এনায়েত উল্যাহর ইশারায় বাস চলত, বন্ধ হতো

এনায়েত উল্যাহর ইশারায় বাস চলত, বন্ধ হতো

সদ্য বিদায়ী আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিরোধী দলের ডাকা হরতাল-অবরোধের সময় বাস চালানোর ঘোষণা দেওয়া হতো। অন্যদিকে, সরকারবিরোধী কোনো বড় জমায়েতের আগে হুট করে বাস চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত আসত। মূলত বাস-মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি থেকে আসা এমন সিদ্ধান্তে সাধারণ বাস-মালিক ও পরিবহন শ্রমিক থেকে শুরু করে সাধারণ যাত্রীরা পড়তেন চরম ভোগান্তিতে।

সদ্য বিদায়ী আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিরোধী দলের ডাকা হরতাল-অবরোধের সময় বাস চালানোর ঘোষণা দেওয়া হতো। অন্যদিকে, সরকারবিরোধী কোনো বড় জমায়েতের আগে হুট করে বাস চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত আসত। মূলত বাস-মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি থেকে আসা এমন সিদ্ধান্তে সাধারণ বাস-মালিক ও পরিবহন শ্রমিক থেকে শুরু করে সাধারণ যাত্রীরা পড়তেন চরম ভোগান্তিতে।

মালিক ও পরিবহন শ্রমিকদের ভাষ্য অনুযায়ী, অনেকটা তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে বাস চালানো বা বন্ধ রাখার মতো সিদ্ধান্ত দিতেন মালিক সমিতির নেতারা। বাধ্য হয়ে সেই সিদ্ধান্ত মাথা পেতে নিতে হতো সাধারণ বাস-মালিক ও পরিবহন শ্রমিকদের। ফলে তারা তাদের নিয়মিত আয় থেকে বঞ্চিত হতেন। জানা যায়, সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহর নামে মালিক সমিতির প্যাডে এমন নির্দেশনা দেয়া হতো।

সাধারণ যাত্রীদের স্বার্থ রক্ষাকারী সংগঠনের নেতাদের অভিযোগ, বিগত সরকারের আমলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি পরিবহন খাতকে রাজনীতিকীকরণের মধ্য দিয়ে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করা হয়েছে। পাশাপাশি সরকারের অনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এমন সংকীর্ণ মনোভাব থেকে সংগঠনটির বের হয়ে আসা প্রয়োজন।    

পরিবহন-সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০০৯ সাল থেকে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন খন্দকার এনায়েত উল্যাহ। ঢাকা শহর ও শহরতলীর বাস-মালিকদের সংগঠন ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতিরও মহাসচিব ছিলেন তিনি। এ ছাড়া ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সহ-সভাপতি এবং এনা ট্রান্সপোর্ট প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন এনায়েত উল্যাহ।

পরিবহন শ্রমিকদের ভাষ্য, তারা ‘দিন আনে দিন খাওয়া’ মানুষ। একদিন গাড়ির চাকা না ঘুরলে তাদের আয় বন্ধ থাকে। তাই বাসচলাচল বন্ধের পক্ষে তারা কখনও ছিলেন না। জোর করে তাদের দিয়ে বাসচলাচল বন্ধ রাখা হতো। তারপরও পেটের দায়ে গুটি কয়েক বাসচলাচল করত। জানতে চাইলে ৮নং রুটে চলাচলকারী একটি বাসের চালক মেহেদী হাসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের রুটের বাস কখনও বন্ধ থাকত না। মালিক সমিতি বন্ধ ঘোষণা করলেও আমরা বাস চালাতাম। কারণ, চাকা না ঘুরলে আমাদের ভাত জুটত না।

লাব্বাইক পরিবহনের চালক অপু মল্লিক ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘মালিক সমিতির ঘোষণা অনুযায়ী আমাদের বাস চলাচল করত। রাস্তায় কোনো সমস্যা না থাকলেও সমিতির নির্দেশে বাস বন্ধ থাকত। ফলে আমরা সাধারণ বাসচালকরা বিপদে পড়তাম। আয় বন্ধ থাকায় পরিবার নিয়ে কষ্টে দিনপার করতে হতো।’

