অর্থের অভাবে সুচিকিৎসা থেকে বঞ্চিত আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ রেদোয়ান 

অর্থের অভাবে সুচিকিৎসা থেকে বঞ্চিত আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ রেদোয়ান 

ঢাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে পঙ্গুত্ব বরণের শঙ্কায় পড়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ছাত্র রেদোয়ান। আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারছে না তার পরিবার।

ঢাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে পঙ্গুত্ব বরণের শঙ্কায় পড়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ছাত্র রেদোয়ান। আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারছে না তার পরিবার।

রেদোয়ান বরগুনা সদর উপজেলার ৪ নম্বর কেওরাবুনীয়া ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কেওরাবুনীয়া নামক এলাকার বাসিন্দা মো. মাইন উদ্দিনের ছেলে। তিনি ঢাকার মোহাম্মদপুর সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের এক দিন আগে ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচিতে অন্যান্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মিরপুর ১০ নম্বর এলাকার সড়কে নামেন রেদোয়ান। এ সময় আন্দোলনকে প্রতিহত করতে পুলিশের ছোড়া গুলি পায়ে লেগে তিনি গুলিবিদ্ধ হন। পরে গুরুতর আহত হয়ে সড়কে লুটিয়ে পড়লে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী বন্ধুরা তাকে উদ্ধার করে ঢাকার মিরপুর ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে ভর্তি করেন। পরবর্তীতে আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ঢাকা থেকে ছেলেকে নিয়ে গ্রামের বাড়ি বরগুনায় চলে আসেন বাবা মাইন উদ্দিন। এ অবস্থায় উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে না পারলে পা হারাতে হতে পারে ভুক্তভোগী রেদোয়ানের। 

সরেজমিনে বরগুনা সদর উপজেলার কেওরাবুনীয়া নামক এলাকায় রেদোয়ানের গ্রামের বাড়ি ঘুরে দেখা যায়, টিনের তৈরি ঘরের সামনের বারান্দায় একটি খাটের ওপর পায়ে ব্যান্ডেজ অবস্থায় শুয়ে আছেন আহত রেদোয়ান। ডান পায়ের মাংসপেশি ছেদ করে গুলি বেড়িয়ে যাওয়ায় হারের কোনো ক্ষতি না হলেও ছিড়ে গেছে পায়ের বেশ কয়েকটি রগ। হাঁটার শক্তি নেই রেদোয়ানের ডান পায়ে। 

রেদোয়ানের বাবা মাইন উদ্দিন এক সময় স্ত্রী ও ছেলে-মেয়ে নিয়ে কেওরাবুনীয়ায় নিজের ঘরে একত্রে বসবাস করলেও সংসার ও ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ যোগাতে চাকরি নিয়েছেন ঢাকার একটি হোটেলে। ছেলের পায়ে গুলি লাগায় এখন বাধ্য হয়েই কর্মস্থল ছেড়ে বাড়িতে আসতে হয়েছে তাকে। একদিকে আর্থিক অসচ্ছলতা অপরদিকে ছেলের চিকিৎসা খরচ সবমিলিয়ে এখন না খেয়ে থাকার উপক্রম হয়েছে তাদের। এছাড়া আন্দোলনে গিয়ে গুলিতে আহত হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত কেউ তাদেকে কোনো প্রকার সহযোগিতা না করায় ধারদেনা করেই ছেলের চিকিৎসা খরচ চালাতে হচ্ছে মাইন উদ্দিনকে।

ভুক্তভোগী রেদোয়ানের দাদা মো. নিজাম খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত ৪ তারিখ ঢাকায় আমার নাতির পায়ে গুলি লেগেছে। এখন তার যে উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন সেই সামর্থ্য আমাদের নেই। বর্তমান সরকার যদি একটু সহযোগিতা করে তাহলে সে সুস্থ হতে পারবে।

জাকির মৃধা নামের রেদোয়ানের এক প্রতিবেশী ঢাকা পোস্টকে বলেন, রেদোয়ান গুলিতে আহত হয়ে এখন প্রায় পঙ্গু অবস্থায় ঘরে পড়ে আছে। তার দুটি বোন আছে তাদের বিয়ে হলে এবং তার বাবাও বৃদ্ধ হয়ে যায় তাহলে পরিবারের হাল ধরার জন্য রোদোয়ান ছাড়া আর কেউ থাকবে না। উন্নত চিকিৎসার অভাবে যদি ছেলেটার পা হারাতে হয় তাহলে তাদের পরিবারটি একদম শেষ হয়ে যাবে।

চিকিৎসা খরচ নিয়ে চিন্তিত রেদোয়ানের বাবা মাইন উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ছেলের পায়ে গুলি লাগার পরে ঢাকায় চিকিৎসার জন্য ভর্তি করেছিলাম। কিন্তু সেখানে থেকে চিকিৎসা করতে অনেক খরচ। আমরা খেটে খাওয়া মানুষ বেশি টাকা খরচ করতে না পেরে ছেলেকে নিয়ে বাড়িতে এসেছি। তবে ডাক্তার বলেছে ওর পায়ের বেশ কয়েকটি রগ ছিড়ে গেছে উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন। আমার ছেলে এখনো পা সোজা করতে পারে না। ধারদেনা করে কিছু টাকা জোগাড় করেছি তা নিয়েই এখন ঢাকায় রওয়ানা হব।

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত মো. রেদোয়ান ঢাকা পোস্টকে বলেন, মিরমুর ১০ নম্বর এলাকায় আন্দোলন চলাকালীন সময়ে বিপরীত দিকে অবস্থান নেওয়া পুলিশ ও ছাত্রলীগের ছোড়া গুলি আমার পায়ে লেগে গুরুতর আহত হই। পরে আমাকে ঢাকার একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ পর্যন্ত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় সকল খরচ আমরা নিজেরাই বহন করেছি। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কেউ অথবা অন্তর্বর্তী সরকারের কেউ এখন পর্যন্ত আমাকে কোনো সহযোগিতা করেনি। আমার ভবিষ্যৎ এখন কী?

এর আগে গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের এক দফা দাবি মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। পরবর্তীতে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সকল নিহতের পরিবারকে প্রয়োজনীয় সহায়তা ও আহতদের সুচিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হলেও রেদোয়ানের পাশে এখনো কেউ দাঁড়ায়নি। 

এ বিষয়ে বরগুনা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. শামীম মিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, আহত রেদোয়ানের বিষয়ে আমাদের জানা ছিল না। আমরা তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে খোঁজ খবর নেব। এর আগে উপজেলা প্রশাসন ও জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে বরগুনায় যারা নিহত এবং আহত হয়েছিলেন তাদেরকে সহযোগিতা করা হয়েছে। এছাড়া যারা এখন আহত অবস্থায় আছেন তাদেরকে সুচিকিৎসার জন্য বর্তমান সরকার উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। রেদোয়ানের বিষয়ে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

আরকে 

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *