সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ঘোষণা দিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন যশোরের অন্যতম সমন্বয়কের পদ ছাড়লেন দুই শিক্ষার্থী। সোমবার (১৯ আগস্ট) মাসুম বিল্লাহ ও জেসিনা মুর্শীদ নামে দুই শিক্ষার্থী তাদের ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে সমন্বয়ক পদ নিয়ে আক্ষেপ প্রকাশ করেন। নিজেদেরকে সমন্বয়ক পদ থেকে সরিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশে থাকা ও সমন্বয়ক পদ ব্যবহার করে কেউ কুকর্ম করলে তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার ঘোষণা দেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ঘোষণা দিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন যশোরের অন্যতম সমন্বয়কের পদ ছাড়লেন দুই শিক্ষার্থী। সোমবার (১৯ আগস্ট) মাসুম বিল্লাহ ও জেসিনা মুর্শীদ নামে দুই শিক্ষার্থী তাদের ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে সমন্বয়ক পদ নিয়ে আক্ষেপ প্রকাশ করেন। নিজেদেরকে সমন্বয়ক পদ থেকে সরিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশে থাকা ও সমন্বয়ক পদ ব্যবহার করে কেউ কুকর্ম করলে তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার ঘোষণা দেন।
এর আগে, গেল বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) মাসুম বিল্লাহ ও জেসিনা মুর্শীদসহ কয়েকজন শিক্ষার্থী যশোর প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে অন্য এক সমন্বয়ক রাশেদ খানের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় কর্মসূচি অমান্য করাসহ যশোরের বিভিন্ন স্থানে সমন্বয়ক পরিচয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, জমি দখলসহ নানা অভিযোগ তুলে গণমাধ্যমকর্মীদের দৃষ্টি আকর্ষণ এবং যশোরবাসীকে সতর্ক করেন।
এ বিষয়ে পরের দিনই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক রাশেদ খান তার ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্টে কোনো যুক্তিসংগত কথা না লিখে একটি হাতে অঙ্কিত বিকৃত ছবির মাধ্যমে নীরব প্রতিবাদ করেন। সেই ছবির ব্যানারে তিনি লিখেছিলেন ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, যশোর জেলা (উচ্চ মার্গীয় সমন্বয়কবৃন্দ)’ এবং একটি উচ্চ মার্গীয় সংবাদ সম্মেলন। হাতে অঙ্কন করা ওই ছবিতে দেখা গেছে তিনজন গাধা সাদৃশ্য কিছু সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দিচ্ছেন। রীতিমতো সেই ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে নেটিজেনদের বিভিন্ন ধরনের সমালোচনামূলক বক্তব্য দিতে দেখা গেছে। এ ছাড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন যশোর জেলা নামক একটি ফেসবুক গ্রুপে অঙ্কিত ওই ছবিসহ সংবাদ সম্মেলন করা ওই দুইজন শিক্ষার্থীকে নিয়ে নানা অপমানজনক ও কটূক্তিমূলক লেখালেখি করে অন্যান্য শিক্ষার্থীরা।
একটি সূত্রে জানা গেছে, যশোরে সমন্বয়ক রাশেদ খানের অনুসারীরাই রাশেদ খানের আইডি থেকে বিকৃতভাবে অঙ্কন করা ওই ছবি নিয়ে তাদের ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিসহ বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপে পোস্ট করেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে যশোরের অন্যতম দুই সমন্বয়ক সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজের প্রাক্তন ছাত্র মাসুম বিল্লাহ তার ব্যবহৃত ফেসবুক আইডিতে লিখেছেন, ‘আমি মাসুম বিল্লাহ সাধারণ ছাত্র হিসেবে সব সময় ছাত্রদের পক্ষে। সমন্বয়ক খেলা থেকে নিজের নাম প্রত্যাহার করে নিচ্ছি। আমি সাধারণ ছাত্র হিসেবে সবসময় ছাত্রদের পাশে ছিলাম, আছি ও থাকব। দেশ সংস্কারে বা সমাজের দুর্নীতিমুক্ত করতে সাধারণ ছাত্র হয়েই পাশে দাঁড়াবো ইনশাল্লাহ। সমন্বয়ক নাম ব্যবহার করে কেউ অন্যায় সুবিধা বা কুকর্ম করলে তার বিরুদ্ধেও আমি প্রতিবাদ করব। সবাইকে ধন্যবাদ।’