‘সড়কে এখন কোনো চাঁদা নেই। ফলে চুক্তি হিসেবে দৈনিক ২৫০০ টাকা পাওয়া যাচ্ছে। আগে পেতাম ২১০০ টাকা। ৪০০ টাকা চাঁদা দেওয়া লাগত।’

অভিযোগ রয়েছে, খন্দকার এনায়েত উল্যাহ আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। ফলে রাজনৈতিকভাবে পাওয়া এজেন্ডাগুলো বাস-মালিকদের জিম্মি করে বাস্তবায়ন করতেন।

২০২৩ সালে এ সংক্রান্ত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এর সত্যতাও মেলে। ওই বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর সংবাদমাধ্যমে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াতের ডাকা হরতাল-অবরোধ উপেক্ষা করে ঢাকাসহ সারাদেশে পণ্য ও যাত্রী পরিবহন চলাচল স্বাভাবিক থাকবে। হরতাল-অবরোধে ক্ষতিগ্রস্ত গাড়ির ক্ষতিপূরণ আগের মতো এবারও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেবেন বলে আমাদের আশ্বস্ত করেছেন।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাস-মালিক ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঢাকার একটি রুটে আমার মাত্র একটি বাস চলাচল করে। বাস বন্ধ থাকলে তো ইনকাম বন্ধ থাকে। তাহলে কেন আমরা বাস বন্ধ রাখব?

‘বিএনপির সমাবেশগুলোর আগের রাতে বলা হতো নিরাপত্তার জন্য বাস-চলাচল বন্ধ থাকবে। ফলে বাধ্য হয়ে আমাদের বাস বন্ধ রাখতে হতো। যাতে মানুষ সমাবেশে যোগ দিতে না পারে। কিন্তু তারপরও কিছু কিছু বাস চলত। তাদের তো সমস্যা হতে দেখিনি। আবার যখন বিএনপি হরতাল-অবরোধের ডাক দিত, তখন বলা হতো বাস চলবে। হরতাল-অবরোধে বাস চললে তো আমাদেরই ক্ষতি। এমন কর্মসূচিতে অনেক সময় বাসে আগুন ধরিয়ে দেয়া হতো, ভাঙচুর করা হতো। আমরা একটা ঝুঁকির মধ্যে থাকতাম, চালক-শ্রমিকরাও ঝুঁকির মধ্যে থাকত।’

দূরপাল্লা রুটের এক বাসের মালিক ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত জুলাই মাসে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীরা সারাদেশে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা করে। ওই দিন রাতেই বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব ঘোষণা দিয়ে বললেন, এই পরিস্থিতির মধ্যেও বাস চালানোর নির্দেশনা আছে। এমন অস্থির পরিস্থিতির মধ্যে আমরা যারা একটি বা দুটি বাসের মালিক, তাদের কে বাস চালাতে চায়? শুধু রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের জন্য এমন সিদ্ধান্ত আসত।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী ঢাকা পোস্টকে বলেন, পরিবহন সবসময় একটি সেবা খাত হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। এটাকে রাজনীতিকীকরণের মধ্য দিয়ে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করা এবং সরকারের সুদৃষ্টি পাওয়ার লক্ষ্যে এটাকে ব্যবহার করা হয়েছে। যার অনিবার্য পরিণতি হিসেবে আমরা দেখেছি আগস্টের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান। সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে গিয়ে কোনো কিছু করা হলে তার পরিণতি কেমন ভয়াবহ হতে পারে, সেটি আমরা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি গত আগস্ট মাসে।

‘আগামী দিনে যারা এ খাত পরিচালনা করবেন, তারা যেন ব্যক্তির স্বার্থ চরিতার্থ করতে গিয়ে পরিবহন খাতকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে না পারেন, সেদিকে মনোনিবেশ করতে হবে।’

