কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেলের (সিএজি) কার্যালয় ও এর আওতাধীন সিজিএ কার্যালয়, বিভিন্ন অডিট অধিদপ্তর এবং সিজিডিএফ কার্যালয়ে কর্মরত অডিটরদের বেতন-গ্রেড বৈষম্য দূর করে ১১তম থেকে ১০তম গ্রেডে উন্নীত করার দাবিতে তৃতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ করছেন অডিট অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস ডিপার্টমেন্টের অডিটররা।
কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেলের (সিএজি) কার্যালয় ও এর আওতাধীন সিজিএ কার্যালয়, বিভিন্ন অডিট অধিদপ্তর এবং সিজিডিএফ কার্যালয়ে কর্মরত অডিটরদের বেতন-গ্রেড বৈষম্য দূর করে ১১তম থেকে ১০তম গ্রেডে উন্নীত করার দাবিতে তৃতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ করছেন অডিট অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস ডিপার্টমেন্টের অডিটররা।
মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) সকালে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় হিসাব মহানিয়ন্ত্রকের কার্যালয় ঘুরে দেখা যায়, কার্যালয়ের ভেতরে খালি জায়গায় বড় শামিয়ানা টানিয়েছেন আন্দোলনকারী অডিটররা। সামিয়ানার এক প্রান্তে রয়েছে মঞ্চ। আর এর সামনে রয়েছে হাজারো চেয়ার। প্রতিটি চেয়ারে অবস্থান নিয়েছেন অডিটররা। মঞ্চ থেকে ভেসে আসা স্লোগানের সুরে সুরে তারা স্লোগান দিচ্ছেন। তাদের একটাই দাবি, অতীতে ৬১ জন অডিটরকে ১১তম গ্রেড থেকে ১০ম গ্রেডে উন্নীত করা হয়েছে। তাই তাদেরও ১০ম গ্রেডে উন্নীত করতে হবে।
আন্দোলনকারী অডিটদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একই পদে দুই ধরনের বেতন থাকা কখনো প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত হতে পারে না। এমন বিষয় কর্তৃপক্ষকেই নৈতিকভাবে এবং দায়িত্বশীল হয়ে সমাধান করা প্রয়োজন। ২০১৬ সালের ২ ফেব্রুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে দায়ের করা রিট পিটিশনের রায় সিএজি ও অধীন অফিসের পদকে ১১তম গ্রেড থেকে ১০ম গ্রেডে উন্নীত করার পক্ষে দেয়। পরে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ শুধু ৬১ জন মামলার পক্ষভুক্ত রিট পিটিশনারকে ১১তম থেকে ১০ম গ্রেডে উন্নীত করার আদেশ প্রদান করে। পরে অন্য অডিটররা ধারাবাহিক কনটেম্পট পিটিশন দায়ের করতে থাকে এবং আদালত সব মামলাতে অডিটর পদকে দশম গ্রেডে উন্নীত করার পক্ষে রায় দেন। কিন্তু অর্থ বিভাগের একটি দুষ্টু চক্রের কারণে আর কেউ ১০ম গ্রেডে উন্নীত হতে পারেননি।
তারা বলেন, গত ১২ আগস্ট অ্যাডিশনাল ডেপুটি কম্পট্রেলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল (পার্সনেল) অর্থ বিভাগের সচিবের কাছে বিষয়টি সুরাহা করার জন্য তাগিদ দিয়ে একটি চিঠি দেন। পরের দিন ১৩ আগস্ট অর্থ বিভাগের প্রশাসন ও সমন্বয়ে অনু বিভাগের প্রশাসন-২ অধিশাখা আইন ও বিচার বিভাগের সচিবের কাছে দশম গ্রেডে উন্নীত করা যাবে কি না সে বিষয়ে মতামত প্রদানের জন্য এক চিঠিতে অনুরোধ জানান। এরপর গত ২০ আগস্ট আইন ও বিচার বিভাগের বিচার শাখা-৫ থেকে অর্থ সচিবের কাছে মতামতসহ একটি চিঠি পাঠিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলেন। ওই মতামতে সিএজি কার্যালয় ও এর অধীন দপ্তরগুলোর অন্য অডিটর পদের বেতন গ্রেড ১১তম থেকে ১০তম উন্নত করা যেতে পারে বলে মতামত প্রদান করা হয়। পরে ২৫ আগস্ট অর্থ বিভাগের প্রশাসন ও সমন্বয় অনুবিভাগ থেকে ব্যয় ব্যবস্থাপনা অনুবিভাগের কাছে দেওয়া একটি চিঠিতে বলা হয়, কনটেম্প পিটিশনে অন্তর্ভুক্ত অডিটরসহ অডিটর পদকে গ্রেডে-১১ থেকে ১০-এ উন্নীতকরণের প্রস্তাবটির বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে পাঠানো হলো। সর্বশেষ গত ৮ সেপ্টেম্বর কম্পট্রেলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেলের কার্যালয় থেকে অর্থ বিভাগের সচিবের কাছে সিএজি কার্যালয় ও এর অধীন দপ্তরগুলোর অডিটর পদের বেতন গ্রেড ১১ থেকে ১০-এ উন্নীত করার জন্য বাস্তবায়ন আদেশ জারি করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পুনরায় বিশেষভাবে অনুরোধ করে। কিন্তু এত দিন হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো নির্দেশনা জারি হয়নি।
তারা হুঁশিয়ারি করে বলেন, আমাদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে ১০ম গ্রেড (উন্নীতকরণ) বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কর্তৃপক্ষকে শান্তিপ্রিয়ভাবে আহ্বান করা হলেও তা উপেক্ষা করা হচ্ছে। ফলে এ নিয়ে অডিট অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস বিভাগের অডিটরদের মধ্যে চরম হতাশা, ক্ষোভ ও অসন্তোষের বিরাজ করছে। ১০ম গ্রেড বাস্তবায়নের জন্য দেশব্যাপী ঢাকাসহ সব বিভাগ, জেলা, উপজেলা পর্যায়ে কর্মরত সব অডিটর, সুপার এবং নিরীক্ষা ও হিসাবরক্ষণ অফিসাররা গত ৮ আগস্ট থেকে সেগুনবাগিচার হিসাব ভবন চত্বরে অনির্দিষ্টকালের জন্য গণঅবস্থান কর্মসূচি পালন করছে। অধিকার আদায় না হওয়া পর্যন্ত ঘোষিত কর্মসূচি চলমান থাকবে।
এমএইচএন/এমএমএইচ