ভারত থেকে আসা উজানের ঢলের পানিতে প্লাবিত করেছে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ১১টি জেলা। এতে করে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন প্রায় ১০ লাখ মানুষ। অন্যদের মতো এ বিপুল বন্যাদুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়াতে ছবি বিক্রি করে অর্থ তুলে দিতে চান পঞ্চগড়ের মারুফ হাসান আবির নামের প্রফেশনাল ফটোগ্রাফার।
ভারত থেকে আসা উজানের ঢলের পানিতে প্লাবিত করেছে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ১১টি জেলা। এতে করে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন প্রায় ১০ লাখ মানুষ। অন্যদের মতো এ বিপুল বন্যাদুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়াতে ছবি বিক্রি করে অর্থ তুলে দিতে চান পঞ্চগড়ের মারুফ হাসান আবির নামের প্রফেশনাল ফটোগ্রাফার।
শুক্রবার (২৩ আগস্ট) রাত ৮টার দিকে মারুফ তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের টাইমলাইনে বন্যাকবলিত মানুষদের জন্য ছবি বিক্রি করতে পোস্ট দেন। ছবিগুলো যিনি কিনবেন সে অর্থগুলো বন্যাদুর্গত মানুষদের দিয়ে সহযোগিতা করতে চান।
মারুফ তার ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ‘আমার তোলা এই ছবিগুলো (ফেসবুকে পোস্টকৃত) আমি বিক্রি করতে চাই। বিক্রির পর সম্পূর্ণ অর্থ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রাণ সহায়তা ও পুনর্বাসনের কাজে ব্যয় করা হবে। প্রতিটি ছবি প্রিন্ট করে পাঠানো হবে, পরবর্তীতে আপনারা চাইলে সেটা ফ্রেম করে নিতে পারবেন। প্রতিটি ছবির মূল্য ৫০০ টাকা। আমি কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে এক সপ্তাহের মধ্যে ছবি পৌঁছে দেওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করব। কেউ ছবি কিনতে চাইলে আমাকে ম্যাসেজ করতে পারেন।’
ফেসবুক পোস্টের পর অনেকেই তার এই উদ্যোগকে বাহবা দিচ্ছেন। কেউ কেউ কিনতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন তার ছবি। তাহাশিনুল সীমান্ত, সেলিম হোসাইন, মনির হোসেনসহ অনেকেই একটি করে ছবি কিনতে চেয়েছেন।
ফটোগ্রাফার মারুফ হাসান আবির পঞ্চগড়ের ব্যবসায়ী মোখলেসুর রহমানের ছেলে। জেলার বিপি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার কলেজিয়েট ইনস্টিটিউট থেকে এইচএসসি পাস করে বর্তমানে পড়ালেখা করছেন রাজধানী ঢাকার ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশে (ইউল্যাব)। এ প্রতিষ্ঠানটি থেকে মিডিয়া স্টাডিজ ও জার্নালিজম বিভাগে ৬ষষ্ঠ সেমিস্টারে পড়াশোনা করছেন তিনি।
ছোটবেলা থেকেই ছবি তোলা নিয়ে ছিল তীব্র ঝোঁক। ২০১৬ সালের মাঝামাঝি সময়ে অষ্টম শ্রেণি থেকেই শুরু হয় ফটোগ্রাফির নেশা। পরিবারের অমত থাকলেও বেছে নেন ফটোগ্রাফিকে পেশা হিসেবে। তুলেছেন হাজার হাজার ছবি। অংশ নিয়েছেন বিভিন্ন প্রতিযোগিতায়। তার তোলা ছবি দেশ-বিদেশের ৩০টির বেশি আলোকচিত্র প্রতিযোগিতায় জায়গা করে নিয়েছে। দেশ বিদেশের অনেক সংবাদমাধ্যমে নিয়মিত ছাপা হয়েছে তার তোলা ছবি। ইংল্যান্ডের দ্য টেলিগ্রাফ পত্রিকা, বাংলাদেশের প্রথম আলো, ইত্তেফাক, যুগান্তরসহ অনেক পত্রিকায় তার ছবি প্রকাশ পেয়েছে।
২০১৮ সালে আন্তর্জাতিক ফাইন আর্ট ফটোগ্রাফি এক্সিবিশন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেন। ২০২০ সালে ক্রিয়েটিভ আইটি অনুষ্ঠিত ভিডিও ম্যাকিং কম্পিটশনে জায়গা করে নেন সেরা ৫ এ। ‘তোমার চোখে বাংলাদেশ’ ফটোগ্রাফি কম্পিটিশনে অংশ নিয়ে পঞ্চগড় জেলা চ্যাম্পিয়ন হন।
সে তার নিজের জেলা পঞ্চগড় ও দেশকে ছবির মাধ্যমে তুলে ধরেছেন সবার সামনে। প্রকৃতির ছবি তুলতেই বেশি পছন্দ মারুফের। ২০১৯ সালে পঞ্চগড়ের কিছু তরুণদের নিয়ে আলোকমিতি নামের একটা ওয়েডিং ফটোগ্রাফি ফার্ম গড়ে তুলেন। এ প্রতিষ্ঠানের বর্তমান ফটোগ্রাফার রয়েছেন ১৫ জনের মতো। তারা দেশজুড়ে কাজ করে যাচ্ছেন। ২০২২ সালে আরও ভালো কিছু করার লক্ষ্যে পাড়ি জমান ঢাকায়। ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশে (ইউল্যাব) থেকে পড়ালেখা করছেন মিডিয়া স্টাডিজ ও জার্নালিজম বিভাগে ৬ষষ্ঠ সেমিস্টারে। পড়াশোনার সম্পূর্ণ খরচ বহন করেন ছবি তোলার টাকা থেকে। তার তোলা ছবির মাধ্যমে নিজের দেশকে তুলে ধরতে চান সারাবিশ্বে।
ছবির বিক্রির কারণ হিসেবে মারুফ হাসান আবির ঢাকা পোস্টকে বলেন, বাংলাদেশে হঠাৎ করে বন্যা, বন্যা দুর্গত মানুষের করুণ অবস্থা দেখে আমাকে খুব ব্যথিত করেছে। অনেকেই সহযোগিতা করছেন। আমিও চাই সহযোগিতার হাত বাড়াতে। তাই আমার পক্ষে এই মুহূর্তে গিয়ে বন্যা কবলিত এলাকায় গিয়ে মানুষকে সাহায্য করা সম্ভব না। আসলে আমি আমার জায়গা থেকে কাজ করতে চেয়েছি। সবাই তো বিভিন্নভাবে সাহায্য করছে, তাই আমিও চেয়েছি কিছুটা সাহায্য করতে। আমি যেহেতু একজন ফটোগ্রাফার, সেই জন্য ভেবেছি আমার তোলা ছবিগুলো বিক্রি করে সেই অর্থ বন্যা কবলিত মানুষদের দেওয়ার ব্যাপারে। তাই ছবি বিক্রি করতে ফেসবুকে পোস্ট করেছি। যদি কেউ নিতে চান তাহলে সে অর্থ তুলে দিতে চাই বন্যা দুর্গত মানুষদের কাছে।
এসকে দোয়েল/এমএ