপ্রাপ্ত আরএমও ডা. সৌরাভ আলী সম্রাট বলেন, নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালে আইসিইউ নেই। তবে নির্মাণাধীন ২৫০ শয্যা হাসপাতালে আইসিইউ করার কথা রয়েছে। ২৫০ শয্যার সকল কার্যক্রম শেষ হলে আইসিইউ চালু হবে।

অপরদিকে, ২৫০ শয্যা নওগাঁ জেনারেল হাসপাতালের আইসিইউ বেডগুলো রয়েছে স্টোররুমে। এ বিষয়ে হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত আরএমও) ডা. আবু আনছার আলী বলেন, করোনার প্রকোপ কিছুটা কমার পর এখানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে ২০২১ সালে ২টি বিশেষায়িত শয্যার আইসিইউ চালুর অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। এরপর হাসপাতালে দুইটি আইসিইউ বেড সরবরাহ করে স্বাস্থ্য বিভাগ। তবে বেড ছাড়া প্রয়োজনীয় অন্যান্য সরঞ্জামগুলোর কিছুই তাদের পক্ষ থেকে সরবরাহ করা হয়নি। ভেন্টিলেটর এবং মনিটরসহ অন্যান্য সামগ্রীগুলো পেতে অসংখ্যবার কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের (সিএমএসডি) সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও খুব এটা সাড়া মেলেনি।

তিনি বলেন, আইসিইউ না থাকায় সংকটাপন্ন রোগীদের পার্শ্ববর্তী রাজশাহী অথবা বগুড়া জেলায় পাঠাতে হয়। অনেক ক্ষেত্রে আইসিইউ এর অভাবে তাদের বাঁচানো সম্ভব হয় না। আইসিইউ বেডগুলো এখন স্টোররুমে রেখে নষ্ট হওয়ার পথে। এছাড়া আইসিইউ চালু করতে প্রয়োজনীয় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদলসহ অভিজ্ঞ নার্স প্রয়োজন। আমাদের হাসপাতালে এখনো জনবল সংকট রয়েছে। তাই এখানে আইসিইউ চালু করা অনেকটাই চ্যালেঞ্জিং।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সিভিল সার্জন ডা. এসএম মাহমুদুর রশিদ বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে আইসিইউ বেডের সুবিধা নেই। ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালে আইসিইউ ব্যবস্থা চালুর জন্য অবকাঠামো নির্মাণ হয়েছে তবে যন্ত্রপাতি ও জনবল সংকটের কারণে এখনো চালু করা হয়নি।

এছাড়া শহিদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে ১০টি আইসিইউ বেড রয়েছে বলে জানায়, শজিমেক হাসপাতালের উপপরিচালক আব্দুল ওয়াদুদ। তিনি বলেন, আরও আইসিইউ বেড প্রয়োজন হাসপাতালের জন্য।

এ বিষয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মুখপাত্র ডা. শংকর কে বিশ্বাস বলেন, হাসপাতালে ৪০টি আইসিইউ বেড রয়েছে। কোনো সময় বেড ফাঁকা থাকে না। জেলা সদর হাসপাতালগুলো ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ সুবিধা নেই। থাকলে রামেক হাসপাতালে চাপ কম হতো। একই সাথে হাসপাতালের আইসিইউ চিকিৎসার মানও ভালো হতো।

তিনি আরও বলেন, রাজশাহী হাসপাতালের চিকিৎসা প্রাইভেট ক্লিনিক ও হাসপাতালের চেয়ে অনেক ভালো। এছাড়া হাসপাতালে বেডের চেয়ে তিন গুণ বেশি রোগী চিকিৎসা নেই। সঙ্গত কারণে মুমূর্ষু রোগীদের জন্য আইসিইউ প্রয়োজন হয়।

বিষয়টি নিয়ে রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. আনোয়ারুল কবীরের মোবাইল ফোনে কল করলে তিনি কিছুক্ষণ পরে ফোন করতে বলেন। তবে আধা ঘণ্টা পরে কল করা হলে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তাই এ বিষয়ে তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

আরকে

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *