শরীফকে দুদকে ফেরাতে একাট্টা সহকর্মীরা

শরীফকে দুদকে ফেরাতে একাট্টা সহকর্মীরা

চাকরিতে পুনর্বহালের আবেদন করেছেন দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) চাকরিচ্যুত উপসহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিন।

চাকরিতে পুনর্বহালের আবেদন করেছেন দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) চাকরিচ্যুত উপসহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিন।

আওয়ামী সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ আমলা ও নেতাকর্মীদের রোষানল শিকার হয়ে চাকরি হারিয়েছিলেন এমন দাবি করে বুধবার (৭ আগস্ট) দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমিন বরাবর লিখিত আবেদন করেন।

দুদকের প্রধান কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে আবেদন জমা দেন তিনি। এ সময় দুদকে বিভিন্ন পদের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন। তারাও দুদক সচিবের কাছে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করার দাবি জানিয়েছেন বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে দুদকের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী ঢাকা পোস্টকে বলেন, বৈষম্যমূলক আন্দোলনে ছাত্র-ছাত্রীরা দেখিয়ে দিয়েছে কীভাবে অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে হয়। আমরা মনে করি শরীফকে চাকুরিচ্যুত হওয়াটা অন্যায় ছিল। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তাই আমরা আমাদের সাবেক সহকর্মীর পাশে দাঁড়িয়েছি। আমরা চাই সে ন্যায় বিচার পাক। আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে সরাসরি অপসারণ করা অনৈতিক বলে মনে করছি। আমরা আইনের ওই ধারা সংস্কারসহ শরীফের চাকরি ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছি।

২০২২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি দুদক চেয়ারম্যান মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহর সই করা এক প্রজ্ঞাপনে মো. শরীফ উদ্দিনকে অপসারণ করা হয়। ওই প্রজ্ঞাপনে দুর্নীতি দমন কমিশন (কর্মচারী) চাকরি বিধিমালা, ২০০৮-এর বিধি ৫৪ (২)-এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে তাকে অপসারণ করার কথা বলা হয়। পরের দিন কমিশনের প্রধান কার্যালয়সহ ২১ জেলায় দুদকের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা ওই বিধি বাতিল ও অপসারণের আদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে মানববন্ধন করেছিল। এরই ধারাবাহিকতায় দুদক সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন (ডুসা) প্রতিষ্ঠিত হয়।

এ বিষয়ে মো. শরীফ উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আওয়ামী সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ আমলা, নেতা কর্মীদের রোষানল ও অন্যায়ের শিকার আমি। দুদকে আমার বিরুদ্ধে কোনো আর্থিক দুর্নীতি, নারীঘটিত কেলেঙ্কারি কিংবা মাদকের সঙ্গে বিন্দুমাত্র সমস্যা ছিল না। কোর্ট থেকে যাতে ন্যায় বিচার না পাই সেজন্য ওই অভিযুক্তরা মহামান্য হাইকোর্টে দুদকের পিপি অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খানকে ব্যবহার করছেন। তিনিও তাদের কর্পোরেট স্বার্থ বাস্তবায়ন করছেন। 

তিনি বলেন, চাকরি হারিয়ে ভাইয়ের কনফেকশনারি দোকানে জীবিকা নির্বাহ করলেও নিজের পকেটের টাকা খরচ করে বিভিন্ন মামলায় বিভিন্ন জেলায় গিয়ে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে কোর্টে সাক্ষ্য প্রদান করেছি। একজন নবীন কর্মকর্তা হিসেবে প্রায় ৫০ এর অধিক মামলা ও ২০টির বেশি চার্জশিট দাখিল করেছি। কর্মকালীন ও এর পরেও অভিযুক্তরা কর্তৃক শারীরিক আক্রমণের শিকার হলেও অর্পিত দায়িত্ব পালনে পিছপা হইনি। 

