অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর (দলিত, হরিজন, তফশিলি) উন্নয়নে আর্থসামাজিক ও সংখ্যাতাত্ত্বিক জরিপের উদ্যোগ নিয়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন।
অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর (দলিত, হরিজন, তফশিলি) উন্নয়নে আর্থসামাজিক ও সংখ্যাতাত্ত্বিক জরিপের উদ্যোগ নিয়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন।
কমিশনের উদ্যোগে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো এই কার্যক্রম পরিচালনা করবে।
বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) দুপুরে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সভাকক্ষে অংশীজনের সঙ্গে দলিতদের উপর বিশেষ জনশুমারি বিষয়ক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় শুমারির যৌক্তিকতা বিষয়ক উপস্থাপনা, বিষয়ভিত্তিক ধারণাপত্র উপস্থাপনা ও উন্মুক্ত আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর মধ্যে দলিত ও হরিজনসহ পৃথক পৃথক জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিগণ অংশগ্রহণ করেন।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা ইউশা রহমান জানান, বাংলাদেশে বসবাসরত অনগ্রসর জনগোষ্ঠী যেমন দলিত ও হরিজনসহ বিভিন্ন প্রকার তফশিলি জনগোষ্ঠীর উন্নয়নের ক্ষেত্রে আর্থসামাজিক অবস্থা নিয়ে পরিসংখ্যান ও জরিপ না থাকায় তাদের অবস্থার উন্নয়নে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ দুষ্কর হয়ে পড়ে। বিষয়টি বিবেচনা করে আর্থসামাজিক ও সংখ্যাতাত্ত্বিক জরিপের উদ্যোগ নিয়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন।
সভায় আলোচনায় উঠে আসে, সকলে অনগ্রসর জনগোষ্ঠী হলেও তারা সকলে দলিত পরিচয়ে পরিচিত হতে আগ্রহী নন। প্রত্যেকে নিজ নিজ নামে পরিচিত হতে ইচ্ছা প্রকাশ করেন।
তারা জানান, জন্ম ও পেশাগত কারণে তারা ভিন্ন ভিন্ন নামে পরিচিত। তাদের অনেকেই দরিদ্র কিন্তু সকলে অস্পৃশ্য নয় বলে জানান।
আলোচনার প্রেক্ষিতে আর্থসামাজিক অবস্থা নির্ধারণের জন্য একটি আর্থসামাজিক জরিপ ও জনসংখ্যা নির্ধারণের জন্য জনশুমারি করা যেতে পারে বলে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো প্রতিনিধি জানান। এ সময় এই অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর বিষয়ে ধারণা সংজ্ঞা নির্ধারণের বিষয়টি আলোচনায় উঠে আসে।
এ সময় বক্তারা জানান মাঠপর্যায়ে বড় পরিসরে কাজ করে শুমারি পরিচালনা করতে হবে। জনশুমারির পরিসর ও প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচকগণ এই জনগোষ্ঠীর পূর্ণাঙ্গ চিত্র তুলে আনার প্রয়োজনে সরাসরি মাঠপর্যায়ে সম্পৃক্ত হয়ে জরিপ পরিচালনার গুরুত্ব তুলে ধরেন এবং এই কর্মকাণ্ডে অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর সম্পৃক্ততার প্রয়োজনীয়তার কথা জানান।
এ সময় কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ কার্যকরভাবে জনশুমারি অনুষ্ঠানের প্রায়োগিক ও বাস্তবসম্মত বিষয়সমূহ সকলের সামনে তুলে ধরেন। পাশাপাশি, তিনি অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর মানবাধিকার নিশ্চিতে সামাজিক সচেতনতা ও ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নির্মাণের গুরুত্ব তুলে ধরেন।
উপস্থিত বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর সদস্যরা জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের গৃহীত পদক্ষেপের জন্য কৃতজ্ঞতা জানান।
সভাপতির বক্তব্যে কমিশন চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, দলিত জনগোষ্ঠীকে পেশাগত, ধর্মীয় ও জন্মগত পরিচয়ে সামাজিকভাবে পিছিয়ে রাখা হয়েছে। তারা অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষাগত ও অন্যান্য দিক দিয়ে বৈষম্যের শিকার। প্রত্যেক জনগোষ্ঠীর সকল অধিকার ও মর্যাদা নিশ্চিত করতে হবে৷ এ বিষয়ে সাংবিধানিক প্রতিশ্রুতি রয়েছে৷ কোনো জনগোষ্ঠীকেই পিছিয়ে রাখার কোনো সুযোগ নেই। অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর সব ধরনের অধিকার, রাষ্ট্রীয় ও নাগরিক সুবিধার অভিগম্যতা ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জনশুমারি একটি কার্যকর উদ্যোগ হতে পারে।
তিনি বলেন, মিরনজিল্লা ও ধলপুরের তেলেগু সুইপার কলোনি উচ্ছেদ ও হয়রানি বন্ধ ও পুনর্বাসন নিশ্চিতে কমিশন বরাবর সোচ্চার থেকেছে। ঝিমাইপুঞ্জিতে খাসিয়া সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা ও ভূমি অধিকার সুরক্ষায় কমিশন উক্ত স্থান পরিদর্শন করেছে এবং বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নিয়েছে। অনগ্রসর জনগোষ্ঠীগুলোর বাসস্থান, কর্মসংস্থান ও জীবন-জীবিকার বিষয়ে স্থায়িত্বশীল সমাধানের দিকে অগ্রসর হতে হবে।
সভায় উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সার্বক্ষণিক সদস্য মো. সেলিম রেজা, কংজরী চৌধুরী, ড. তানিয়া হক, ও আমিনুল হক।
জেইউ/এমএসএ