অন্য এক সমন্বয়ক যশোর সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী জেসিনা মুর্শীদ তার ব্যবহৃত আইডিতে লিখেছেন, ‘আমি জেসিনা মুর্শীদ সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে সব সময় ছাত্রদের পক্ষে ছিলাম। সমন্বয়ক খেলা থেকে নিজের নাম প্রত্যাহার করে নিচ্ছি। আমি সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে সব সময় ছাত্রদের পাশে ছিলাম, আছি ও থাকব। দেশ সংস্কারে বা সমাজের দুর্নীতিমুক্ত করতে সাধারণ ছাত্র হয়েই অন্য ছাত্রদের পাশে দাঁড়াবো ইনশাল্লাহ। সমন্বয়ক নাম ব্যবহার করে কেউ অন্যায় সুবিধা বা কুকর্মে লিপ্ত হলে তার অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমি সোচ্চার থাকবো। সবাইকে ধন্যবাদ।’
পদত্যাগের ব্যাপারে যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজের প্রাক্তন ছাত্র ও পদত্যাগ করা সাবেক সমন্বয়ক মাসুম বিল্লাহ বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে সমন্বয়ক পরিচয়ে বিভিন্ন চাঁদাবাজিসহ জমি দখল এবং বিভিন্ন অপকর্মের সঙ্গে যুক্ত থাকায় আমরা গত বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে এ ব্যাপারে গণমাধ্যমকর্মীদের মাধ্যমে যশোরবাসীকে সতর্ক করি এবং ১৫ আগস্ট কেন্দ্রীয় কর্মসূচি কেন পালন করেনি এ বিষয়ে আমরা স্বঘোষিত প্রধান সমন্বয়ক রাশেদ খানের নিকট জানতে চাই। কিন্তু তিনি কোনো উত্তর না দিয়ে এবং আমাদের সংবাদ সম্মেলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করে ফেসবুকে আমাদের কুরুচিপূর্ণ ছবি অঙ্কন করেন এবং তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয় তিনিসহ তার অনুসারীরা। সে কারণে সাধারণ মানুষের মাঝে সমন্বয়ক নামে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের আন্দোলনের মূল লক্ষ ছিল বৈষম্য দূর করা। আমি মনে করি—সাধারণ ছাত্র হিসেবেই আমি এ দায়িত্ব পালন করতে পারব। সাধারণ শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে ও মানুষের মাঝে ছাত্র আন্দোলনের পজিটিভ ম্যাসেজ দিতে আমি সমন্বয়ক পরিচয় থেকে নিজেদের নাম প্রত্যাহার করেছি।’
পদত্যাগ করা আরেক সমন্বয়ক জেসিনা মুর্শীদ বলেন, ‘গত ১৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কর্মসূচি ছিল। কিন্তু স্বঘোষিত প্রধান সমন্বয়ক তা আমাদের পালন করতে দেননি। বিভিন্ন হামলা ও প্রতিবন্ধকতার ভয় দেখিয়ে সেদিন শিক্ষার্থীদের ঘর থেকে বের হতে দেননি তিনি। এ বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ তুলে এবং সমন্বয়ক পরিচয়ে চাঁদাবাজির ব্যাপারে সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে আমরা সংবাদ সম্মেলন করি। কিন্তু পরের দিন বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় আমাদের সংবাদ সম্মেলনের খবর প্রকাশিত হলে রাশেদ খান আমাদের সংবাদ সম্মেলনের ছবি অনুকরণ করে বিকৃত ছবি অঙ্কন করে তার ফেসবুক আইডিতে পোস্ট করে এবং কুরুচিপূর্ণ অপমানজনক কথা লেখেন। এ ছাড়াও তার কিছু অনুসারীরা সেই বিকৃত ছবি নিজেদের ফেসবুক আইডিতে পোস্ট করেন, যাতে আমরা সংবাদ সম্মেলনকারীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানাভাবে অপমানিত এবং হেনস্তার শিকার হই। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছবি বিকৃত করে ছড়িয়ে দেওয়ায় আমাদের মানহানি হয়েছে। এ সকল অপমান সহ্য করতে না পেরে আমি সমন্বয়ক পদ থেকে পদত্যাগ করেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা দুজন পদ থেকে অব্যাহতি নিয়েছি। এর পরেও যদি আমাদেরকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ ধরনের বিকৃত ও কুরুচিপূর্ণ লেখালেখি হয় বা আমাদের মানহানি কেউ করে আমরা তাদের বিরুদ্ধে সাইবার নিরাপত্তা আইনে আইনগত ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হব।’
এসব বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক রাশেদ খানের মুঠোফোনে একাধিকবার কল এবং টেলিফোন করলে তার নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।
এ্যান্টনি দাস অপু/এএমকে