লিখিত আবেদন তিনি বলেন, শরীফ উদ্দিন উপসহকারী পরিচালক হিসেবে ২০১৪ সালের ১২ অক্টোবর থেকে ২০২২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৭ বছর ৪ মাস দুদকে ন্যায় নিষ্ঠা ও কর্তব্যপরায়ন কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। কর্মকালীন দেশের জন গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর অনেক বিষয় যেমন কক্সবাজার এলএ শাখার ৩.৫ লাখ কোটি টাকার দুর্নীতিতে প্রায় ৬০০ পাতার ১৫৫ জনকে চার্জশিটভুক্ত করে আসামির সুপারিশ করেছিলাম। ওই তদন্তে কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পৌর মেয়র মুজিবুর রহমান, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সিরাজুম মোস্তফা, মহেশখালীর সাবেক এমপি আশেক উল্যাহ রফিকসহ ক্ষমতাসীন দলের অনেক ঊর্ধ্বতন নেতা কর্মীদের এবং কক্সবাজারের জেলা প্রশাসকদের (যারা আওয়ামী আস্থাভাজন) জড়িত হওয়ার প্রমাণাদি সাহসিকতার সহিত প্রতিবেদনে তুলে এনেছি। তদন্ত বাধাগ্রস্ত করতে ওই এলাকার অন্যতম কুশীলব হেলাল উদ্দিন আহমদ, সাবেক সিনিয়র সচিব ও ২০১৮ সালের মধ্য রাতের নির্বাচনের নাটের গুরু কর্তৃক কমিশনকে বাধ্য করেই আমাকে চাকরি থেকে অপসারণ করা হয়েছিল।

আবেদনে বলা হয়, রোহিঙ্গা এনআইডি ও পাসপোর্ট সিরিজের ২০টি মামলায় আওয়ামী লীগের জন প্রতিনিধি, পুলিশ ও নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের আইনের আওতায় আনায় তাদের সংঘবদ্ধ চক্রের নিকট হয়রানির শিকার হচ্ছি। আরো রয়েছে, কেজিডিসিএল এর সাবেক এমডি আইয়ুব খান চৌধুরীদের বিরুদ্ধে নিয়োগ দুর্নীতি, পদোন্নতি, গ্যাস সংযোগ পুন:সংযোগে বিভিন্ন মামলায় রিপোর্ট করায় নিজ বাসায় এসে হুমকির শিকার হয়ে জিডি করলেও তার কোনো প্রতিকার পাইনি। 

গ্যাস সংযোগ দুর্নীতিতে সাবেক প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসির ছেলে মুজিবুর রহমান, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান বিষয়ক সম্পাদককে আইনের আওতায় আনায় তার মালিকানাধীন মিডিয়া ও বিভিন্ন মাধ্যমে হুমকির সম্মুখীন হয়েছি। চট্টগ্রাম বিএমএ এর সাধারণ সম্পাদক ও স্বাচিপের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. ফয়সাল ইকবাল চৌধুরীর বিরুদ্ধে ১৮২ পাতার ৫টি মামলার রুজুর সুপারিশ করায় ব্যাপক হুমকির সম্মুখীন হয়েছি। মিথ্যা তথ্যের ওপর ভিত্তি করে কূটকৌশলের আশ্রয়ে কোনো কারণ দর্শানো ছাড়া আমাকে অমানবিকভাবে চাকরিচ্যুত করা হয়। 

আরেকটি বিষয় হলো স্ব-ঘোষিত আওয়ামী লীগের আস্থাভাজন ও বেনিফিশিয়ারি দুদকের উপপরিচালক মাহবুবুল আলম, যে কিনা বরগুনার আমতলী উপজেলার সাবেক বিতর্কিত এমপি ধীরেন্দ্রনাথ শম্ভুর মাধ্যমে অনেক সম্পদের মালিকানা থেকে শুরু করে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মিথ্যা ও মনগড়া প্রতিবেদন দাখিল করেছিলেন।

চিঠিতে বলা হয়, আমার বিষয়টি দেশ বিদেশের সব মিডিয়া ও গণমাধ্যমে আলোচিত হওয়ায় একবার গুমের শিকার হতে গিয়ে বেঁচে যাই। সার্বিক বিবেচনায়, আমার কর্মকাণ্ডকে বিবেচনায় এনে দুদকে পদোন্নতিসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা প্রদানসহ পুন:নিয়োগের জন্য অত্র আবেদন পেশ করা হলো। এ অবস্থায় উপযুক্ত বিষয়াদি বিবেচনায় আমাকে চাকরিতে পুনর্বহাল করে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ভূমিকা রাখার সুযোগ দানের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা প্রদানের জন্য প্রার্থনা করা হলো।

আরএম/এসএম

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *