পানিফলে আগ্রহ বাড়ছে সাতক্ষীরার চাষিদের

পানিফলে আগ্রহ বাড়ছে সাতক্ষীরার চাষিদের

উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা চিংড়ি উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত। কিন্তু বর্তমানে এই জেলার কৃষকরা বিভিন্ন ফল উৎপাদনের দিকে ঝুঁকতে শুরু করেছেন। এর মধ্যে স্বল্প পরিশ্রম ও অধিক লাভ হওয়ায় পতিত জলাবদ্ধ জমিতে পানিফল চাষে আগ্রহ বেড়েছে কৃষকদের। প্রতি বছর বেড়েই চলেছে পানিফলের চাষ। এতে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার পাশাপাশি চাষিদের ঘরে সুদিন ফিরেছে। 

উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা চিংড়ি উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত। কিন্তু বর্তমানে এই জেলার কৃষকরা বিভিন্ন ফল উৎপাদনের দিকে ঝুঁকতে শুরু করেছেন। এর মধ্যে স্বল্প পরিশ্রম ও অধিক লাভ হওয়ায় পতিত জলাবদ্ধ জমিতে পানিফল চাষে আগ্রহ বেড়েছে কৃষকদের। প্রতি বছর বেড়েই চলেছে পানিফলের চাষ। এতে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার পাশাপাশি চাষিদের ঘরে সুদিন ফিরেছে। 

জেলা কৃষি অধিদপ্তর খামারবাড়ি সূত্রে জানা গেছে,  ২০২১-২২ সালে ১০৬ হেক্টর জমিতে ২ হাজার ৭৫৫ টন পানিফল উৎপাদিত হয়। ২০২২-২৩ অর্থ বছরে তা বৃদ্ধি পেয়ে ১৪২ হেক্টরে দাঁড়ায়। ২০২৩-২৪ সালে জেলায় প্রায় ১৫০ হেক্টর জমিতে পানিফল চাষ হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার প্রায় ১৫০ হেক্টর জলাবদ্ধ পতিত জমিতে পানিফল চাষ করেছেন প্রান্তিক চাষিরা। উৎপাদিত পানিফল জেলার চাহিদা মিটিয়ে যাচ্ছে রাজধানীসহ দেশের অন্য জেলাগুলোতে। অন্য ফলের পাশাপাশি এই ফল বাজার দখল করতে শুরু করায় দিনে দিনে চাহিদাও বাড়ছে। সুস্বাদু ও পুষ্টিকর ফলটি ছোট বড় সবার কাছেই পছন্দের।

সাতক্ষীরা সদরের তালতলা মাগুরা গ্রামের পানিফল চাষি ইব্রাহিম খলিল বলেন, এ বছরেই প্রথম পানিফল চাষ শুরু করেছি। আমার মেশিন ও কারেন্ট সব মিলিয়ে ৫৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছিল। তিন চালানে ফসল তুলে প্রায় ৪০ হাজার টাকার মতো বেচাকেনা করেছি। এখনো দুই মাসের মতো আমার ফসল উঠবে। দুই মাসে প্রায় দুই লাখ টাকার মতো আসবে আশা করছি। প্রথমে মানুষের মাঝে তেমন সাড়া পাওনা না গেলেও দিন দিন এর চাহিদা বাড়ছে।

স্থানীয় বাসিন্দা খুশবু আক্তার বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমাদের এলাকায় এই পানিফল চাষ হচ্ছে। প্রতিদিন সকালেই দেখি পানিফল মাঠ থেকে সংগ্রহ করা হয়। ফলটি দেখতেও যেমন সুন্দর তেমন খেতেও সুস্বাদু। আর অল্প টাকাতেই এটি আমরা কিনতে পারি।

পানিফল চাষি রবিউল ইসলাম বলেন, সাড়ে তিন বিঘা জমি লিজ নিয়ে তিন বছর ধরে এই ফল চাষ করছি। যা খরচ হয় তার থেকে দ্বিগুণ লাভ হয়। এর আগে জায়গাটা ফেলানো ছিল। এ জন্য জমিটা লিজ নিয়ে আমি এই পানিফল চাষ শুরু করি। এই ফল লাগিয়ে আমার জীবন জীবিকা ভালোই চলছে। এ বছর প্রায় এক লাখ টাকা খরচ করেছি। আল্লাহ দিলে ফল ভালোই হচ্ছে। তবে অনেক অংশ ইঁদুর নষ্ট করে দিচ্ছে। ১ লাখ টাকা খরচ করে প্রায় ১ লাখ টাকা লাভ থাকবে আশা করছি। তবে পারিশ্রমিক বেরিয়ে যায় বেশি। এছাড়া ইঁদুর ঠেকাতে পারলে আরও বেশি লাভ করা সম্ভব।

আরেক পানিফল চাষি শামছুর রহমান বলেন, ১০ বছরের বেশি সময় ধরে পানিফল চাষ করছি। এ বছর ১০ বিঘা জমিতে এটি চাষ করেছি। বিঘা প্রতি ১৫-২০ মণ ফলন পাওয়া যায়। শুরুতেই প্রতি কেজি ৪০ টাকা দরে পাইকারি বিক্রি করে লাভবান হচ্ছি।

সখিপুর মোড় এলাকার খুচরা পানিফল বিক্রেতা আবদুল গফুর জানান, বর্তমানে তিনি ৪০ টাকা কেজিতে কিনে ৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি করছেন।

সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, পানিফল একটি অপ্রধান ফল হলেও এটি সাতক্ষীরা জেলায় এটি উল্লেখযোগ্য স্থান দখল করে আছে। কৃষকরা এক বিঘা জমিতে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা খরচ করে ফল বিক্রি করতে পারেন ৪০ হাজার টাকার। এতে তার ২৮ থেকে ৩০ হাজার টাকা লাভ হয়। এটি পানিবদ্ধ স্থানে সহজে চাষ করা সম্ভব। উৎপাদনও খুব সহজ। 

তিনি বলেন, আগামীতে কৃষকরা যেন তাদের পরিত্যক্ত জলাবদ্ধ জায়গায় পরিকল্পিতভাবে পানিফল চাষ করে আত্মসামাজিক উন্নয়ন ঘটাতে পারেন সে জন্য কৃষি বিভাগ থেকে তাদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

ইব্রাহিম খলিল/এফআরএস

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *