কুষ্টিয়ায় মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মরণে নির্মিত দৃষ্টিনন্দন ‘স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতা’ মঞ্চ অযত্নে-অবহেলায় কয়েকবছর ধরে পরিত্যক্ত পড়ে ছিল। মুক্তিযোদ্ধা, সাধারণ মানুষ ও স্থানীয়রা রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কারের দাবি জানালেও সংশ্লিষ্টদের কেউ উদ্যোগ নেননি। তবে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে থাকা সেই মঞ্চ চত্বর শিক্ষার্থীদের রং-তুলির ছোঁয়ায় প্রাণ ফিরে পেয়েছে।
কুষ্টিয়ায় মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মরণে নির্মিত দৃষ্টিনন্দন ‘স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতা’ মঞ্চ অযত্নে-অবহেলায় কয়েকবছর ধরে পরিত্যক্ত পড়ে ছিল। মুক্তিযোদ্ধা, সাধারণ মানুষ ও স্থানীয়রা রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কারের দাবি জানালেও সংশ্লিষ্টদের কেউ উদ্যোগ নেননি। তবে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে থাকা সেই মঞ্চ চত্বর শিক্ষার্থীদের রং-তুলির ছোঁয়ায় প্রাণ ফিরে পেয়েছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীদের উদ্যোগে সারাদেশের মতো গত কয়েকদিন ধরে কুষ্টিয়া শহরের বিভিন্ন স্থানে শত শত শিক্ষার্থীরা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ শুরু করে। পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচিতে নেমে ‘স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতা’ চত্বর সংস্কারের উদ্যোগ নেন তারা। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে দেয়ালে আঁকেন শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া যানবাহন নিয়ন্ত্রণে মোড়ে মোড়ে ট্রাফিকের দায়িত্বও পালন করেন শিক্ষার্থীরা।
শহরের এনএস রোডের পাশে ও পৌর বাজারের সামনে বাঙালির গৌরবজ্জ্বল সংগ্রামের ইতিহাসকে ধারণ করে নির্মিত মঞ্চটি এখন নতুনের মতো রঙিন। শিক্ষার্থীদের হাতের ছোঁয়ায় যেন নতুন করে জেগে উঠেছে।
মুক্তিযোদ্ধা ও স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, বেশ কয়েকবছর ধরে স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতা মঞ্চটি অবহেলায় ও অযত্নে পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল। ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে অবস্থান করছিল। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে ধারণ করে নির্মিত মঞ্চটি নষ্ট হয়ে যাচ্ছিল। ভাস্কর্যগুলোর রং নষ্ট হয়ে গিয়েছিল, অনেক জায়গায় ফেটে ও ভেঙে গিয়েছিল। তবে এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের কোনো মাথাব্যথা ছিল না। এটিকে যেভাবে সম্মান দেওয়ার কথা সেভাবে দেওয়া হয়নি। রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কারের দাবি জানালেও সংশ্লিষ্ট কেউ উদ্যোগ নেননি। তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে প্রাণ ফিরে পেয়েছে এই মঞ্চ।
স্থানীয়রা আরও বলেন, বেশ কয়েকবছর ধরে অযত্নে অবহেলায় স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতা মঞ্চটির পরিবেশ নোংরা অস্বস্তিকর ছিল। ওটা দেখভাল করার কেউ ছিল না। এটা খুবই দুঃখজনক। শহরের মাঝখানে কুষ্টিয়া পৌরসভা স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতা মঞ্চটি তৈরি করেছে। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণ করে না কেউ। ঠিকমতো রক্ষণাবেক্ষণ না করার জন্য সেখানে ময়লা আবর্জনার স্তূপ হয়। সেখানে প্রতিদিন বিভিন্ন জিনিসের দোকান বসে। পরিবেশটা খুবই নোংরা। মঞ্চটাকে যদি ঠিক রাখতে হয়, নামের মূল্যায়ন যদি করতে হয়, তাহলে রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে, এটার মর্যাদা দিতে হবে। শিক্ষার্থীদের এমন উদ্যোগে বুকের ভেতর এক নতুন আশার সঞ্চার করছে। শিক্ষার্থীদের এমন কাজে খুশি সবাই।
শিক্ষার্থীরা বলেন, কুষ্টিয়া পৌর বাজারের সামনে ও এনএস রোডের পাশে ১৯৭২ সালে নির্মিত স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতা মঞ্চটি অযত্নে-অবহেলায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছিল। মঞ্চের বড় লম্বা দেওয়ালে সুনিপুণ কারিগরি দক্ষতায় মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামের প্রেক্ষাপট তুলে ধরা হয়। রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কারের অভাবে ভাস্কর্যের চুনকাম ও পলেস্তারা উঠে গিয়ে জরাজীর্ণ অবস্থা হয়েছিল। অনেক স্থান ভেঙে ও ফেটে গিয়েছিল। এ ছাড়াও মঞ্চের বেষ্টনী না থাকায় সেখানে সাইকেল, ভ্যান, রিকশা পার্কিং করা হতো। অস্থায়ী দোকান বসানো হতো। অনেকে জুতা-স্যান্ডেল পরেই এটির উপর দিয়ে হাঁটাচলা করত। ‘স্বাধীকার থেকে স্বাধীনতা’ চত্বরের চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ময়লা-আবর্জনা পড়ে থাকত। সেটি আমারা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করেছি।
১৯৭২ সালে তৎকালীন কুষ্টিয়া পৌরসভার প্রশাসক ম. ম. রেজার উদ্যোগে ও নাগরিক কমিটির সহযোগিতায় ভাস্কর্যটি নির্মিত হয়। যেখানে স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতা চত্বরটি অবস্থিত সেখানে ১৯৭১ সালে পাক বাহিনী শক্তিশালী বোমা নিক্ষেপ করে। এতে সিরাজউদ্দৌলা সড়কসহ মিউনিসিপ্যাল মার্কেটের ব্যাপক ক্ষতি হয়। সেই সময় কুষ্টিয়া পৌরসভার প্রশাসক ম. ম. রেজা সাহেবের উদ্যোগে এবং তৎকালীন নাগরিক কমিটির সহযোগিতায় পরবর্তী প্রজন্মের কাছে স্বাধীনতার ইতিহাস তুলে ধরার জন্যে এই চত্বরটি নির্মাণ করা হয়। এই ভাস্কর্যটিতে স্বাধীনতার ইতিহাসের বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামের প্রেক্ষাপট তুলে ধরা হয়েছে।
রাজু আহমেদ/এএমকে