শেরপুরে কৃষিতে ক্ষতি অন্তত ৫শ কোটি, মৎস্যে শতকোটি

শেরপুরে কৃষিতে ক্ষতি অন্তত ৫শ কোটি, মৎস্যে শতকোটি

শেরপুরে নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করায় জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। তবে এখনও পানিবন্দি রয়েছে নিম্নাঞ্চলের অনেক পরিবার। দুর্ভোগে রয়েছেন পানিবন্দি এলাকার মানুষজন। এখনও অনেক জায়গাতেই পৌঁছেনি ত্রাণ সহায়তা। ওই সব এলাকায় বিরাজ করছে খাদ্য সংকট।

শেরপুরে নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করায় জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। তবে এখনও পানিবন্দি রয়েছে নিম্নাঞ্চলের অনেক পরিবার। দুর্ভোগে রয়েছেন পানিবন্দি এলাকার মানুষজন। এখনও অনেক জায়গাতেই পৌঁছেনি ত্রাণ সহায়তা। ওই সব এলাকায় বিরাজ করছে খাদ্য সংকট।

এদিকে সোমবার (৭ অক্টোবর) নকলায় রাহিম (৫) ও নালিতাবাড়ীতে জিমি আক্তার (৮) নামে দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে জেলার নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতী ও নকলা উপজেলায় গত পাঁচ দিনে বন্যার পানিতে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১ জনে।

অন্যদিকে বন্যায় কৃষিতে অন্তত পাঁচশ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আর মৎস্য খাতে ক্ষতি হয়েছে প্রায় শতকোটি টাকা। কৃষি বিভাগ ও মৎস্য বিভাগের তথ্যমতে, বন্যায় জেলার ৪৭ হাজার হেক্টর আবাদি জমির আমন ধান ঢলের পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া ১ হাজার হেক্টর জমির সবজি আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর মাছের ঘের তলিয়ে গেছে ৬ হাজার ৭১টি। এতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সরকারি হিসাবে প্রায় ৭১ কোটি টাকা হলেও তা শতকোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্তরা। আর সবমিলিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন জেলার অন্তত পৌনে দুই লাখ কৃষক।

সোম ও মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) জেলায় ভারী বৃষ্টিপাত হয়নি। তাছাড়া পাহাড়ি ঢলের পানি কমে যাওয়ায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। প্লাবিত অধিকাংশ এলাকার ঘরবাড়ির বিধ্বস্ত রূপ ভেসে উঠছে। পানি কমলেও বন্যা দুর্গত এলাকায় সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। এলাকাগুলোর বেশিরভাগ সড়ক ভেঙে গেছে। দুর্গত এলাকাগুলোতে দেখা দিয়েছে খাবার ও সুপেয় পানির সংকট। গৃহপালিত গরু-মহিষসহ গবাদি পশু এবং হাঁস-মুরগি নিয়ে বিপাকে পড়েছেন মানুষ। সবজি খেতসহ মাঠ ডুবে যাওয়ায় দেখা দিয়েছে ঘাসের অভাব। এ ছাড়া বাড়িঘরে পানি ওঠায় নষ্ট হয়ে গেছে খড়ের গাদা। ফলে একদিকে খাদ্য সংকট, অন্যদিকে মাথার ওপর চাল না থাকায় বহু মানুষ চরম কষ্টে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নকিবুজ্জামান খান জানান, মঙ্গলবার পর্যন্ত দুই দিন ধরে পাহাড়ি নদী ভোগাই, চেল্লাখালি, মহারশী ও সোমেশ্বরীর পানি বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ঝিনাইগাতী ও শ্রীবরদী উপজেলার বন্যার পানি অনেকটাই নেমে গেছে। নালিতাবাড়ী ও নকলা উপজেলাসহ সদর উপজেলার প্লাবিত এলাকা থেকেও পানি ধীরে ধীরে নেমে যাচ্ছে। দু’একদিনের মধ্যে বন্যা পরিস্থিতির আরও উন্নতি হতে পারে।

জেলা খামারবাড়ির উপ-পরিচালক ড. সুকল্প দাস বলেন, অতি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে চলতি আমন আবাদের সাড়ে ৯৩ হাজার হেক্টর জমির মধ্যে ৪৭ হাজার হেক্টর জমির আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সবজি আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১ হাজার হেক্টর। সব মিলিয়ে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, ক্ষতির পরিমাণ টাকার অঙ্কে পাঁচশ কোটি টাকা। বন্যার পানি নেমে গেলে ক্ষয়ক্ষতির সঠিক পরিমাণ নিরূপণ সম্ভব হবে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা তৈরি করে তাদের সার-বীজ দেওয়া হবে। এ ছাড়া কৃষকদের প্রণোদনা দেওয়ার বিষয়টি মন্ত্রণালয়ে জানানো হবে।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. এবিএম আব্দুর রউফ বলেন, সাম্প্রতিক বন্যায় জেলায় ৪৩ হাজার গরু, ৪৬০ মহিষ, ৭১ হাজার ছাগল-ভেড়া, ৫ লাখ ৮ হাজার মুরগি ও ১৮ হাজার হাঁস ক্ষতির মুখে পড়েছে। এর মধ্যে ৬৬ জন খামারি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। দুর্গত এলাকাগুলোতে অনেক প্রাণী খাদ্য সংকটে পড়েছে এবং নানা রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। এজন্য প্রাণিসম্পদ বিভাগের পক্ষ থেকে নিয়মিত কৃষকদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত গবাদিপশুর খামারিদের প্রণোদনার আওতায় নিয়ে আসা হবে। এ ছাড়া খাদ্য সংকট নিরসনে দুর্গত এলাকায় ৩ টন গোখাদ্য বিতরণ করা হবে।

এ ব্যাপারে শেরপুরের জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান বলেন, জেলায় বন্যা দুর্গত এলাকায় ত্রাণ সামগ্রী বিতরণের পাশাপাশি আশ্রয় কেন্দ্রে রান্না করা খাবার বিতরণ কার্যক্রম চলমান আছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। আর তাদের মধ্যে বিতরণের জন্য ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে টিন ও নগদ অর্থ বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। এলেই দ্রুত সময়ের মধ্যে সেগুলো বিতরণ করা হবে।

মো. নাইমুর রহমান তালুকদার/এসএসএইচ

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *