‘চাঁদাবাজ’ তিন ছাত্রলীগ নেতা এখনো থাকেন শহীদুল্লাহ হলে!

‘চাঁদাবাজ’ তিন ছাত্রলীগ নেতা এখনো থাকেন শহীদুল্লাহ হলে!

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মোড়ে ভাসমান দোকান ও হোটেল থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায় করতেন ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হল ছাত্রলীগের তিন নেতা। হোটেলগুলোতে অনুসারীদের নিয়ে খেয়ে এসে টাকা দিতেন না তারা। এমন অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী হোটেলমালিক ও কর্মচারীরা।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মোড়ে ভাসমান দোকান ও হোটেল থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায় করতেন ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হল ছাত্রলীগের তিন নেতা। হোটেলগুলোতে অনুসারীদের নিয়ে খেয়ে এসে টাকা দিতেন না তারা। এমন অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী হোটেলমালিক ও কর্মচারীরা।

অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতারা হলেন আসিফ আহমেদ সৈকত, মাজহারুল ইসলাম আকাশ ও দেওয়ান বায়েজিদ আহমেদ। আসিফ আহমেদ সৈকত ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হল ছাত্রলীগের কর্মসংস্থান বিষয়ক সম্পাদক। আকাশ ও বায়েজিদ ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশী ছিলেন। এদের মধ্যে আসিফ আহমেদ সৈকতের নেতৃত্বে দোকান ও হোটেলে চাঁজাবাজি হতো। হোটেলে ‘ফাও’ খাওয়ায় অগ্রগামী ছিলেন তিনি।

এসব অভিযোগ ওঠার পরও এখনো বহাল তবিয়তে হলে থাকছেন এই তিন নেতা। হল প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

ঢামেক হাসপাতালের আশপাশের দোকানিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ফুটপাতের দোকানগুলো থেকে দৈনিক ২০০-৩০০ টাকা হিসেবে সপ্তাহে ১৫০০-২০০০ টাকা চাঁদা আদায় করতেন ছাত্রলীগ নেতারা। কিছুটা মাঝারি মাপের দোকান থেকে সপ্তাহে ৫ হাজার এবং বড় দোকান থেকে সপ্তাহে প্রায় ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করা হতো। চাঁদা দিতে না চাইলে কোনো দোকানি শান্তিতে ব্যবসা করতে পারতেন না।

ঢাকা মেডিকেল মোড়ে অবস্থিত আনাস হোটেল থেকে সৈকত, আকাশ ও বায়েজিদ এ বছর প্রায় ৭০ হাজার টাকার মতো চাঁদা নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। চাঁদা না দিলে কর্মচারীদের মারধর এবং দোকান বন্ধ করে দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। 

হোটেলটির কর্মচারীদের ভাষ্যমতে, চাঁদা দিতে না চাইলে কিছুদিন আগেও ছাত্রলীগ নেতারা এসে হোটেলের শাটার বন্ধ করে দেন। এছাড়া, ভেতরে থাকা কর্মচারীদের নানাভাবে হুমকি-ধামকি দেন তাদের অনুসারীরা। তাদের নির্যাতনের শিকার হয়ে হোটেল চালুর পর থেকে প্রায় একশ কর্মচারী চাকরি ছেড়ে চলে গেছেন।

আনাস হোটেলের এক কর্মচারী বলেন, ছাত্রলীগের নেতারা আমাদের ডেকে নিয়ে চাঁদা দাবি করেন। তারা দিনে না এসে রাতে আসেন। দুই ঈদে ৪০ হাজার ও ৩০ হাজার করে মোট ৭০ হাজার টাকা চাঁদা নেন। 

অভিযুক্তরা আপনাদের হোটেলে ‘ফাও’ খান’ কি না? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তারা নিজেরা হোটেলে আসেন না। কিন্তু তাদের নামে অনেক ছেলেপেলে এসে ফ্রি খেয়ে টাকা দেন না। হোটেলের শুরু থেকেই তারা এমন করে আসছেন। 

ঢামেক হাসপাতালের আশপাশের দোকানিদের অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতাদের ছবি দেখালে ভুক্তভোগীরা চাঁদাবাজির বিষয়টি স্বীকার করেন। পাশাপাশি তাদের চাঁদাবাজ হিসেবে শনাক্ত করেন। আনাস হোটেলের কয়েকজন কর্মচারীও তাদের ছবি দেখে শনাক্ত করেন। 

এই তিনজনের মধ্যে সৈকতের ছবি দেখে এক কর্মচারী বলেন, তিনিই মূল হোতা।

ছাত্রলীগ নেতাদের চাঁদাবাজির বিষয়ে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হলের এক শিক্ষার্থী বলেন, হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ঢাকা মেডিকেল মোড় ও চানখারপুল এলাকায় নিয়মিত চাঁদাবাজি করে আসছে। চাঁদাবাজিতে সরাসরি যুক্ত থাকার পরও সৈকত হলে অবস্থান করছে। প্রশাসন তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। 

অবশ্য, এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন শহীদুল্লাহ হল ছাত্রলীগ নেতা সৈকত। এমন কাজে কখনো জড়িত ছিলেন না বলে দাবি করেন তিনি। 

চাঁদাবাজির অভিযোগের বিষয়ে সৈকত বলেন, আমি জানি না আমার বিরুদ্ধে কেন এমন অভিযোগ করা হচ্ছে। আমি কখনো চাঁদাবাজি করিনি বা নেতাদের সঙ্গে যাইনি। আমার ছবি নিয়ে আনাস হোটেল বা আশপাশের দোকানে দেখালেও তারা বলবে আমি ছিলাম না সেখানে। 

তিনি বলেন, আমি ছাত্রলীগের কোনো বড় পদে নেই। সবাই যেভাবে ছাত্রলীগ করত আমিও করতাম। আমি কখনো প্রোগ্রামের জন্য জুনিয়রদের বকাবকি করিনি। তাছাড়া আমাদের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থীরা রাজনীতিতে তেমন সক্রিয় নয়। ছাত্র আন্দোলনের শুরু থেকেই আমি শিক্ষার্থীদের সাথে ছিলাম। আমি দোষী হলে এখনো হলে অবস্থান করতাম না।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে বাকি দুই ছাত্রলীগ নেতাকে ফোন দিলে তাদের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

সার্বিক বিষয়ে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড মোহাম্মদ জাবেদ হোসেন বলেন, আমি মাত্রই এ বিষয়ে অভিযোগ শুনলাম। এটা সত্য হলে তাদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। 

সৈকতকে হল থেকে তাকে বহিষ্কার করা হবে কি না? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা তদন্তের বিষয়। তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পেলে তাকে হল থেকে বহিষ্কার করা হবে। 

কেএইচ/কেএ

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *