লেবাননে স্মরণকালের ভয়াবহ বিমান হামলা চালিয়ে প্রায় ৫০০ মানুষকে নিহত করার পর দেশটির জনগণকে ভিডিওবার্তা দিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। ভিডিওবার্তায় লেবানিজ লোকজনকে হিজবুল্লাহর ‘মানব বর্ম হওয়া’ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
লেবাননে স্মরণকালের ভয়াবহ বিমান হামলা চালিয়ে প্রায় ৫০০ মানুষকে নিহত করার পর দেশটির জনগণকে ভিডিওবার্তা দিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। ভিডিওবার্তায় লেবানিজ লোকজনকে হিজবুল্লাহর ‘মানব বর্ম হওয়া’ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করা সেই ভিডিওবার্তায় বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেন, “লেবাননের জনগণের জন্য আমার গুরুত্বপূর্ণ বার্তা রয়েছে; তা হলো— আমাদের যুদ্ধ হিজবুল্লার সঙ্গে, আপনাদের সঙ্গে নয়। বহু বছর ধরে হিজবুল্লাহ আপনাদেরকে মানব বর্ম হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। তারা আপনাদের লিভিং রুমে রকেট এবং গ্যারেজে ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন রাখে, এবং শেষ পর্যন্ত এগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে আমাদের ভূখণ্ড, আমাদের জনগণকে লক্ষ্য করে হামলা চালানোর জন্য। হিজবুল্লার হামলা থেকে আমাদের জনগণকে রক্ষার জন্য এসব অস্ত্র আমাদের নিষ্ক্রিয় করতেই হবে।”
সোমবার স্থানীয় সময় সকালের পর পর লেবানের দক্ষিণাঞ্চলীয় কয়েকটি শহর ও গ্রামে ব্যাপক আকারে বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী। বিবিসির একজন প্রতিনিধি জানিয়েছেন, লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে ইসরায়েলি বিমান থেকে শত শত স্থাপনায় হামলা চালানো হয়েছে। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সোমবার লেবাননের তিন শতাধিক স্থাপনায় হামলা করা হয়েছে।
লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলীয় সীমান্তের ওপারেই ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চল। দেশটির সঙ্গে ইসরায়েলের চলমান উত্তেজনায় এখন পর্যন্ত সোমবারের হামলাই সবচেয়ে তীব্র বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আইডিএফের এক কর্মকর্তা বিবিসিকে জানিয়েছেন, হামলার আগে লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলের স্থানীয় বেসামরিক বাসিন্দাদের মোবাইল ফোনে সতর্কবার্তা দিয়েছিল আইডিএফ। সেই সতর্কবার্তায় তাদেরকে নিরাপদ স্থানে সরে যেতে বলা হয়েছিল।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আইডিএফের এক কর্মকর্তা এএফপিকে জানিয়েছেন, সোমবারের এই অভিযানের নাম দেওয়া হয়েছে অপারেশন নর্দার্ন অ্যারো এবং লেবাননের সঙ্গে দীর্ঘ-মেয়াদী সংঘাতের জন্য ইসরয়েল প্রস্তুত।
প্রসঙ্গত, বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ সশস্ত্র ইসলামি রাজনৈতিক গোষ্ঠী হিজবুল্লার প্রধান ঘাঁটি লেবানন। দেশটির সরকারে এ গোষ্ঠীর কোনো প্রতিনিধি নেই, তবে ক্ষমতার প্রকৃত নিয়ন্ত্রক তারাই। হিজবুল্লা ইরানের মদদপুষ্ট।
১৯৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় হিজবুল্লাহ। প্রতিষ্ঠান পর থেকেই ইসরায়েলের সঙ্গে দ্বন্দ্ব-সংঘাত লেগে আছে গোষ্ঠীটির। তবে এর উল্লম্ফণ ঘটেছে গত বছর ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর থেকে। ওই হামলার পর হামাসের প্রতি সংহতি জানিয়ে ইসরায়েরের উত্তরাঞ্চলে রকেট-ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া শুরু করে হিজবুল্লাহ। জবাবে ইসরায়েলও সমান তালে হামলা অব্যাহত রাখে।
গত সপ্তাহে লেবাননের সশস্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর সদস্যদের ব্যবহার করা হাজার হাজার পেজার ও ওয়াকি-টকিতে বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণের এই ঘটনায় লেবাননে ৪০ জনের বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে; যাদের মধ্যে হিজবুল্লাহর অন্তত ১৬ সদস্য রয়েছেন। এই বিস্ফোরণের জন্য ইসরায়েলকে ব্যাপকভাবে দায়ী করছে হিজবুল্লাহ।
সশস্ত্র গোষ্ঠীটির যোগাযোগের যন্ত্রে বিস্ফোরণের ঘটনার পর থেকে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে উত্তেজনা ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মাঝেই সোমবার লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলীয় একাধিক শহরে একযোগে বিমান হামলার ঘটনা ঘটল।
ভিডিওবার্তায় লেবাননের সাধারণ জনগণের উদ্দেশে নেতানিয়াহু বলেন, “হিজবুল্লাকে আপনার এবং আপনার স্বজনদের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে দেবেন না। তারা লেবাননকে ধ্বংস করে দিতে চায়; এমনটা হতে দেবেন না। আইডিএফ আপনাদের যেমনটা বলেছে, আমিও তা ই বলেছি— আপতত নিরাপদ কোথাও আশ্রয় নিন। সেনা অভিযান শেষ হলে নিরাপদে আপনারা নিজ নিজ বাড়িতে প্রবেশ করতে পারবেন।”
সূত্র : এএফপি
এসএমডব্লিউ