অনুরোধেও সাড়া নেই, আন্তঃদেশীয় ট্রেন চালাতে ‘অনীহা’ ভারতের

অনুরোধেও সাড়া নেই, আন্তঃদেশীয় ট্রেন চালাতে ‘অনীহা’ ভারতের

কোটা সংস্কার আন্দোলনের কারণে দীর্ঘ ২৭ দিন বন্ধ থাকার পর কয়েকদিন আগে দেশে ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। তবে এখনো চালু হয়নি আন্তঃদেশীয় ট্রেন চলাচল। ফলে বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিবেশী দেশ ভারতের রেলপথে যোগাযোগ এখনো বন্ধ রয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন রেলপথে পণ্য আমদানিকারক ও সাধারণ যাত্রীরা।

কোটা সংস্কার আন্দোলনের কারণে দীর্ঘ ২৭ দিন বন্ধ থাকার পর কয়েকদিন আগে দেশে ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। তবে এখনো চালু হয়নি আন্তঃদেশীয় ট্রেন চলাচল। ফলে বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিবেশী দেশ ভারতের রেলপথে যোগাযোগ এখনো বন্ধ রয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন রেলপথে পণ্য আমদানিকারক ও সাধারণ যাত্রীরা।

রেলভবন সূত্রে জানা গেছে, আন্তঃদেশীয় ট্রেন চালানোর বিষয়ে ভারতের সঙ্গে নিয়মিত যোগযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া মিলছে না। ফলে আন্তঃদেশীয় ট্রেন কবে চালু হবে, সে বিষয়ে কিছু বলতে পারছে না বাংলাদেশ রেলওয়ে।

বাংলাদেশে যে পরিমাণ পণ্য ভারত থেকে আমদানি করা হয়, তার অর্ধেক পণ্য রেলপথ দিয়ে বেনাপোল স্থলবন্দর হয়ে আমদানি হয়। রেলপথে বাংলাদেশে আসে বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যাল, শিল্পকারখানার কাঁচামাল, সার, সিমেন্ট তৈরির উপকরণ ও কৃষি যন্ত্রাংশ।

এ ছাড়া, বাংলাদেশের বেনাপোল ও চিলাহাটী স্থলবন্দর দিয়ে তিনটি আন্তঃদেশীয় যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল করে। এর মধ্যে মৈত্রী ও বন্ধন এক্সপ্রেস বোনাপোল ও মিতালী এক্সপ্রেস চিলাহাটী রুট ব্যবহার করে। এই তিনটি ট্রেন বন্ধ থাকায় যাত্রীদের নিরাপদে ভারত যাওয়া ব্যাহত হচ্ছে। যেসব যাত্রীরা ট্রেনে ভারতে যাওয়ার জন্য অগ্রিম টিকিট সংগ্রহ করেছিলেন, তাদের টিকিটের টাকা ফেরত দিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। আপাতত নতুন করে আর কোনো আন্তঃদেশীয় ট্রেনের টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে না।

বাংলাদেশ রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে আন্তঃদেশীয় মিতালি এক্সপ্রেস ট্রেনের ভারতীয় রেক ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনে রাখা আছে। এছাড়া আরও যেসব ভারতীয় পণ্যবাহী ওয়াগন বাংলাদেশে এসেছিল, পণ্য খালাস শেষে সেগুলো বাংলাদেশেই আছে। এসব খালি ওয়াগন নিয়ে যাওয়ার জন্য ভারতকে বাংলাদেশ রেলওয়ের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হলেও সাড়া দিচ্ছে না প্রতিবেশী দেশটি।

বাংলাদেশ রেলওয়ের আরেকটি সূত্র ঢাকা পোস্টকে জানিয়েছে, বাংলাদেশি আমদানিকারকদের পণ্যবোঝাই ওয়াগন ভারত সীমান্তে আছে। কিন্তু অনুমতি না থাকায় সেগুলো দেশে আনা যাচ্ছে না। এর মধ্যে থাকা কাঁচাপণ্যগুলো হয়ত ইতোমধ্যে পচে গেছে।

বেনাপোল আমদানি-রপ্তানি সমিতির সহ-সভাপতি উজ্জ্বল বিশ্বাস জানিয়েছেন, ভারত থেকে যে পরিমাণ পণ্য আমদানি হতো তার অর্ধেক হতো রেলপথে। কিন্তু রেল যোগাযোগ বন্ধ থাকায় বন্দরে আমদানির পরিমাণ কমে গেছে।

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মুজিবর রহমান জানিয়েছেন, ভারত থেকে রেলপথে বেশিরভাগ শিল্পকারখানার জরুরি কাঁচামাল ও কৃষিপণ্য আমদানি হয়ে থাকে। কিন্তু তা বন্ধ থাকায় স্থানীয় শিল্পকারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।

দর্শনা আন্তর্জাতিক রেলস্টেশনের ম্যানেজার মির্জা কামরুল ইসলাম জানিয়েছেন, ঠিক কী কারণে ওয়াগন পাঠানো হচ্ছে না, তা জানা যায়নি। বন্দরের শ্রমিক, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট, কর্মচারী ও দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা ট্রাকের চালক ও সহকারীরা বেকার বসে আছেন।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, ভারতের এক্সটার্নাল অ্যাফেয়ার্স থেকে এখন পর্যন্ত ট্রেন চালানোর বিষয়ে অনুমতি দেওয়া হয়নি। ভারতীয় মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেন এই মুহূর্তে বাংলাদেশে আছে। বর্তমানে কমলাপুরে রাখা হয়েছে। এ ছাড়া, আমাদের যেসব ট্রেন ভারতে চলাচল করত সেগুলো আমাদের দেশেই আছে।

তিনি আরও বলেন, ভারতের কিছু ওয়াগন আমাদের দেশে এসেছিল। সেগুলো খালি হওয়ার পর আমরা পাঠাতে পারছি না। কারণ, তারা এগুলো নিচ্ছে না। তাদের এক্সটার্নাল অ্যাফেয়ার্স থেকে কোনো পারমিশন আসেনি। আমরা তাদের মেইল করে বলেছি, তোমাদের যেসব ওয়াগন খালি আছে সেগুলো নিয়ে যাও। এটাই হচ্ছে বর্তমান অবস্থা।

এদিকে বিষয়টি দ্রুত দেখার জন্য আজ (১৯ আগস্ট) রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এম এ আকমল হোসেন আজাদকে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে কথা বলার নির্দেশ দিয়েছেন। এ ছাড়া, আন্তঃদেশীয় ট্রেন চালানোর বিষয়ে ভারতীয় রেলওয়েকে আজ আরেক দফা বার্তা পাঠানোর কথা।

কোটা সংস্কার আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ডাকা ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচির মধ্যে সহিংসতার ঘটনায় গত ১৮ জুলাই থেকে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ধাপে ধাপে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়। ওই দিন রাতে কারফিউ জারির পর ১৯ জুলাই থেকে পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায় ট্রেন চলাচল। ২৭ দিন পর গত ১৫ আগস্ট থেকে আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল শুরু হয়।

এমএইচএন/এমজে

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *