বিভিন্ন ক্যাডার থেকে সরকারের পুলে উপ-সচিব পদে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তাদের পদোন্নতি নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে। প্রশাসনের বাইরে অন্য ক্যাডার থেকে আসা অন্তত দুইশ কর্মকর্তা এমন বৈষম্যের শিকার হয়েছেন। যে কারণে যে কারণে বঞ্চিত প্রায় ২০০ উপ-সচিব মন্ত্রিপরিষদ সচিব, জনপ্রশাসন সচিব ও এপিডির কাছে দাবি জানিয়েছেন।
বিভিন্ন ক্যাডার থেকে সরকারের পুলে উপ-সচিব পদে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তাদের পদোন্নতি নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে। প্রশাসনের বাইরে অন্য ক্যাডার থেকে আসা অন্তত দুইশ কর্মকর্তা এমন বৈষম্যের শিকার হয়েছেন। যে কারণে যে কারণে বঞ্চিত প্রায় ২০০ উপ-সচিব মন্ত্রিপরিষদ সচিব, জনপ্রশাসন সচিব ও এপিডির কাছে দাবি জানিয়েছেন।
শনিবার (১০ আগস্ট) এ বিষয়ে সচিবালয়ের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তারা ঢাকা পোস্টকে বলেন, বাংলাদেশ সরকারের প্রশাসনিক কেন্দ্রবিন্দু হলো সচিবালয়। সচিবালয় অনেকগুলো মন্ত্রণালয়/বিভাগের সমন্বয়ে গঠিত। এর মধ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রধান কাজ হলো সরকারের সকল মন্ত্রণালয়/বিভাগের জন্য মেধাভিত্তিক দক্ষ জনসম্পদ তৈরি ও ব্যবস্থাপনা। কিন্তু মন্ত্রণালয়টি কার্যত ‘প্রশাসন’ নামক একটি ক্যাডারের স্বার্থ রক্ষার মন্ত্রণালয়ে পরিণত হয়েছে। ফলে সরকারের স্বার্থ মারাত্মকভাবে ক্ষুন্ন হচ্ছে।
এ বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে ইতোপূর্বে জনপ্রশাসন সিনিয়র সচিব বরাবরে আবেদন এসএসবির সকল সদস্য এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুলিপি প্রদান করা সত্ত্বেও কোনো প্রতিকার মেলেনি।
তারা বলেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এসএসবি’র সুপারিশের ভিত্তিতে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/বিভাগে সুপিরিয়র জনবল নিয়োগ ও পদায়ন করে থাকে। প্রত্যেক ক্যাডারের আলাদা আলাদা জ্যেষ্ঠতার তালিকা থাকলেও যখন উপসচিব হিসেবে পুল সৃষ্টি হয়, তখন তাদের জন্য অনুসরণীয় একমাত্র জ্যেষ্ঠতার তালিকা হল পিএসসি কর্তৃক নির্ধারিত মেধাতালিকা। কিন্তু এসএসবি সেই তালিকা অনুসরণ করে না; বরং প্রশাসন ক্যাডারকে ভিত্তি ধরে পদোন্নতি দিয়ে থাকে।
এর ফলে কেবল প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাগণই যথাসময়ে পদোন্নতি পেয়ে থাকেন। অর্থাৎ এই এসএসবি কেবল একটি ক্যাডারকে প্রোমোট করার বোর্ড হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে। বিষয়টি এতটাই ন্যাক্কারজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, প্রশাসন ক্যাডারের সঙ্গে মার্জ হওয়ার কারণে এই এসএসবি ইকোনমিক নামক একটি টেকনিক্যাল ক্যাডারকে (যারা মাত্র ৫০০ নম্বরের পরীক্ষা দিয়ে এসেছে) সরকারের পুলভুক্ত পদসমূহে রাতারাতি পদোন্নতি প্রদান করেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একীভূতকরণের আগে সরকারের পুলে আসা অন্যান্য ক্যাডার কর্মকর্তারা যাদের জ্যেষ্ঠতা হরণ করে পদোন্নতি বঞ্চিত করা হয়েছে। ২৫টি বিশেষজ্ঞ ক্যাডার হতে সম্পূর্ণ মেধা ও জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে আসা উপ-সচিবগণকে পদোন্নতি বঞ্চিত করে প্রকারান্তরে সকল মন্ত্রণালয়/বিভাগকে পেশাভিত্তিক ও দক্ষ জনবলের সেবা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। আবার তাদের বিশেষজ্ঞ জ্ঞান, মেধা, দক্ষতা ও যোগ্যতাকে একদিকে সচিবালয়েও যথাযথভাবে কাজে লাগানো হচ্ছে না, অপরদিকে স্ব -স্ব ক্যাডারও তাদের সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
আবেদনে আদালতের রায়ের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায়ে বলা হয়েছে, ‘যখনই কোনো কর্মকর্তা ২০০২ সনের বিধিমালা অনুসারে উপ-সচিব পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত হইলেন, তাহা যে কোনও ক্যাডার হইতেই হউক না কেন, তিনি তখন একজন পরিপূর্ণ উপ-সচিব। তাহার পূর্বের ক্যাডার পরিচয় তখন বিলুপ্ত হইবে। সচিবালয়ের উচ্চতর উপ-সচিব পদে তখন তিনি অধিষ্ঠান। সেই অধিষ্ঠা লইয়াই অন্য সকল উপ-সচিবের সহিত একশ্রেণিভুক্ত হইয়া সম-অধিকার লইয়া তিনি পরবর্তী উচ্চতর যুগ্মসচিব পদে বা পরবর্তীতে অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত হবার জন্য বিবেচিত হবেন।
এ অবস্থায় দ্রুত ক্যাডার নির্বিশেষে বৈষম্যহীন মেধাভিত্তিক জনপ্রশাসন গড়ার লক্ষ্যে প্রশাসন ক্যাডার ব্যতীত বিশেষজ্ঞ ২৫ ক্যাডারের বে-আইনিভাবে পদোন্নতি বঞ্চিত ১৩ থেকে ২২ তম ব্যাচের উপসচিবদের পিএসসি’র মেধাতালিকা অনুযায়ী স্ব-স্ব ব্যাচের সঙ্গে জ্যেষ্ঠতা নিশ্চিত করে যুগ্মসচিব পদে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি প্রদান করার অনুরোধ করা হয়েছে।
আরএম/এমএসএ