এনায়েত উল্যাহ ও তার পরিবারের সম্পদ

দুদকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালের মাঝামাঝিতে এনায়েত উল্যাহ ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি, চাঁদাবাজির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ জমা পড়ে কমিশনে। ওই অভিযোগে বলা হয়, রাজধানীর উপকণ্ঠের বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী ১৫ হাজার বাস থেকে প্রতিদিন এক কোটি ৬৫ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করে এনায়েত উল্যাহর সিন্ডিকেট। তিনি নিজের ও স্ত্রী-সন্তানের নামে ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে বাড়ি, গাড়ি, ফ্ল্যাট ও প্লট কেনার পাশাপাশি ব্যাংকে বড় অঙ্কের টাকা জমিয়েছেন। এ ছাড়া দেশের বাইরে পাচার করেছেন শত শত কোটি টাকা। কমিশন অভিযোগটি অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়।

এনায়েত উল্যাহ ও তার স্ত্রী-সন্তানের বিরুদ্ধে জমা পড়া অভিযোগের অনুসন্ধান শুরু করেন দুদকের উপপরিচালক নূরুল হুদা। অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে ২০২২ সালের এপ্রিল মাসে এনায়েত উল্যাহ, তার স্ত্রী নার্গিস সামাদ, ছেলে রিদওয়ানুল আশিক নিলয় ও মেয়ে চাশমে জাহান আলাদাভাবে সম্পদের হিসাব দুদকে জমা দেন।

দুদকে দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে এনায়েত উল্যাহর সম্পদের উৎস হিসেবে এনা ট্রান্সপোর্ট (প্রা.) লিমিটেড, সোলার এন্টারপ্রাইজ, এনা শিপিং ও এনা ফুড অ্যান্ড বেভারেজ কোম্পানির নাম উল্লেখ করেন। এ ছাড়া তানজিল ও বসুমতি পরিবহনে তাদের শেয়ার থাকার তথ্য উল্লেখ করেন। তিনি দুদকে দাখিল করা হিসাবে তারসহ পুরো পরিবারের মোট ২১৬ কোটি ৮৪ লাখ টাকার সম্পদ অর্জনের ঘোষণা দেন।

তবে, হিসাবে তার সম্পদের যে দাম দেখানো হয়, তা বাজারদরের চেয়ে অনেক কম। তার সম্পদের প্রকৃত মূল্য ধরে হিসাব করলে তা হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। এর মধ্যে স্থাবর ১৩ কোটি ৭৬ লাখ ও অস্থাবর ১৩৭ কোটি ১১ লাখ টাকার। স্থাবর সম্পদের মধ্যে রাজধানীর মিরপুরে ৮.২৫ বিঘা জমিতে ছয়তলা বাড়ি, যার মূল্য এক কোটি ১৩ লাখ টাকা; মিরপুরের মনিপুরপাড়ায় ৮ শতাংশ জমিতে ছয়তলা বাড়ি, মূল্য ৫২ লাখ ৫৭ হাজার; ধানমন্ডির ১১ নম্বর রোডে ৬২ নম্বর বাড়ির ৪/এ নম্বরে তিন হাজার ৫০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট, মূল্য ৩২ লাখ ৫০ হাজার টাকা; বসুন্ধরা সিটিতে ১৫১ বর্গফুটের একটি দোকান, মূল্য ২৪ লাখ ২৫ হাজার টাকা; দক্ষিণখানে ৭৮ শতাংশ জমি, মূল্য ২৯ লাখ ৩৬ হাজার টাকা; দক্ষিণখানে ১০ শতাংশ জমি, মূল্য এক কোটি টাকা; কেরানীগঞ্জে ৪০ কাঠা জমি, মূল্য ৭৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা; রূপগঞ্জে ১০ কাঠা জমি, মূল্য ৩ লাখ টাকা; গাজীপুরের দনুয়া মৌজায় ৩ কোটি ৬০ লাখ টাকার জমি এবং ফেনীতে ৪০ হাজার টাকা মূল্যের ১২ শতাংশ জমি থাকার কথা জানানো হয়।

অস্থাবর সম্পদের মধ্যে এনা ট্রান্সপোর্ট (প্রা.) লিমিটেডের নামে ৮০টি বাস, যার মূল্য দেখানো হয় ৬৩ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। ঢাকা মহানগর ও আশপাশের এলাকায় চলাচলকারী তানজিল পরিবহনে এক লাখ টাকার শেয়ার ও বসুমতি পরিবহনে পাঁচ লাখ টাকার শেয়ার রয়েছে বলে জানানো হয়। আর সোলার এন্টারপ্রাইজে আড়াই লাখ, এনা শিপিংয়ে ২০ লাখ ও এনা ফুড অ্যান্ড বেভারেজ কোম্পানিতে আট লাখ টাকার শেয়ার রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। তার ব্যাংকে ৫৮ লাখ ৫৮ হাজার টাকার এফডিআর এবং নগদ তিন লাখ ৯৭ হাজার টাকা জমা থাকার কথা জানানো হয়। তিনি বিয়ের সময় ২৫ ভরি স্বর্ণ উপহার পান।

স্ত্রী নার্গিস সামাদের সম্পদ : এনায়েত উল্যাহর স্ত্রী নার্গিস সামাদ। তার নামে সাত কোটি ৩৭ লাখ টাকার স্থাবর ও ১১ কোটি ২৫ লাখ টাকার অস্থাবরসহ মোট ১৮ কোটি ৬২ লাখ টাকার সম্পদ থাকার তথ্য দেওয়া হয় দুদকে। এর মধ্যে রাজধানীর উত্তরায় তিন কাঠার প্লট, যার মূল্য ১৫ লাখ টাকা; ধানমন্ডিতে একটি ফ্ল্যাট, মূল্য ছয় কোটি ৩০ লাখ টাকা; সোলার এন্টারপ্রাইজে দেড় লাখ টাকার শেয়ার, প্রাইজবন্ড ও এনা ফুড অ্যান্ড বেভারেজে বিনিয়োগ ৪০ লাখ এবং এনা ট্রান্সপোর্টে ৬০ লাখ টাকার শেয়ার রয়েছে। ব্যাংকে নগদ জমা এক কোটি ১৭ লাখ এবং এক কোটি ১৬ লাখ টাকার এফডিআর রয়েছে। এ ছাড়া তার ধানমন্ডির একটি ফ্ল্যাটে ৫০ শতাংশ এবং মিরপুরের মনিপুরের বাড়িতে ৫০ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।

ছেলে রিদওয়ানুল আশিকের সম্পদ : রিদওয়ানুল আশিকের স্থাবর-অস্থাবর মোট সম্পদ রয়েছে ৩০ কোটি ৬৯ লাখ টাকার। এর মধ্যে স্থাবর সম্পদ আট কোটি ২৪ লাখ ও অস্থাবর সম্পদ ২২ কোটি ৪৫ লাখ টাকার। তার এনা ট্রান্সপোর্টে ২০ লাখ টাকার শেয়ার, এনা ফুড অ্যান্ড বেভারেজে ৪০ লাখ টাকার শেয়ার, রাজধানীর গুলশানের ১২৯ নম্বর রোডের ২৪ নম্বর বাড়িতে পাঁচ কোটি টাকার তিন হাজার ২০০ বর্গফুটের ৪/এ নম্বর ফ্ল্যাট রয়েছে। রাজধানীর মিরপুরে বেড়িবাঁধ সংলগ্ন স্থানে ১০৯ শতাংশ জমি, যার মূল্য তিন কোটি টাকা এবং উত্তরায় পাঁচ কাঠার প্লট রয়েছে, যার দাম দেখানো হয়েছে চার লাখ টাকা। এ ছাড়া তার নামে ২১ কোটি ৯৬ লাখ টাকার এফডিআর রয়েছে।

মেয়ে চাশমে জাহানের সম্পদ : এনায়েত উল্যাহর চাশমে জাহান। তার নামে পাঁচ কোটি ১৮ লাখ টাকার স্থাবর ও ১১ কোটি ৪৮ লাখ টাকার অস্থাবরসহ মোট সম্পদ রয়েছে ১৬ কোটি ৬৬ লাখ টাকার। তার গুলশানের ১২৯ নম্বর রোডের ২৪ নম্বর বাড়িতে তিন হাজার ২০০ বর্গফুটের ৫/এ নম্বর ফ্ল্যাট, যার মূল্য পাঁচ কোটি টাকা, বাড্ডার কাঁঠালদিয়ায় পাঁচ কাঠা জমি, মূল্য তিন লাখ টাকা এবং এনা ট্রান্সপোর্টে ২০ লাখ টাকার শেয়ার রয়েছে। এ ছাড়া তার নামে ৪২ লাখ টাকার (ঢাকা মেট্রো গ-১৫-২৫২৪) একটি গাড়ি রয়েছে।

এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে খন্দকার এনায়েত উল্যাহর সঙ্গে একাধিক মাধ্যমে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তার  কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। তিনি দেশের বাইরে আছেন বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।

চাঁদাবাজি বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ নেবে বর্তমান সরকার : মোজাম্মেল হক চৌধুরী

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী মালিক সমিতির চাঁদাবাজি প্রসঙ্গে বলেন, আমরা দেখেছি, এই পরিবহন খাতে পাঁচ টাকার ভাড়া ২০ থেকে ২৫ টাকা পর্যন্ত কীভাবে আদায় করা হয়েছে। ১০ টাকার ভাড়া কীভাবে ৩০-৩৫ টাকা আদায় করা হয়েছে। নিয়মবহির্ভূত এসব চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে আমরা কথা বলেছি। কখনও মালিক সমিতির নামে, কখনও শ্রমিক ফেডারেশনের নামে এবং কখনও-বা পুলিশের নামে চাঁদাবাজি হয়েছে। এগুলোর বিষয়ে আমরা সবসময় সোচ্চার ছিলাম। তারা সরকারের ছায়াতলে থাকায় উল্টো আমাদের নিগৃহীত করা হয়েছে। আমরা দেখেছি, সরকার এই চাঁদাবাজদের নিয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলেছে।

তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি বর্তমান সরকার এসব চাঁদাবাজ সংগঠনকে পৃষ্ঠপোষকতা দেবে না। তারা চাঁদাবাজি বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ নেবে।’

মালিক, শ্রমিক ও যাত্রীদের স্বার্থ দেখা সমিতির দায়িত্ব :  সাইফুল আলম

গত দেড় দশক ধরে দেশের সড়ক পরিবহন খাতে দাপিয়ে বেড়ানো খন্দকার এনায়েত উল্যাহসহ অন্যান্য নিয়ন্ত্রক গত ৫ আগস্টের আগে ও পরে আত্মগোপনে চলে যান। ফলে পরিবহন মালিকদের ব্যবসা সংরক্ষণ ও যাত্রীদের স্বার্থের কথা বলে তলবি সভা ডেকে গত ১৪ আগস্ট ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির নতুন আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব নেন বিএনপিপন্থি পরিবহন নেতা মো. সাইফুল আলম।

পরিবহন খাতে চাঁদাবাজি এবং সরকারের লেজুড়বৃত্তি হওয়া প্রসঙ্গে তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা বাস-মালিকরা যারা ব্যবসা করি, আমাদের একটা সংবিধান অর্থাৎ গঠনতন্ত্র আছে। সেখানে বলা আছে, আমরা সদস্যরা যে দলেরই সমর্থক হই না কেন, যখন আমরা মালিক সমিতির অফিসে একত্রিত হব তখন আমরা নির্দলীয়। এই আচরণটুকু আমাদের অবশ্যই করতে হবে। সরকারের উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করা আমাদের দায়িত্ব নয়। আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে মালিক, শ্রমিক ও যাত্রীদের স্বার্থ দেখা।

‘এটা এমন হতে পারে, যার ইচ্ছা চালাবে যার ইচ্ছা চালাবে না। আমি জোর করে বন্ধ রাখব, আমি জোর করে চালাব— এটা হতে পারে না। আপনি দেখেছেন, বিএনপির সমাবেশগুলোর দুই থেকে তিনদিন আগে থেকে সব বাস বন্ধ রাখা হতো। এটা অন্যায় ও অনৈতিক। আপনি বাস-মালিক, শ্রমিক ও যাত্রীদের সুযোগ-সুবিধা এবং তাদের দাবি আদায়ের জন্য যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু লিয়াজোঁ করতে পারেন। কোনো রাজনৈতিক দলকে টিকিয়ে রাখার দায়িত্ব তো আপনাকে দেওয়া হয়নি।’

এমএইচএন/এমজে

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *